আজ কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ১১৪তম জন্মবার্ষিকী শিল্প ও সাহিত্য / 
বাংলা কাব্যসাহিত্যে এদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনের আশা-আকাক্সক্ষার রূপকার, অসংখ্য কবিতা ও গানের স্রষ্টা আবদুল হাই মাশরেকী তিরিশের দশকের মাটি ও মানুষের কবি। বাংলাসাহিত্যে তিনি প্রথম হত্যা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতাকে প্রতিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন। তিনি লিখেছেন- ‘এই বীভৎস হানাহানি আর-/ এই মৃত্যুকে স্বীকার করিনি কভু,..।’ একারণেই তিনি সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে ভালোবাসা আর গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণীয়।
কবি আবদুল হাই মাশরেকী ১৯০৯ সালে ১ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের কাঁকনহাটি গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন জমিদারবিরোধী আন্দোলনের তেজোদ্দীপ্ত নায়ক ওসমান গণি সরকার ও মাতা গৃহিনী রহিমা খাতুন।
কবি আবদুল হাই মাশরেকী শৈশব থেকেই গান ও কবিতা রচনা করতেন। কখনো কখনো বাড়ির সামনে কাঁচামাটিয়া নদীর বুকে ডিঙি ভাসিয়ে দিতেন।
কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ‘আল্লাহ্ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই আল্লাহ...’, ‘মাঝি বাইয়া যাও রে...’, ‘আমার কাঙ্খের কলসি...’, ‘প্রাণও সখি রে বাবলা বনের ধারে ধারে বাঁশি বাজায় কে...’, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে...’ এইসব অমর গান আজও বাংলার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আজও এইসব চিরায়ত সংগীত চর্চিত হচ্ছে গণমানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আধুনিককাব্য- ‘কিছু রেখে যেতে চাই’, ‘হে আমার দেশ’; অন্যান্য কাব্য- ‘দেশ দেশ নন্দিতা’, ‘মাঠের কবিতা মাঠের গান’, ‘কাল নিরবধি’; গীতিনাট্য ও কাব্য- ‘ভাটিয়ালী’; পুঁথিকাব্য- ‘হযরত আবুবকর (রাঃ)’; খন্ডকাব্য- ‘অভিশপ্তের বাণী’; পালাগান- ‘রাখালবন্ধু’, ‘জরিনা সুন্দরী’; পল্লীগীতিকা- ‘ডাল ধরিয়া নুয়াইয়া কন্যা’; জারি- ‘দুখু মিয়ার জারী’, ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার জারী’; ছোটদের কাব্য- ‘হুতুম-ভুতুম রাত্রি’; গল্প- ‘কুলসুম’, ‘বাউল মনের নকশা’, ‘মানুষ ও লাশ’, ‘নদীভাঙে’; নাটক- ‘সাঁকো’, ‘নতুন গাঁয়ের কাহিনী’; অনুবাদ- ‘আকাশ কেন নীল’।
আজ ১ এপ্রিল ২০২৩ কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ১১৪তম জন্মবার্ষিকী। কবির জন্মদিন উপলক্ষে ‘কবি আবদুল হাই মাশরেকী পরিষদ’ এর উদ্যোগে ঈশ্বরগঞ্জে কবির মাজার জিয়ারত ও দোয়া’র আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কবি আবদুল হাই মাশরেকীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৪ মার্চ দিনব্যাপী ‘মাশরেকী বন্দনা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে। এতে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, দুখু মিয়ার জারী, গান, নৃত্য, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক, পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ জাকির হোসেন, অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. হাফিজা জেসমিন, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট মেডিসিন ডা. এবিএম খোরশেদ আলম ভূঞা (জুয়েল), ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ভ‚মি অফিসের সহকারী কমিশনার মাহবুবুর রহমান। আলোচনা করেন- কবি অধ্যাপক সোহরাব পাশা, কবি ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক আসাদ উল্লাহ, কবি স্বাধীন চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আলম মাহবুব। সঞ্চালনা করেন আজিজুল হাই সোহাগ। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ‘কবি আবদুল হাই মাশরেকী পরিষদ’। এ ছাড়া, ৭ এপ্রিল রাজধানীর নয়া পল্টনে মাসিক জনপ্রশাসন কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
মহান এই কবি ১৯৮৮ সালের ৪ ডিসেম্বর ইশ্বরগঞ্জের নিজবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।