গোয়ালন্দে কথিত স্বামীর বিষাক্ত ইনজেকশনে প্রাণ গেল মুন্নি’র রাজবাড়ী / 
বিষাক্ত ইনজেশন শরীরে প্রবেশ করিয়ে ফারজানা আক্তার মুন্নি (২৬) নামের এক যৌনকর্মীকে হত্যা করেছে কথিত স্বামী। সে ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার গোয়ালন্দ উপজেলার দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে।
রোববার বেলা ২টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুন্নির মৃত্যু হয়। এ ঘটনা ঘটিয়ে ঘাতক কথিত স্বামী রাশেদ খান মুন্নির ঘরে থাকা মূল্যবান জিনিস পত্র নিয়ে পালিয়েছে। সে পাবনা সদর থানার শনিরদিয়া ভবানীপুর গ্রামের ছলিম খানের ছেলে।
যৌনপল্লির বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফারজানা আক্তার মুন্নি দীর্ঘদিন ধরে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বসবাস করে। তার কাছে আসা-যাওয়া করত রাশেদ খান। এক পর্যায়ে রাশেদ খান মুন্নির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় রাশেদ খান মুন্নির উপার্জিত টাকা হাতিয়ে নেয়। যৌনকর্মী মুন্নিও তার সর্বস্ব দিয়ে রাশেদ খানকে বিয়ে করে অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি নিতে চায়। কিছুদিন আগে মুন্নি রাশেদ খানকে নগদ ৩ লাখ টাকা দেয়। এরপর রাশেদ খান তাকে কাবিন রেজিস্ট্রি করে বিয়েও করে। কিন্তু রাশেদ খান চায় মুন্নি যৌনপেশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করুক। মুন্নি রাশেদ খানের কাছে স্বাভাবিক জীবন চায় আর রাশেদ চায় মুন্নি ওই পেশা চালিয়ে টাকা আয় করে তার হাতে তুলে দিক। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।
মুন্নিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া একাধিক ব্যাক্তি অসুস্থ্য মুন্নির বরাত দিয়ে জানান, রোববার ভোরে রাশেদ খান তাকে বলে তোমার শরীর দুর্বল একটি ভিটামিন স্যালাইন দিলে ঠিক হয়ে যাবে। তার কথা বিশ্বাস করে মুন্নি রাজি হয়। এরপর রাশেদ খান নিজেই মুন্নির গায়ে স্যালাইন পুশ করে। কিছুক্ষনের মধ্যে মুন্নির শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এসময় রাশেদ খান তার ব্যবহার করা মোবাইল ফোনসেটসহ ঘরে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বেলা ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ নিতাই চন্দ্র জানান, প্রথমে ওই রোগীকে মারামারি করে আহত হওয়ার রোগী হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু সময় বাড়ার সাথে সাথে তার শরীরে বিষক্রিয়ার উপস্বর্গ ধরা পরে। একপর্যায়ে আমরা নিশ্চিত হই তার শরীরে বিষাক্ত ইনজেশন পুশ করা হয়েছে। ক্রমেই তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, দৌলতদিয়া যৌনপল্লির এক বাসিন্দার মৃত্যুর খবরটি আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহনের পক্রিয়া চলমান আছে।