Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

খাগড়াছড়িতে বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহামানব বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহানির্বাণ লাভসহ ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত শুভ বুদ্ধ (বৈশাখী) পূর্ণিমা উপলক্ষে জেলাতে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৫ মে) সকালে শতবর্ষে ঐতিহ্যবাহী য়ংড বৌদ্ধ বিহারে ৯টি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে শোভাযাত্রাটি উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা সম্পন্ন) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা এমপি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু সাঈদ, পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টি রুপনা চাকমা, বৈশাখী পূর্ণিমা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক কল্যাণ মিত্র বড়ুয়।

বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে য়ংড বৌদ্ধ বিহারে সকালে শত শত বৌদ্ধ ধর্মালম্বী চাকমা, মারমা, রাখাইন ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন য়ংড বিহারে বিশ্বশান্তি কামনায় প্রদীপ পূজা প্রজ্জ্বলন করে। বিহারে  প্রদীপ প্রজ্জ্বলন শেষে মঙ্গল শোভাযাত্রটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মহাজন পাড়া জনবল বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে শেষ হয়। পরে ধর্মদেশনা, সমবেত শীল গ্রহন করা হয়।

বুদ্ধ ধর্ম সংঘ’ ও বিশ্ব শান্তি ধর্ম বানী” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি সাসনা রাক্ষিতা ভিক্ষু সংঘ, য়ংড বৌদ্ধ বিহার ও বাংলাদেশ বুডিষ্ট কল্যাণ পরিষদের আয়োজনে তথাগত ভগবান বুদ্ধের ত্রি-বার্ষিক বিজড়িত শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে মহা সংঘদান ও ধর্মালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে শনিবার (১৪ মে) সকাল থেকে জেলার সদর উপজেলার শত বর্ষে ঐতিহ্যবাহী য়ংড বৌদ্ধ বিহার থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। বাজার-চেংগী স্কোয়ার ঘুড়ে শোভাযাত্রাটি আবার জেলা শহরের অন্যতম বিহার য়ংড বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

পরে বিকেলের দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। ৯টি বড় মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে মাধ্যমে য়ংড বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণ থেকে মঙ্গল শুরু হয়ে জেলা শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার বিহার প্রাঙ্গণে শেষ হয়। পরে ধর্মদেশনা শুরু করা হয়।

এ উপলক্ষে য়ংড বিহারের আয়োজক কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত মহা পবিত্রতম উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। বৈশাখী পূর্ণিমা দিনটি বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত মহা বোধি বৃক্ষের পানি ছিটিয়ে উৎসর্গ করা হয়। এই পবিত্র তিথিতে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বোধি বা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। এই দিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণ স্নান করেন, শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন।

ভক্তগণ সন্ধ্যায় প্রতিটি মন্দিরে বহু প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের আরাধনায় নিমগ্ন হন। এছাড়া বুদ্ধগণ এই দিনে বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা করে থাকেন।

দীঘিনালা উপজেলা : দীঘিনালায় গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও পরিনির্বাণ ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমা-২৫৬৬ উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি কামনায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৫ মে) সকালে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ, দীঘিনালা উপজেলা শাখা কমিটির উদ্যোগে লারমা স্কোয়ার থেকে এ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সে প্রদক্ষিণ করে লারমা স্কোয়ারের গিয়ে শেষ হয়। এর আগে শোভাযাত্রাটি উদ্ধোধন করেন, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সীমা দেওয়ান। এসময় বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি চন্দ্রকীর্তি মহাস্থবির সাধারণ সম্পাদক লোকমিত্র ভিক্ষু, দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রজ্ঞান জ্যোতি চাকমা এবং কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নলেজ চাকমা জ্ঞান। শোভাযাত্রায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নারী পুরুষ অংশ নেন। এসময় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করা হয়।

মানিকছড়ি উপজেলা : বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় বৌদ্ধ ধর্মালম্ভী আয়োজনে বর্ণিল রেলী ও মঙ্গল শোভা যাত্রা রের করা হয়েছে। এসময় ধর্মরক্ষিত বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ  ভদন্ত নারিন্দা মহাস্থবির সভাপতিত্বে শোভাযাত্রায় অতিথি হিসেবে উপস্থত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, মারমা উন্নয়ন সংসদে সভাপতি মংশেপ্রুু চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চলাপ্রুু মারমা নিলয়, যুব রেড ক্রিসেন্ট মানিকছড়ি ইউনিট খাগড়াছড়ি ব্র্যাঞ্চের দল নেতা থোয়াইঅংপ্রুু মারমা, উলাসাই মারমা, অংথোয়াই মারমা রাজু, মিতালী চৌধুরী প্রমূখ।

মঙ্গল শোভাযাত্রাটি মানিকছড়ি রানী নিহার দেবী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে চট্টপ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়ক প্রদক্ষিণ করে গচ্ছা বিল ধর্ম ঘর এলাকা গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া উপজেলা কেন্দ্রীয় রাজ জেত বন বৌদ্ধ বিহার, বড়বিল সারি পুত্র বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে সকাল থেকে বোধি বৃক্ষে চন্দন সুগন্ধি যুক্ত জল দান, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা  উত্তোলন শীল গ্রহণ সহস্রফুল, সহস্রফল, সাবাইকপূর্ণ ছইং, মিষ্টান্য ছইংসহ নানাবিধ দানীয় উপকরণ দিয়ে বুদ্ধ পূঁজা করা হয়।

গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও নির্বাণ লাভত্বই ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি বুদ্ধ পূর্ণিমা নামে পরিচিত।