Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

খাগড়াছড়ির উচু পাহাড়ে বেল চাষে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন কৃষি সংবাদখাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ির উচু পাহাড়ে বেল চাষে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় উচু পাহাড়ে বেল চাষে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে। জেলার পাহাড়ি পল্লীতে গাছের ডালে ডালে ঝুলছে সুবজ রঙয়ের বেল। বাড়ির আঙিনায় ও পাহাড়ের পরিত্যক্ত টিলাভূমিতে বেল চাষে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে পাহাড়ের সাধারন কৃষিজীবী মানুষ। ধান, গম ও সবজি চাষাবাদের সঙ্গে ‘ঝুঁকি’ বা ‘অনিশ্চয়তা’ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকলেও বেল চাষে লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

বেলের খোসা কাঠের মত শক্ত হওয়ায় ইংরেজিতে ‘Wood Apple’ বলা হয়। আর বাংলায় ফলটির ব্যাপক কদর দেখে ব্রিটিশরা এর নাম দিয়েছে ‘Bengal Quince’। বেল গাছ বড় ধরনের বৃক্ষ যার উচ্চতা প্রায় ১০-১৬মিটার। শীতকালে সব পাতা ঝরে যায়, আবার বসন্তের নতুন পাতা আসে। পাতা ত্রিপত্র যুক্ত, সবুজ, ডিম্বাকার; পত্রফলকের অগ্রভাগ সূঁচাল। ফুল হালকা সবুজ থেকে সাদা রঙের। বেল শুধু সুস্বাদু ফলই নয়, এর নানা ওষুধি গুণও আছে। বেলে প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম ও লৌহ আছে। পাকা ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং কাঁচা ফল কলেরা ও আমাশয়ে উপকারী। বেলের পাতা ও ছাল দিয়ে কবিরাজি ওষুধ তৈরি করা হয়ে থাকে।

খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বেশি বেল উৎপাদন হয় বিভিন্ন পাহাড়ি পল্লীতে। মাটিরাঙ্গার দুর্গম পাহাড়ি পল্লী ব্যাঙমারা বেলচাষি কৃষ্ণ কুমার ত্রিপুরার বাড়ির আঙিনাজুড়ে বেল গাছ। যেখানে ঝুলছে সবুজ আর হালকা হলুদ বেল। বর্তমানে তার বাড়ির আঙিনায় প্রায় ২০টিরও বেশি বেল গাছ রয়েছে। যা থেকে এ মৌসুমে অর্ধলাখ টাকার মতো আয়ের স্বপ্ন দেখছেন কৃষ্ণ কুমার ত্রিপুরা।

অন্যদিকে একই এলাকার হরি কুমার ত্রিপুরার ঘরের পাশেই পাহাড়ি টিলাভূমিতে রয়েছে ১০/১৫টির মতো বেল গাছ। গাছে ফল কাঁচা থাকা অবস্থাতেই বিক্রি হয়েছে ৩০হাজার টাকা। স্থানীয় এক পাইকার তার কাছ থেকে এসব বেল কিনেছেন। হরি কুমার ত্রিপুরা জানান, শুধু চারা কিনতেই যা খরচ। রোপণের পর থেকে আর কোনো খরচ নেই। তাই সামনের বছরে বেলের বাগান বড় করার চিন্তার কথাও জানান এ প্রান্তিক চাষি।

খাগড়াছড়ি, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা বাজারে প্রতি হাটবারে উঠছে বেল। শীত শেষে গরমের আগমন ঘটতে শুরু করেছে। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেলের চাহিদা। একাধিক পাইকারের হাত ধরে পাহাড়ের এসব বেল যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সমতলের বিভিন্ন জেলায়।

খাগড়াছড়ির স্থানীয় পাইকার মো: মাহবুবুর রহমান জানান, গাছ থেকেই একটি কাঁচা বেল ৭ থেকে ৮টাকায় আর পাকা বেল ১০ থেকে ১২টাকা দরে কিনতে হয়। যা ঢাকায় নিয়ে বাজারজাত করা হয় দ্বিগুনেরও বেশি দামে। তাই সস্তায় বেলের খোঁজে অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ছে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জনপদে।

ঢাকার নরসিংদী থেকে আসা বেল ব্যবসায়ী মো: আরজু মিয়া জানান, গত ৫/৭ বছর ধরে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা থেকে বেল কিনছি। স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে প্রতি বস্তা বেল (প্রতি বস্তায় ১৫০-১৭০টি বেল থাকে) ১২০০-১৪০০ টাকায় কিনতে হয়। যা নরসিংদী ও ঢাকাসহ সমতলের জেলায় ২০০০-২৪০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। নষ্ট হয় না বলে বেল পরিবহনেও কোনো ঝুঁকি থাকে না।

সাধারণত বীজের চারার উপরই নির্ভরশীল থাকায় এই ফল চাষে চাষিদের আগ্রহ খুব একটা দেখা না গেলেও বর্তমানে খাগড়াছড়ির পানছড়ির পুজগাঙ ও মাটিরাঙ্গার করল্যাছড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে স্বল্পপরিসরে বাণিজ্যিকভাবে বেলের চাষ হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে বেল চাষ করা গেলে প্রান্তিক কৃষকরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারবে জানিয়ে খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: সফর উদ্দিন বলেন, বেল শুধু আর্থিক স্বচ্ছলতা নয়, বেলের রয়েছে নানামুখী উপকারিতা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে বেল চাষ সম্প্রসারিত দিগুন হবে।