Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

বালুশ্রমিক গুলজার লিখেছেন ২৪০০ কবিতা! ঝিনাইদহ

বালুশ্রমিক গুলজার লিখেছেন ২৪০০ কবিতা!

গুলজার হোসেন গরিব। তিনি বালু শ্রমিক। শহরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক থেকে বালু নামিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালান তিনি।

কিন্তু এলাকার মানুষ তাকে চেনে ‘গরিব কবি’ বলে। সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর যেটুকু সময় পান সেই সময়ে রচনা করেন কবিতা। সুযোগ পেলে আবৃত্তিও করেন।

গুলজার হোসেন গরিব’র বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামে।  আর্থিক দৈন্যতার কারণে মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় ইতি টানতে হয় শিক্ষাজীবনের। ১০ বছর বয়স থেকেই কৃষিকাজে পিতাকে সহযোগিতা করতে শুরু করেন তিনি। বয়স কিছুটা বাড়লে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। তিনি আইসক্রিম বিক্রি, ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। এর মাঝেই সময় পেলে বই পড়তেন। বই পড়তে পড়তেই কবিতার জগতে প্রবেশ তার।

২০০১ সালে ‘আহ্বান’ নামের একটি কবিতা লিখে কবিতায় হাতেখড়ি।  প্রথম কবিতা দেখে স্বজন ও বন্ধুদের বাহবা পেয়ে বেড়ে যায় তার উৎসাহ। একে একে লেখেন ‘গভীর রাত’, ‘তোমাকে হত্যার পর’, ‘গরিবের বিদ্বেষ’, ‘প্রিয় সাবির হাকা’, ‘এখানে যা নেই’, করোনা নিয়ে ‘ভাইরাস’সহ প্রায় ২ হাজার ৪০০ কবিতা। ১০টি প্রবন্ধও লিখেছেন তিনি। নিজের কণ্ঠে আবৃতিও করেন তিনি। লিখেছেন ২১০ টি গানও।

গুলজার হোসেন গরিব বলেন, আমি লেখাপড়া বেশি করতে পারিনি। পড়াশোনার প্রতি খুবই আগ্রহ ছিল। কিন্তু অভাবের কারণে বেশি করতে পারিনি। তবুও কবিতার প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ তৈরী হয়। ২০০১ সাল থেকে কবিতা লেখা শুরু করি। এখনও লেখে যাচ্ছি। ২০০৫ সাল থেকে বালু শ্রমিকের কাজ শুরু করি। আগে আড়াই’শ থেকে ৩’শ টাকা পেতাম এখন ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা পায়। নিজে বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি। তবে দুই সন্তানকে পড়াচ্ছি। মেয়ে মিতা নূর এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছেলে একরামুল কবির নবম শ্রেণিতে পড়ছে।

ঝিনাইদহের কবি ও গবেষক সুমন সিকদার বলেন, কম শিক্ষিত হলেও গুলজার হোসেন পচুর পড়াশোনা করেন। তাঁর কবিতা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। এভাবে চর্চা করলে আরও বেশি ভালো করতে পারবেন।’

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হাসান অরিন্দম বলেন, গরিব ‘অত্যন্ত সংগ্রামী একজন মানুষ তিনি। তার কবিতায় বাঙালি ও শ্রমিক শ্রেণির বঞ্চনার কথা থাকে। শুধু তাই না তিনি নিজে শ্রমিক হলেও শ্রমিক শ্রেণির মানুষের উপকারে কাজ করেন। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে সহযোগিতা নিয়ে বালু শ্রমিকদের মাঝে বিতরণও করেন। আমরা তার সফলতা কামনা করি।