Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

দুর্গাপুরে হারিয়ে যাওয়া তাঁত শিল্প জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখছে নেত্রকোনা

দুর্গাপুরে হারিয়ে যাওয়া তাঁত শিল্প জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখছে

তাঁতের ঠকঠক শব্দে এক সময় মুখরিত হয়ে উঠতো নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা বিরিশিরির মহিলা সমিতির তাঁত ঘরটি। আদিবাসী মহিলা সদস্যগন তাঁদের ঐতিহ্যগত পোষাক ‘‘দকমান্দা’’ তৈরিতে নিরলস ভাবে কাজ করে যেতেন। তৈরীকৃত আদিবাসী পোষাক স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি বাহির থেকে আসা পর্যটকরাও কিনে নিতেন প্রতিনিয়ত। এখানে কমবেশি সবাই আদিবাসীদের হাতে বোনা তাঁতের সঙ্গে পরিচিত। এ শিল্পকে পুরোপুরি শিল্পে রূপান্তর করার স্বপ্ন যেন আজ ভেঙ্গে যেতে বসেছে। এ শিল্পকে জাগিতে তুলতে নেত্রকোনা জেলা ও দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন নূতন করে উদ্যেগ নেয়ায় জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখছে আদিবাসী অধ্যুষিত বিরিশিরি এলাকার বহুমুখী মহিলা সমবায় সমিতির তাঁত শিল্প।

এ নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, এখানকার আদিবাসী মহিলারা অন্যান্য পেশার পাশাপাশি তাঁত শিল্পের কাজে সাচ্ছন্নবোধ করেন বেশী। কিন্ত কালের বিবর্তনে আর্থিক সংকট ও পর্যটক না আসায় হারিয়ে যেতে বসেছে তাঁদের প্রিয় তাঁত শিল্প। অত্র এলাকার আদিবাসীদের কথা ভেবে ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তা তহবিলে স্থানীয় আদিবাসী বহুমুখী মহিলা সমবায় সমিতির সংগঠনের সদস্যগন আবার শুরু করেছিরেন তাঁদের প্রিয় তাঁত শিল্পের কাজ। কিন্ত মেশিন গুলো পুরাতন হওয়ায় এবং দ্রব্য মুল্যের উর্দ্ধগতির কারনে তা আর আলোর মুখ দেখতে পারেনি বেশি দিন। এখানে ২০টি তাত মেশিন রয়েছে এবং প্রায় সব গুলোই অকেজো। পৃষ্টপোষকতা পেলে তাঁত শিল্পীরা নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন নতুন মেশিন ও সুঁতো কেনার পুজি। এ নিয়ে নারী উদ্দ্যেগতা শেফা ম্রং, রিমি ও তানিয়া বলেন, নতুন মেশিন না থাকায় কাপড় তৈরীতে বেশি খরচ পড়ে এবং অনেক সুতা নষ্ট হয়ে যায়। তৈরীকৃত নান্দনিক দ্রব্যাদী বাইরে বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের। এ শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনা সুদে ঋণ অথবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তা প্রদান করলে, তৈরীকৃত পোষাক স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাহিরেও সরবরাহ করে এ শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারবো।

এ নিয়ে রোববার বিকেলে এক ভার্চুয়াল আলোচনায়, ইউএনও মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান এর সঞ্চালনায় জেলা প্রশাসক কাজী মো. আব্দুর রহমান এর সভাপতিত্বে আদিবাসীদের এ শিল্পকে রক্ষার জন্য প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুর রশিদ। এনজিও প্রতিনিধি লুদিয়া রুমা সাংমা, ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রুহু ও সুব্রত সাংমা, বিরিশিরি বহুমুখী মহিলা সমবায় সমিতির পরিচালক বিনোদিনি রেমা, তাঁত শিল্পী অমিতা সাংমা ও চামেলি সাংমা প্রমুখ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির আর্থসামাজিক উন্নয়নে যে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে তা অনুসরনীয় ও প্রসংসনীয়। 

দুর্গাপুরের পর্যটন বিকাশ ও তাঁত শিল্পকে এক সুতায় গাঁথতে পারলে এক দিকে যেমন স্থানিয় আদিবাসী মহিলারা সাবলম্বী হতো, অন্যদিকে পর্যটন শিল্প আরো বিকশিত হতো বলে মনে করেন নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জনাব সাইফুল।

জেলা প্রশাসক কাজী মো. আব্দুর রহমান বলেন, বিলুপ্তপ্রায় তাঁত শিল্পকে আবার উজ্জিবিত করতে ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন করা হবে। এ ক্ষত্রে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।