Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

করোনায় শাপলা বিক্রি করে চলছে শতাধিক সংসার মুন্সিগঞ্জ

করোনায় শাপলা বিক্রি করে চলছে শতাধিক সংসার

একদিকে মহামারি করোনা সংক্রমণের হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  করোনার সার্বিক পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন নিন্ম আয়ের পরিবারগুলো। অনেকেই জীবিকার তাগিদে জীবনযুদ্ধে বিকল্প উপার্জনের মাধ্যম বেড় করে নিচ্ছেন। এর মধ্যে বিনা পূঁজিতে দিনের কয়েক ঘন্টা শাপলা কুড়িয়ে প্রায় শতাধিক পরিবারের আয়ের উৎস্য তৈরী হয়েছে।

সরেজমিনে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে এমনটাই লক্ষ্য করা গেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ালবিল এলাকার গাদিঘাট ও হাঁসাড়ার আলমপুরে। শাপলা কুড়িয়ে দৈনিক একেক জনের কামাই হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিলজুড়ে শাপলার সমাহার। বির্স্তীণ বিল থেকে ছোট ছোট কোষা নৌকা বোঝাই করে এসব শাপলা আনা হচ্ছে এলাকার রাস্তার পাশে। শাপলার আঁটি গুণে গুণে পিকআপ ভ্যানে তোলা হচ্ছে। দাম চুকিয়ে শাপলা ভর্তি ট্রাকগুলো ছুটে যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারী বাজারে।

গাদিঘাট এলাকার সুমন খান, মো. মোশারফ, নুর হোসেনসহ অনেকে বলেন, শাপলা কুড়িয়ে আয়ের পাশাপাশি বেকার দিন পার করছেন তারা। এখানে প্রায় ৫০/৬০ জন শাপলা কুড়ানোর কাজ করছেন। করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পরেন তারা। পরিস্থিতির শিকার তারা শাপলা কুড়িয়ে সংসার চালানোর পথ বেছে নিয়েছেন।

হাঁসাড়া এলাকার আলামপুরের আমির হোসেন, শাজাহান, দেলোয়ার হোসেন, বলাই রাম জানান, চলমান লকডাউনে তেমন কোন খাদ্য সহায়তা পাননি তারা। অনেকটা বাধ্য হয়েই শাপলা কুড়াতে হচ্ছে। এখানে ৩০/৪০টি পরিবারের সংসার চলছে শাপলা বিক্রি করে। উপজেলার সদরে ডাকবাংলা মার্কেটের সামনে শাপলা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর যাবত হরপাড়ায় থেকে শ্রম বিক্রির কাজ করে আসছেন। লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে পরেন। কামারখোলা বিল থেকে শাপলা কুড়িয়ে এসে প্রতিদিন ডাকবাংলা মার্কেটের সামনে বিক্রি করছেন তিনি।

শাপলার পাইকার সেলিম শেখ বলেন, সিরাজদিখান থেকে এখানে পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসেছেন শাপলা নিতে। প্রায় ১ হাজার আটি শাপলা ক্রয় করে ঢাকার যাত্রাবাড়ি যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। আলামপুর এলাকার জমাইতুল্লাহ ও চাঁন মিয়া জানায়, প্রতিদিন বিকালে এসব শাপলা নিতে আসেন এখানে। পরে রাজধানীর কাওরান বাজারের বিক্রি করেন তারা।

গাদিঘাট এলাকার ওহাব হাওলাদার বলেন, আড়িয়ালবিল এলাকায় শাপলা কুড়িয়ে কর্মহীন  অনেকের সংসার চলছে। তাদের কাছ থেকে এসব শাপলা কিনে নিচ্ছি। এতে করে উভয় পক্ষেরই অর্থ কামাই হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে ভোর ৫ থেকে দুপুর পর্যন্ত বিলে শাপলা কুড়ানো হয়। প্রায় ৬০/৭০টি শাপলা হিসেবে অনুযায়ী  ১টি আটি বাঁধা হয়। প্রতি আটি শাপলা পাইকাররা ক্রয় করেন ১২-১৫ টাকায়। দৈনিক একজন কমপক্ষে ৫০ আটি শাপলা কুড়াতে পারেন। প্রতিদিন শ্রীনগর থেকে শাপলা বোঝাই করে প্রায় ৮/১০টি পিকআপ ভ্যান ঢাকার বিভিন্ন পাইকারী বাজারে যাচ্ছে। সুস্বাদু সবজি হিসেবে শাপলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামী কার্তিক-পৌষ মাস পর্যন্ত শাপলা কুড়াবেন তারা। করোনাকালীন ক্রান্তিলগ্নে শাপলা কুড়ানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কর্মহীন শতাধিক পরিবারের সংসার চলছে।