Opu Hasnat

আজ ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ২০২৪,

কালকিনিতে হাসপাতালের ঝুঁকিপুর্ন ভবনে চলছে চিকিৎসা সেবা মাদারীপুর

কালকিনিতে হাসপাতালের ঝুঁকিপুর্ন ভবনে চলছে চিকিৎসা সেবা

৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের গুরু দায়িত্ব ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। কিন্তু সংস্কারের অভাবে এই হাসপাতালের ঝুঁকিপুর্ন ভবনে চলছে চিকিৎসা সেবা প্রদান। এছাড়া বর্তমানে হাসাপাতালে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। খাবার পানির অভাবে হাসপাতালের রোগী ও রোগীর স্বজনদের নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন বাড়ি থেকে পানি এনে পান করতে হচ্ছে। এতে করে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালকিনি হাসপাতালে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। আর প্রায় তিন শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা ফেটে মাঝে মেধ্যে হঠাৎ করে ভেঙ্গে পড়ছে। অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের গায়ে পড়ে আহত হচ্ছে। ভবন অনেক পুরানো হয়ে যাওয়ায় ছাদের পলেস্তারা খসে-খসে নিচে পড়ছে। বড় আকারে পলেস্তারা ধসে পড়ে যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা। হাসপাতালের ভবনের ছাদে নতুন করে বড়-বড় ফাটল দেখা দেয়ায় অনেক রোগীরা হাসাপাতালে মৃত্যু ভয়ে ভর্তি না হয়ে তারা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছে। অপরদিকে জীবনের ঝুকি নিয়ে নিরুপায় হয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকদের। এতে করে চিকিৎসা সেবা চরম আকারে ব্যঘাত ঘটছে। হাসপাতালে ৪টি গভীর  নলকুপ থাকলে একটি রয়েছে নামে মাত্র সচল বাকি তিনটিই নলকুপ মরিচা ধরে দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতাল ঘুরে আরো দেখা গেল, একটি মোটর দিয়ে পানি উঠানো হত তাও আবার মাসের পর মাস নষ্ট হয়ে পরে থাকে। সব মিলিয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে এই হাসপাতাল। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যারা আসেন বেশিরভাগ রোগীর স্বজনদের আশপাশের কোন বাড়ি অথবা বিভিন্ন দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে খেতে হচ্ছে। তবে যাদের সামার্থ কম, তাদের জন্য এই চাপ দুঃসহ হয়ে উঠেছে। 

হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে হাসপাতালে ব্যবস্থ্য আছে চারটি টিউবওয়েলের। এর মেধ্যে তিনটি পুরোপরি বিকল। কিন্ত আরেকটির ভালো থাকলেও বেশি ব্যবহারের ফলে ঘনঘন নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে ছাদের পলেস্তারা ভেঙ্গে-ভেঙ্গে পড়ছে। খুব ঝুকিপুর্ন অবস্থায় হাসাপাতাল ভবন। রোগীরা প্রতিদিন এই কষ্টের কথা ওয়ার্ডে বলাবলি করে। কিন্তু স্যারেরা কেউ সে কথা গায়ে মাখে না। 

হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করাতে লক্ষিপুর থেকে এসেছেন দেলোয়ার মিয়া। তিনি বলেন, ছেলেকে নিয়ে দুই দিন আগে হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছি। রাতে খাবার পানি দরকার। কিন্তু হাসাপাতালের ভেতরের টিউবওয়েল ও মোটর নষ্ট থাকায় পানি সংগ্রহ করতে পারিনি। আমি গরীব মানুষ পকেটে টাকাও নাই। তাই ভোরবেলায় পাশের একটি বাড়ি থেকে জগ ভরে পানি এনে খেয়েছি। অন্যদিকে হাসাপাতালের ভবন ভেঙ্গে পড়ে মাঝে-মাঝে। সব নিয়ে আমাদের দুচিন্তায় থাকতে হয়।

পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ ইউনুস আলী বলেন, হাসপাতাল হচ্ছে আমার ওয়ার্ডের মধ্যে। আগে হাসাপালে ৪টি গভীর নলকুপ ছিল। তা নষ্ট হয়ে এখন মাত্র একটি আছে। একটি নলকুপ দিয়ে এতগুলো রোগীর পানি পিপাষা মিঠানো সম্ভব না। পানি জন্য রোগীর স্বজনদের বিভিন্ন স্থানে দৌড় ঝাপ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া পুরো হাসাপাতালের ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলবিধান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, পানি উঠানো মোটর নষ্ট ছিল, কর্তৃপক্ষকে বলে অনেক সাধনার পরে ঠিক করেছি। আর গভীর নলকুপের বিষয়ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ছে । আমরা বাধ্য হয়েই এই ঝুকিপুর্ন ভবনেই দিচ্ছি স্বাস্থ্যসেবা। ভবন সংস্কার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠিয়েছি।