Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

ফরিদপুরে বিপুল ঘোষের শোডাউনে তৃণমূলের আর্তনাদ! ফরিদপুর

ফরিদপুরে বিপুল ঘোষের শোডাউনে তৃণমূলের আর্তনাদ!

দীর্ঘ ৬ বছর পর আগামী ১২ মে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রার্থী সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল ও সভা করেছে। গত রবিবার বিকেলে সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে স্মরণ কালের সবচেয়ে বড় মিছিল ও গণসমাবেশ করেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ বিপুল ঘোষ। অপরদিকে সোমবার বিকেলে সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে মোটর শোভাযাত্রা ও সভা করেছে ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক শামসুল হক ভোলা মাষ্টার। 

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিপুল ঘোষের শোডাউন ও গণসমাবেশে বেশিরভাগই তৃণমূলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মিরা অংশ নেয়। এসময় অনেকে বলেন, আমরা ১৩ বছর পর আজ এই মিছিলে যোগ দিয়েছি। এতদিন যে হাইব্রীড আওয়ামীলীগে চেপে বসে ছিলো তা থেকে মুক্ত মনে করায় আজ তৃনমূলের পরীক্ষিত নেতা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের বীর বিপুল ঘোষের মিছিলে মনের টানে চলে এসেছি। 

এসময় কানাইপুর ইউনিয়নের মানিক নামে একজন জানান, আমাদের রাজনীতি হারিয়ে গিয়েছিলো। এখন শক্তি পাচ্ছি যে বিপুল দা জেগেছে আবার। তিনি বলেন ফরিদপুরে যখন মোশারফ ছিলেন কে যায়নি তার বাসায়। তবে বিপুল দা সহ দু-একজন কে কখনোই দেখা যায়নি। আমি মনে করি আমাদের নেতা মোশারফের পাওয়ারের কাছে কখনো মাথা নিচু করে নাই। তবে এখন যারা কথা বলে তাদের কে আমরা চিনি।  

কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের আশরাফ বলেন, তৃনমূল এর আত্মনাদ দেখেন আজ, শুধু মনের টানে চলে এসেছি। এখানে কোন অর্থ, লোভ বা ভয় নেই আমাদের। নেতা ডাক দিয়েছেন চলে এসেছি। একই বলে নেতার ডাক। তৃনমূল এর ফরিদপুরের পরীক্ষিত সৈনিক তিনি। তিনি বলেন, মোশারফ জামানায় সবাই গিয়ে মিশে ছেন শুধু বিপুল দা কখনোই মাথা নোয়াই নি। 

ঈশানগোপালপুর ইউনিয়নের বিল্লাল বলেন, সব নেতার সাথে মোশারফ সাহেবের ছবি রয়েছে দেখান তো বিপুল ঘোষের সাথে কোন ছবি। আরে ভাই তৃণমূল কি চাই সেটা দেখেন। আপনাদের অনেকের সাথে মোশারফের সন্ত্রাসী বাহিনী যোগ দিয়েছে সেটা আমরা এখন দেখছি। তবে কোন সময় তৃণমূল বিক্রি হয়নি। তারা আওয়ামীলীগের ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে আসে। এরাই প্রকৃত আওয়ামীলীগ।  তিনি বলেন অনেকে টাকা দিয়ে বিভন্ন অনলাইনে মিথ্যা প্রপাগন্ডা ছড়ায় আমাদের মিছিলে মোশারফপন্থীরা যোগ দিয়েছে। আরে দেখে যান আপনারা গ্রামের খেটে খাওয়া আওয়ামীলীগ দল করা মানুষ গুলো ঘর ছেড়ে বের হয়েছে। আপনারা ভয় পেয়ে এগুলো লেখান। আসলে একবার পিছনে তাকান আপনাদের অবস্থা কি? তাদের অর্থ ও লোক ছাড়া চলা আপনাদের সম্ভব নয়।   

ছাত্রলীগের জেলার সাবেক সহসভাপতি দেবাশিষ নয়ন বলেন, এখন অনেকেই দেখি লেখে আফসানা মঞ্জিলের মুরিদ, ওমুক তমুক, আরে ভাই আফসানা মঞ্জিলে মুরিদ ছিলো না কে, আমার এই দুই চোখ দিয়ে শুধু মাত্র বিপুল ঘোষ, মনিরুল হাসান মিঠু সহ দুই-একজন বাদে সবাইকে যাওয়া দেখছি আফসানা মঞ্জিলে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত হাসিবুল হাসান লাবলু কাকার বউ ঝর্না হাসান না যাওয়ার কারনে লাভলু সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত পুড়ানোর চেষ্টা হয়ছে। এখন যারা মুরিদ ঠুরিদ লেখেন তারাও ঐ সময় তার বাড়ি পুড়ানোর চেষ্টার পক্ষেই ছিলেন, আর না পক্ষে থাকলেও তখন তো কেউ এর প্রতিবাদ করেন নাই। কারন তখন ফরিদপুরের প্রধানমন্ত্রী ছিলো মোশাররফ মিয়া। আমার দেখা একমাত্র বিপুল ঘোষ এবং প্রবীর শিকদার ছাড়া কেউ মোশাররফ মিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিলো না। দলের সাধারন সম্পাদক মাসুদ কাকা অবহেলিত ছিলো সে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ফুল নিয়ে গিয়েছিলো তখন তাকে অপমান করছে। এই সব কিছু চোখে দেখছি, কে সুবিধা ভোগী কে ত্যাগী সব জানি সব দেখছি, শুধু এতোটুকু বলি আওয়ামীলীগ হয়ে আওয়ামীলীগের মাংস খেয়েন না। এখানে যারা প্রার্থী সবাই যোগ্য এবং সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দাবী রাখে। তাই আমরা একজনকে ভালোবাসতেই পাড়ি কিন্তু অন্য কাও কে ছোট করে না। মোশাররফ মিয়ার ক্ষমতাই থাকা অবস্থায় তার আশে পাশে লোকজন এভাবে মানুষকে ছোট করতো আজ মোশাররফ মিয়া কোথায়? তাই সবার একটা কথা মনে রাখা উচিত আজ তুমি একজন কে অসম্মান করবা একদিন না একদিন তুমিও অসম্মান হবে।

উল্লেখ্য, রবিবার বেলা সাড়ে ৩ টায় শহরের গোয়ালচামট এলাকার শহরের পিটিআই-এর সামনে থেকে বিপুল ঘোষের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি মুজিব সড়ক হয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। পরে প্রেসক্লাব চত্বরে গন সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা।  

এসময় কোতয়ালী আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম সেলিম, পৌর আওয়ামীলীগের আহবায়ক মনিরুল হাসান মিঠু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফউজ্জামান মুরাদ, কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট লক্ষন, যুবলীগ নেতা তাওফিক হোসেন পুচ্চি, নাদিম প্রমুখ।  

সভায় বিপুল ঘোষ তার বক্তব্যে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবেন, তিনিই আমাদের নেতা হবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি ৫৩ বছর রাজনীতি করি কখনো মহড়া দেই নাই। আমার লোক, শেখ হাসিনার লোক। তিনি বলেন, ১৭ বার জেল খেটেছি। আমার নিজের ব্যক্তিগত কারনে নয়। আমি জেল খেটেছি দলের জন্য। আমি নেত্রীর কাছে আশা করবো এবার তিনি পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করবে।