Opu Hasnat

আজ ২৯ নভেম্বর বুধবার ২০২৩,

বাংলা সংগীতকে একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখতে চাই: বিয়াস সরকার বিনোদনসাক্ষাৎকার

বাংলা সংগীতকে একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখতে চাই: বিয়াস সরকার

দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বিয়াস সরকার। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের পাঠকপ্রিয় ও তথ্যসমৃদ্ধ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘টাইমটাচ নিউজ’ এর মুখোমুখি হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন ফয়সাল হাবিব সানি। 

টাইমটাচ নিউজ: কেমন আছেন? 

বিয়াস সরকার: আমি ভালো আছি। আশা করি আপনিও ভালো আছেন। 

টাইমটাচ নিউজ: সংগীত জগতের সঙ্গে নিজেকে কীভাবে সম্পৃক্ত করলেন সেই গল্পটা জানতে চাই? শৈশব থেকেই কী সংগীত চর্চার প্রতি আগ্রহ কাজ করত আপনার? 

বিয়াস সরকার: আমার মা-বাবা দুজনেই সংগীত বিষয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং তাদের প্রথম আলাপ হয় ওই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই। আমার মা-বাবা দুজনেই বরাবর সংগীত চর্চা করে এসেছেন এবং সেইজন্য ছোটবেলা থেকেই আমাদের পরিবারে সংগীতের একটা পরিবেশ ছিল। আমাকে কখনোই ‘সা রে গা মা’ নতুন করে শিখতে হয়নি, শুনতে শুনতেই আমি মূলত ‘সা রে গা মা' শিখে গিয়েছিলাম। আমার বয়স যখন ৯/১০ বছর, তখন আমার মা একদিন আমাকে বলেন, তুমি যদি সংগীতশিল্পী হতে চাও, তবে তোমাকে অনেক বেশি গানের রেওয়াজ করতে হবে এবং হিন্দুস্তানি ক্লাসিকাল গান শিখতে হবে আরও। প্রথম মাকে ছাড়া আমি কলকাতার একটা গানের একাডেমি ‘ললিতকলা’ একাডেমিতে ভর্তি হই। মাকে ছাড়া গান শিখতে একাডেমিতে প্রথমবার ভর্তি হলেও মা ছিলেন আমার সংগীত জীবনের প্রথম গুরু এবং মা সবসময়-ই আমার সবথেকে ভালো ও বিশ্বস্ত একজন বন্ধু। ‘ললিতকলা’ একাডেমিতে আমি জয়ন্ত সরকারের পুত্র সীমান্ত সরকারের কাছে গান শিখতে থাকি এবং ওই প্রথমবারই গানের প্রতি আমার অনেক বেশি ভালোবাসা জন্ম নেয়। এভাবেই সংগীত জগতের সঙ্গে আমি নিজেকে জড়িয়ে ফেলি। 

টাইমটাচ নিউজ: আপনার গাওয়া ‘হৃদ মাঝারে’, ‘আশমানী পালকে’, ‘তুই ছাড়া কে আপন’, ‘তুমি না এলে’, ‘রঞ্জনা’, ‘জলপরীর গান’, ‘বলে দে’, ‘আজ অনেকদিন পর’ প্রভৃতি সবকটি গানই তো দুই বাংলায় দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এই যে সংগীতশিল্পী হিসেবে ওপার বাংলাতেও অর্থাৎ বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা পেলেন এবং দর্শকশ্রোতাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন এবং হচ্ছেন, এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন? 

বিয়াস সরকার: সর্বোপরি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যিঁনি সংগীতের মতো বৃহৎ পরিসরের কোনো মাধ্যমে আমাকে প্রতিভা দিয়েছেন। অন্যদিকে, অবশ্যই আমি আমার দর্শকশ্রোতাদের কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ যারা আমার গানকে ভালোবেসেছেন, আমার কণ্ঠকে ভালোবেসেছেন এবং আমার কাজকে ভালোবেসে প্রতিনিয়তই আমাকে উৎসাহিত করে গেছেন এবং যাচ্ছেন। আমি সংগীত চর্চা আমার নিজের জন্যই করি আর কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই করি এবং করে এসেছি। তাই দূর থেকেও যখন এপার বাংলা ছাড়াও বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা পেতে থাকি, তখন অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে। এককথায়, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা বা ভালোবাসা জানানোর কোনো ভাষা আমার জানা নেই; তেমনি তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতাবোধেরও কোনো শেষ নেই। 

টাইমটাচ নিউজ: সম্প্রতি আপনার কোন গান মুক্তি পেয়েছে বা কোন গান মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে? আপনার ব্যস্ততা সম্পর্কে যদি জানাতেন? 

