Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

সৈয়দপুরে বেড়েছে ইটের উৎপাদন খরচ, খেসারত দিচ্ছেন ক্রেতারা নীলফামারী

সৈয়দপুরে বেড়েছে ইটের উৎপাদন খরচ, খেসারত দিচ্ছেন ক্রেতারা

কয়লা আমদানি সংকট ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ইট উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এতে বিপাকে পড়েছেন ইটভাটা মালিকরা। এলসি (ঋণপত্র) জটিলতায় আমদানি না হওয়ায় বেড়েছে কয়লার দাম। এদিকে উৎপাদন খরচ বাড়ায় এর খেসারত দিচ্ছেন ক্রেতারা। ইটের প্রকারভেদ অনুযায়ী দাম বেড়েছে প্রতি হাজারে ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত। 

জানা গেছে, নীলফামারী জেলায় ভাটা আছে প্রায় ৬৪টি। এর মধ্যে সৈয়দপুরে রয়েছে বেশিরভাগ ইটভাটা। যার সবকটির ইট উৎপাদন নির্ভর করে কয়লার ওপর। ইট পোড়ানোর মৌসুম অনেক আগে শুরু হলেও কয়লা সংকটে এখনো বেশিরভাগ ভাটায় জ্বলেনি আগুন। একদিকে কয়লার দাম বেড়েছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যে দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেও এবার ধরাশায়ী হতে হয়েছে অনেক ভাটা মালিককে।

ইটভাটা মালিক হারুন অর রশিদ, মোস্তফা ফিরোজ জানান, জ্বালানি সংকট চলছে। আড়াইগুণ উচ্চমূল্য দিয়েও কয়লা মিলছে না। প্রতিবছর ভারত থেকে কম দরে কয়লা এনে ইট পোড়ানো হতো। চলতি মৌসুমে সবকিছু কঠিন হয়ে গেছে। ভারত পর্যাপ্ত কয়লা সরবরাহ করছে না এবার। এতে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায় আড়াইগুণ বেশি। গতবছর একটন কয়লা কিনতে হতো ৯ হাজার টাকায়। কিন্তু চলতি মৌসুমে ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত কয়লা আমদানিতে সংকটের সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে প্রতি টন কয়লার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা। এর কারণ ভারত থেকে কয়লা আমদানি প্রক্রিয়া ও কয়লা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পার্বতীপুর কয়লাখনি থেকে ইটভাটা প্রতি ১০০ টন করে কয়লা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। প্রতিটি ভাটায় ৫০০ থেকে ৭০০ টন কয়লা দরকার প্রতি মৌসুমে।

গত মৌসুমে উন্নতমানের ইট প্রতি হাজার বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ থেকে ৯ হাজার টাকায়। বর্তমান মৌসুমে একই পরিমাণ ইট বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকায়। একই পরিমাণ দ্বিতীয় সারির ইটের দাম ৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টাকায়। নিম্নমানের ইটের (তিন নম্বর) দামও বেড়ে গেছে। এই ইট গতবার ৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার দাম বেড়ে একই পরিমাণ ইটের দাম হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

বাড়ি নির্মাণের অর্ধেক কাজ শেষ করে দাম বৃদ্ধির কারণে বাকি অংশ শেষ করতে পারছেন না অনেক বাড়ির মালিক। তারা বলেন, কয়েকমাস আগে বাড়ির কাজের জন্য ইট কিনেছিলাম তখন দাম অনেক কম ছিল। এখন ইট কিনতে গিয়ে শুনি দাম বেশি।  এদিকে সিমেন্টের দাম বেশি। সব কিছুর দাম বাড়লে আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়? এখন বাকি কাজ শেষ করতে পারব কিনা জানি না।

নীলফামারী ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান সেলিম বলেন, আসলে এ অবস্থায় আমরা বিপাকে পড়েছি। মাটিকাটা শ্রমিকসহ সব ধরনের খরচ বাড়ছে। কয়লা আগে ৯ হাজার থেকে ২২ হাজার পর্যন্ত কিনেছি এখন ৩১ হাজার টাকা। এখন সমস্যা এলসি না সিন্ডিকেট এটা আমরা বলতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, অচিরেই সরকার যদি কয়লার উচ্চমূল্য ও সংকটের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এ বছর ইট উৎপাদন ব্যাহত হবে। এমন চলতে থাকলে সিংহভাগ ভাটা বন্ধ হয়েও যেতে পারে।

এই বিভাগের অন্যান্য খবর