সৈয়দপুরে পুরাতন ইটের খোয়ায় রেলপথ সংস্কার, আবারও লাইনচ্যুতির আশঙ্কা নীলফামারী / 
ট্রেন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় সৈয়দপুরে মালবাহী ট্রেনের প্রায় লাইনচ্যূতির ঘটনা ঘটত। এ কারণে দীর্ঘদিন পর এখানকার লুপলাইনগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এরই মধ্যে এ সংস্কার কাজ দায়সারাভাবে করার অভিযোগ ওঠেছে। এ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় এর স্হায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বয়ং রেলওয়ে কর্মচারীররা। সংস্কার কাজ যথাযথভাবে না করায় ওই রেলপথে আবারও ট্রেন লাইনচ্যুতি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, কাজের মানের সাথে কোনো আপস করা হচ্ছে না। অভিযোগ পাওয়ার পর সংস্কার কাজ পরিদর্শণ শেষে নিম্নমানের উপকরণ অপসারণ করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের লুপ লাইনগুলো বেহাল দশায় পরিনত হয়। ফলে ওয়াগানে করে ভারত থেকে আমদানি করা পাথর ভেকুমেশিন দিয়ে পন্যবাহী ট্রাকে লোড করার কারণে লুপলাইনগুলো অকার্যকর হয়ে পরে। তার মধ্যে পাথর লোড-আনলোড করায় মালবাহী ট্রেনে প্রায় লাইনচ্যূতির ঘটনা ঘটত। এর আগে বিভিন্ন গনমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে । এক পর্যায়ে স্থানীয় রেলওয়ে দপ্তর ওই লাইন চলাচলের অনুপোযোগী ঘোষণা করে। পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লুপলাইন সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করে। দরপত্র অনুযায়ী রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে রেলওয়ের সংকেত ঘর ও দক্ষিণে দুই নং রেলক্রসিং পর্যন্ত ১হাজার ৪৪০ মিটার রেলপথ সংস্কারের জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।
দরপত্রের মাধ্যমে সংস্কার কাজটি পায় যশোরের মেসার্স ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে। আগামী জুলাই মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেলের দায়িত্বশীল দু'জন কর্মকর্তা বলেন, সিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি রেলপথের রেল লাইন উত্তোলনের পর ১ ফুট ৯ ইঞ্চি (২১ ইঞ্চি) গভীর করে বক্স আকারে নিচের অংশ (সাববেজ) তৈরি করার কথা। কিন্তু ২১ ইঞ্চির জায়গায় কোথাও কোথাও মাত্র ১০-১১ ইঞ্চি গভীরতায় সাববেজ করা হচ্ছে। তাছাড়া সাববেজ তৈরিতে খোয়া ও বালুর মিশ্রণ ৬০ অনুপাত ৪০ হওয়ার কথা থাকলেও বালুই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া ৩৮ মিলিমিটার পরিমাপের খোয়া ব্যবহারের পরিবর্তে বড় আকারের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে সাববেজ ঠিকমতো কমপ্যাক্ট না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খোয়া দেওয়া হচ্ছে। আর রেলপথের পাশের মাটির নিচে পাড়ে থাকা পুরাতন তিন নম্বর ইট তুলে তা খোয়া করে ব্যবহার করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ কর সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি মোঃ রবিনের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. সুলতান মৃধা বলেন, সংস্কার কাজটি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর কাজের মান যাচাই করার দায়িত্ব স্থানীয় রেলওয়ে কার্য(পূর্ত) বিভাগের।
সৈয়দপুর রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপসকারী প্রকৌশলী পূর্ত (কার্য) শরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই সংস্কার কাজ এলাকায় যাই। সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নিম্নমানের খোয়া অপসারণের নির্দেশ দিয়েছি। এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ নিয়ে কথা হয় সিনিয়র সহকারী উর্ধ্বতন প্রকৌশলী (ইনচার্জ) কাজী ওয়ালিউল হকের সাথে। তিনি বলেন, কাজের মানের সাথে কোনো আপস করা হবে না। কাজের মান শতভাগ বুঝে নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কারকাজ নিয়মিত পরিদর্শন করা হবে বলেও জানান তিনি।