Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

ছেলের সাফল্যে দুঃখ কষ্ট ভুলে গেছি নীলফামারী

ছেলের সাফল্যে দুঃখ কষ্ট ভুলে গেছি

ওর ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট ছিল, সব ভুলে গেছি।’কথাগুলো বলেন আবুল বাশারের জননী বিউটি বেগম।

বাবা করেন সামান্য দর্জির কাজ। আর মা দেখেন সাংসারিক কাজকর্ম। এমনি দরিদ্র বাবা-মায়ের সন্তান আবুল বাশার (১৮)। অত্যন্ত মেধাবী সে। বাশারদের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। তবে সব ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে বাশার। সে ধারাবাহিকতায় এবার সুযোগ হয়েছে বুয়েটে পড়ার।

বাশার এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় এক হাজার ৭০২ তম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ষষ্ঠতম স্থান অর্জন করে। আর  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যলয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমান তালিকায় ছিলেন তিনি। তবে আগে থেকেই স্বপ্ন ছিল বুয়েটেই পড়াশোনা করার। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বাশার বুয়েটে নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবরে তাঁর পরিবার, এলাকা ও নিজ শিক্ষাপতিষ্ঠনে খুশির বন্যা বইছে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ওয়াপদা গেট খলিফাপাড়া এলাকার হতদরিদ্র দর্জি তসলিম উদ্দীন  ও বিউটি বেগম দম্পতির  ছেলে আবুল বাশার । তাঁরা এক ভাই ও এক বোন। ছোট বোন তাজমিম আক্তার ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে। আবুল বাশার স্থানীয় সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসসি ও এসএসসিতেও ছিল জিপিএ-৫ এর কৃতিত্ব।

বাবা-মায়ের মত বাশারও খুব পরিশ্রমী। তাই পড়ালেখায় বেশি মনযোগী হওয়ায় বাবা-মা তাঁকে কোনো কাজ করতে দেয়নি। প্রতিদিন পরিশ্রম করে সংসারের চাহিদা পূরণ করতেন বাশারের  বাবা-মা।

কথা হয় আবুল বাশারের সাথে। জীবন সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করে আবুল বাশার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতার সাথে  লড়াই করে বেড়ে ওঠেছি। মা-বাবাকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে দেখেছি। সকাল হলে বাবা চলে যান কাজে, আর মা সংসারের কাজে ব্যস্ত। অর্থাভাব ও শত কষ্টের মাঝেও নিজেকে প্রস্তুত করি। ভাবতাম একদিন বুয়েট থেকে প্রকৌশলী হিসেবে বের হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব। তখন মা-বাবার দুঃখ-কষ্ট দূর হবে। আল্লাহর মেহেরবানীতে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ওই স্বপ্নের পথে এক ধাপ এগিয়েছি। তার  সাফল্যের পেছনে শিক্ষক ও মা-বাবার অবদানই বেশি বলে মনে করেন তিনি। বাশার বলেন, ‘নানা পর্যায়ের শিক্ষকেরা আমাকে সহযোগিতা করছেন।

মেধাবী বাশারের ব্যাপারে সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান জুয়েল বলেন, শুধু পড়ালেখায় নয়, সব দিক দিয়েই খুব ভালো ছেলে সে। তার অদম্য ইচ্ছা শক্তিই তাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। বাশারের সাফল্যে আমরা শিক্ষকরা সবাই অনেক খুশি ও গর্বিত। 

ছোটবেলা থেকেই আবুল বাশার  ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বলে জানান তাঁর মা বিউটি বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে কাগজ কেটে বাড়ি বানাত। উড়োজাহাজ দেখলেই দৌড়ে ঘর থেকে বের হতো। বলত ‘বড় হয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ার হব।’ ওর ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট ছিল, সব ভুলে গেছি।’

এই বিভাগের অন্যান্য খবর