Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

প্রাণি নিয়ে বিপাকে এখানকার মানুষ

ঝিমিয়ে পড়ছে মোরেলগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিস বাগেরহাট

ঝিমিয়ে পড়ছে মোরেলগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিস

ঝিমিয়ে পড়েছে মোরেলগঞ্জ প্রাণি সম্পদ অফিস প্রাণি নিয়ে বিপাকে মোরেলগঞ্জ  ১৬ ইউনিয়নের মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে খুঁড়িয়ে খড়িয়ে।

এই অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই উপজেলার প্রায় ৮ লক্ষাধিক  হাঁস-মুরগী ও গবাদিপশু। প্রয়োজনীয় উপকরণ, ওষুধ ও জনবল সংকটের কারণে দিন দিন স্থবির হয়ে পড়ছে সরকারি এই দপ্তরের কার্যক্রম । ক্ষতিগ্রস্ত  হচ্ছে খামারি সহ সাধারণ পালনকারীরা।  এখানে ১১টি পদের মধ্যে ৯টি পদই রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

৩ বছর ভেটেরিনারি  সার্জন থেকে পদন্নোতি পেয়ে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে আরও ২ বছর মোট ৫ বছর থেকে গত ২ মাস হল এখান চলে গেছেন জিএম আব্দুল কুদ্দুস। ফলে আগে থেকেই সংকটে থাকা এ দপ্তরটি আরও সংকটে পতিত হয়েছে। ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভেটিরিনারী সার্জন ছাড়াই চলছে এই সরকারি হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম।

এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ভবন আছে, এলাকায় পর্যাপ্ত গবাদিপশু আছে, নেই শুধু সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। তাই জনগণ ছুটছে চিকিৎসার জন্য হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে। ইতোমধ্যে  হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসার  কবলে পড়ে অনেকের গবাধি পশু মারা যাওয়া  সহ ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনা।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৬ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় গরু  রয়েছে  ৯০ হাজার ৬১৫ টি, মহিষ ২ হাজার ৫২৫ টি, ছাগল ১৪ হাজার ৭৭৫ টি, ভেড়া ২ হাজার ১৫০ টি , ২ লাখ হাঁস, ৫ লাখ ১০ হাজার  মুরগি  ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য গৃহপালিত কুকুর ও বিড়াল।  সরকার যখন দেশকে  দারিদ্র্য মুক্ত করতে বিভিন্ন উপায়ে যেমন, ছাগল পালন, হাঁস-মুরগির খামার, গবাদি পশু পালনে মানুষদের আগ্রহী করছেন-প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে সরকারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উর্ব্ধতন কর্মকর্তাদের অসচেতনা ও অবহেলায় যেমন আগ্রহ হারাতে বসেছে গবাদি পশু-পাখি পালনকারীরা, তেমনি নষ্ট হচ্ছে প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটির সরঞ্জামাদিও ।

প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে উপজেলার এই প্রাণি সম্পদ হাসপাতালটির কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির ১১টি পদের মধ্যে ৯টি পদই দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য।  মাত্র ২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি দিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম। বর্তমানে উপজেলা উপসহকারী  প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আলতাফ হোসেন  ও ভেটেরিনারী কম্পাউন্ডার  মোঃ মনিরুল  ইসলাম এ ২ জন দিয়ে সরকারি এই হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে। আর অন্যান্য ৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে  খোদ উপজেলা  প্রাণি সম্পদ  কর্মকর্তাই নেই। নেই ভেটেরিনারী সার্জন, নেই ২ জন ভিএফএ।

দেখা যায়, একমাত্র কর্মরত ব্যক্তি ভিএফএ মোঃ আলতাফ হোসেন। তিনি এ প্রতিবেদককে  বলেন দীর্ঘদিন ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসুচির বরাদ্ধকৃত একজনকে সহযোগি হিসেবে নিয়ে কাজ চালাতেন তাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন তিনিও নেই।

কখনো গৃহস্তের নিয়ে আসা গবাদি পশু ইনজেকশন পুশসহ ওষুধ প্রদান করছেন, আবার কখনো ফ্রিজে রাখা ভ্যাকসিন সরবরাহ করছেন। সেবা প্রত্যাশীদের পরামর্শ প্রদান কিংবা উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনাময় ফোন রিসিভ, খাতায় রেজিষ্ট্রি মেনটেইনসহ সব দৌড়ঝাপ সারছেন একা।

এ ব্যাপারে মো. আলতাফ হোসেন  বলেন, ভাই সরকারের সেবামুলক প্রতিষ্ঠানে চাকরি। এটা আমার দায়িত্ব্ আমাকে তা পালন করতেই হবে। লোকবল না থাকায় একটু বেশি পরিশ্রম করছি। তবে এটা দ্রুত লাঘবে আপনাদের মাধ্যমে  আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন বলে আমরা আশাবাদি।

সোমবার রোগাক্রান্ত গাভীর সেবা নিতে আসা উপজেলার বারইখালী  গ্রামের আব্দুর  রহমান জানান, ৩ দিন থেকে আমার গাভী বাত আক্রান্ত। প্রতিদিনই এখানে আসি। এসে শুনি দায়িত্বরত ডাক্তার নাই। ভি এফ এ হিসেবে একজন যিনি আছেন তিনি কারো বাড়িতে গেছেন মুমুর্ষ কোন পশু চিকিৎসা দিতে। আমাদের এ ভোগান্তি দ্রুত সমাধান দরকার। না হলে পশু চিকিৎসাসেবা ব্যাহতের পাশাপাশি এ খাতে বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুনবেন ও পশু পালনে নিরুৎসাহি হবেন।

এ ব্যাপারে মোংলা  উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোরেলগঞ্জ  প্রানী সম্পদ হাসপাতালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মোঃ অসীম আকরাম  জানান, লোকবল সংকটে চরম ভোগান্তিতে আছে মোরেলগঞ্জ  উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতাল। লোকবল দেয়া একান্ত মন্ত্রনালয়ের ব্যাপার। গবাদিপশু চিকিৎসার জন্য মাঠ পর্যায়ে এই উপজেলায় জনবল দরকার।

এতো বড় উপজেলায় বিভিন্ন পদে বিরাজমান লোকবল সমস্যা সমাধান না হলে হাসপাতালটি দিনের যে  কোন সময় তালা ঝুলিয়ে রাখার উপক্রম হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা লুৎফার রহমান এ প্রতিবেদককে  জানান, জনবল সংঙ্কট, সমস্যা সমাধানে উর্ধতন কর্তৃপক্ষে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে যাবে।