বিয়াস সরকার: সম্প্রতি আমার দুটি গান মুক্তি পেয়েছে। একটি হচ্ছে ‘Writorshi Bhattacharya’ অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মন বাউরা’ এবং অন্যটি হচ্ছে ‘Jhonti Chakraborty Official’ ইউটিউব চ্যানেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাগ করো না রাজপুত্র’। ‘রাগ করো না রাজপুত্র’ ইনস্টাগ্রাম ট্রেন্ডিংয়ে আছে এখন। ‘মন বাউরা’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছি আমি ও ঋতর্ষি ভট্টাচার্য এবং গানটির কথা লিখেছেন, সুর করেছেন ও মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন ঋতর্ষি ভট্টাচার্য নিজেই। অপরপক্ষে, ‘রাগ করো না রাজপুত্র’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছি আমি এবং গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন ঝন্টি চক্রবর্তী। গানটির মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন দেবদীপ বণিক। এছাড়াও, এ বছর দুর্গাপূজায় আমার বেশ কিছু ডুয়েট গান এবং পরবর্তীতে সিঙ্গেল গানও আসতে চলেছে। ‘আমি কান পেতে রই' শিরোনামে একটা রবীন্দ্রসংগীতও সামনে বছর (২০২৪ সাল) মুক্তি পাবে আমার, যেইটা নিয়ে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত ও আশাবাদী। ‘Alter Origin’ থেকে মুক্তি পাবে রবীন্দ্রসংগীত। এদিকে, আমার নিজের কিছু কম্পোজিশনেও গান গাইব আমি এবং আমার দাদা সিদ্ধার্থ সরকারের কিছু কম্পোজিশনে গান করব দ্রুতই; যেগুলোর মিউজিক প্রোডাকশনের কাজ চলছে বর্তমানে এবং মিউজিক প্রোডাকশের কাজ করছেন কৃষ্ দত্ত। আমাদের কাজগুলো আমার ইউটিউব চ্যানেল ‘Biyas Unofficial’ থেকে মুক্তি পাবে। 

টাইমটাচ নিউজ: কখনো যদি কণ্ঠশিল্পী না হতেন, তবে জীবনে কী হতে চাইতেন? 

বিয়াস সরকার: কখনো যদি কণ্ঠশিল্পী না হতাম, তবে জীবনে ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চাইতাম (হাসতে হাসতে প্রশ্নটার উত্তর দিলেন)। আমি ছবি আঁকতেও ভীষণ ভালোবাসি এবং ছবি আঁকা আমার খুবই পছন্দের একটা কাজ বলতে পারেন। তাই জীবনে যদি কণ্ঠশিল্পী না হতাম, তাহলে ফ্যাশন ডিজাইনার অথবা অন্য কিছু হতাম হয়তোবা। কিন্তু সংগীত বাদে এখন আর অন্য কিছু হবার কোনো সম্ভাবনা নেই আমার (আবারও হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন)। 

টাইমটাচ নিউজ: সংগীতে আপনার আদর্শের কথা যদি বলি, তাহলে সংগীত জীবনে আপনার আদর্শ কাকে ভাবেন? 

বিয়াস সরকার: আমার মা সংগীত জীবনে আমার প্রথম গুরু। আর সংগীতে আদর্শের কথা যদি বলি, তাহলে লতা মঙ্গেশকর এবং ওস্তাদ রশিদ খানের পাগল ভক্ত আমি ছেলেবেলা থেকেই। 

টাইমটাচ নিউজ: বাংলাদেশে আপনার পছন্দের শিল্পী রয়েছেন কী? আর বাংলাদেশে যদি কাজ করতে চান, তাহলে কোন শিল্পীর সঙ্গে গানে কণ্ঠ শেয়ার করতে চাইবেন? 

বিয়াস সরকার: অবশ্যই। বাংলাদেশে আমার পছন্দের অনেক প্রিয় শিল্পী রয়েছেন৷ বাংলাদেশে তাসরিফ খান, পারশা, অর্ণব দাদার গান আমার খুবই ভালো লাগে এবং তাদের কারোর সঙ্গে আমার কথা-ও হয়। তাদের সকলের সঙ্গেই কাজ করতে চাই আমি আর অবশ্য অর্ণব দাদার সঙ্গে সুযোগ পেলে তো কাজ করবই। 

টাইমটাচ নিউজ: আপনার স্বপ্ন এবং আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই? 

বিয়াস সরকার: আমার স্বপ্নের কথা যদি বলি তাহলে বলব, বাংলা গান গেয়ে আমি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাই। আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলতে পারি, বাংলা সংগীতে আমার যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে চাই।

টাইমটাচ নিউজ: বাংলা সংগীতকে একদিন কোন অবস্থানে দেখতে চান আপনি? 

বিয়াস সরকার: বাংলা সংগীতকে একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখতে চাই এবং বাংলা সংগীতকে আমি একদিন এমন অবস্থানে দেখতে চাই যে, অবাঙালি বা বাংলা ভাষা বোঝেন না, তারাও যেন বাংলা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাইতে পারেন; বাংলা গানকে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসাতে পারেন। আমি বাংলা সংগীতকে বিশ্ব দরবারে আরও ভালো অবস্থানে দেখতে চাই। 

টাইমটাচ নিউজ: পরিশেষে জানতে চাই, সংগীতের বাইরে আপনার প্রিয় শখ কী এবং অবসরে কীভাবে সময় কাটাতে ভালোবাসেন? 

বিয়াস সরকার: সংগীতের বাইরে আমার প্রিয় শখ গান শোনা, ছবি আঁকা এবং সেলাই করতে খুব ভালোবাসি আমি। সেলাই করা আমার দিদু আমায় শিখিয়েছিলেন। আর পরিবারের সঙ্গে অবসরটা উপভোগ করতে দারুণ লাগে আমার। অবসরে পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে হাসি, আড্ডা, তামাশায় মেতে উঠতে ভালোবাসি আমি।