Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

পানি সঙ্কটে নষ্ট হচ্ছে সোনালী আশ

গোয়ালন্দে পাট কাটা ও জাগ দেওয়ায় ব্যস্ত কৃষক! কৃষি সংবাদরাজবাড়ী

গোয়ালন্দে পাট কাটা ও জাগ দেওয়ায় ব্যস্ত কৃষক!

পাট চাষের শুরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া, পোকার আক্রমণে পাট বৃদ্ধিতে ব্যহত, পাট কেটে জাগ দেয়ার সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া, শ্রমিক সংকটে অতিরিক্ত মজুরিসহ নানা বিধ সমস্যা পাশ কাটিয়ে সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন ভান্ডার ক্ষ্যত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাটের আবাদ হয়েছে। এখন দুশ্চিন্তা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে। বৃষ্টিপাত ও বর্ষার পানি প্রবেশ না করতে পারায় খালে বিলে ও ডোবায় জাগ দিয়ে নষ্ট হচ্ছে সোনালী আশ। 

স্থানীয়দের তথ্যমতে জানাগেছে, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী জমিতে পাটের আবাদ করেছেন চাষিরা। তবে সময় মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার পাট কাটা, খাল-বিল, পুকুর ও ডোবা-নালায় এখন জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর পর প্রক্রিয়াজাত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কোথাও কোথাও নারী-পুরষ ও শিশুরাও এ কাজে সহযোগিতা করছেন।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে উপজেলায়  ৪ হাজার ২ শ ৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হলেও ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৬ শ ৬০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। পলিমাটি, জৈব সারের ব্যবহার ও বন্যার পানি প্রবেশ না করায় সময় মতো পাট কাটায় এবার এ উপজেলায় পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা পাট কাটা, খাল-বিল, পুকুর ও ডোবা-নালায় পাট জাগ দেওয়া, পাট ধোয়া, পাট শুকানোর পর প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করার উপযোগী করে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাট কেটে জাগ দেওয়ার সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় দূর-দুরান্তে নিয়ে পাট জাগ দেওয়া ও শ্রমিক সংকটে অতিরিক্ত মজুরিতে পাটের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা খুশি।

উজানচর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নবুওছিমদ্দিন পাড়া এলাকার পাট চাষি আরশাদ মোল্লা বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে ৭ থেকে ৮ মণ।  সার, বীজ, নিরানী ও পাট কাটা, জাগ দেয়ার জন্য কামলা, জাগ দেয়ার পরিবহন খরচ বাবদ ৩ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৮ থেকে ৩৯ হাজার টাকা। বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। মৌসুম শেষ পর্যন্ত দাম এভাবে থাকলে চাষিরা প্রচুর লাভবান হবে এবং পাট চাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে।

পাট শুকানোর কাজে ব্যস্ত আরেক চাষি, দলিল উদ্দিন বলেন, পাট চাষের শুরুতে অতি বৃষ্টি, পোকার আক্রমণ, পাট কাটার সময়ে অনাবৃষ্টি, টানা খরায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা এবং শ্রমিক সংকটে শ্রমমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এবার পাটে লাভের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু পাটের বাজার ভাল থাকায় এবার লাভের মুখ দেখতে পেরেছি।

পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত আরেক চাষি মোঃ শাহজাহান তালুকদার বলেন, শ্রমিক সঙ্কট ও পানির কারণে পাট কাটা, পাট জাগ দেওয়া নিয়ে ব্যাপক চিন্তায় পড়ে আছি। অতিরিক্ত মজুরি ও পানির কারণে পাটের পরিবহন খরচ বেশী হেেয়ছে। পাটের রংও নষ্ট হয়েছে। পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলে আমরা আরো লাভবান হইতাম।  

পাট ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান মোল্লা বলেন, এবার এ অঞ্চলে ব্যাপক পাটের আবাদ হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার পাটের দামও ভাল। ফলে কৃষকরা দামও ভাল পাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ খোকনুজ্জামান বলেন, পলিমাটি, জৈব সারের ব্যবহার ও ভালো ফলন হওয়ায় উপজেলায় পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। নানা প্রাকৃতিক প্রতিকুল পরিবেশেও পাটের ফলন ভালো হয়েছে পাশাপাশি দামও ভালো। পানি সঙ্কটের কারণে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে সমস্যা একটু আছে। তার পরও এখন খাল-বিল, পুকুর ও ডোবা-নালায় পানি জমায় পাট জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। পাট চাষে কৃষকদের নানান ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।