Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বছরপূর্তি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ক্যাম্পাস

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বছরপূর্তি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

এহসানুল হক এহসান, জবি : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটির একবছর পূর্ণ হলো। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ১৬ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ মার্চ থেকে বন্ধের ঘোষণা দেন।

প্রথম দফায় ১৭-৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলেও পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেই ছুটি দফায় দফায় বাড়তে থাকে। ছুটি এখনও চলছে। গত বছর জুন থেকে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাত সচল হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল থাকে সরকার। তবে বন্ধের এ সময় অনলাইন, সংসদ টিভি, বেতারসহ বিভিন্ন ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ক্লাস চলমান ছিল। মাঝে সংক্রমণ কমে আসায় ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

কিন্তু ইতোমধ্যে সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ৩০ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা দেখে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিলেও নতুন করে করোনা শনাক্তের ঊর্দ্ধগতির কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করেছে।

এই নিয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারুক হোসেন বলেন, গত ১ বছর স্বাভাবিক কোন কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়নি। পুরো পৃথিবী একটি বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার  প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষার্থীদের  দক্ষ এবং উৎপাদনশীল মানবসম্পদ হিসেবে তৈরী করতে শ্রেণিকক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শ্রেণিকক্ষে প্রতিনিয়ত শিক্ষক -শিক্ষার্থী, সহপাঠীদের মাঝে পারষ্পরিক অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হয়। যেহেতু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ছিল, তাই শিক্ষার্থীরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়। তবে শ্রেণিকক্ষের মতো সবাইকে পাঠদানে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।নেটওয়ার্ক সমস্যা, অনেক শিক্ষার্থীর ডিভাইস ছিল না, পর্যাপ্ত ডেটা ক্রয়সহ নানাবিধ সমস্যার কারণে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম  পুরোপুরি সফল হয়নি। তারও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, আগে আমাদের এই ধরনের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। 

গত ১ বছরে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কিভাবে পুষিয়ে নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই অনলাইনে পাঠদান চালু করেছি যা এখনো চলমান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং প্রতিটি বিভাগের আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে প্রতিটি কোর্সের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর উপর রিভিশন ক্লাস নেওয়া হবে। এবং বন্ধের দিনগুলোতেও এক্সট্রা ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে আশা করি আমরা এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে সক্ষম হব। পৃথিবী আবার আগের মতো স্বাভাবিক হোক এমনই প্রত্যাশা করি।  

এই নিয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবরার বলেন, ‘আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা সমীচীন হবে না। বিগত ১ বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়, শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে নানাবিধ মানসিক সমস্যার। ভবিষ্যত নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী হতাশ  হয়ে পড়ছে। তাই দ্রুততম সময়ে ভ্যাক্সিনেশন নিশ্চিত করে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। নচেৎ, জাতির ভবিষ্যত কর্ণধারগণ মেধা, মনন ও যোগ্যতায় পিছিয়ে পড়বে।’ 

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোল্লা মামুন হাসান বলেন, করোনা ভাইরাস আমাদের সুস্থ্য পৃথিবীটাকে অসুস্থ্য করে দিয়েছে। একটা সমাজ ব্যবস্থার সকল খাতের মত শিক্ষা খাত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আর শিক্ষার্থীরাও। এই ক্ষতি থেকে পুনুরুদ্ধারের জন্য যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচৎ বলে মনে করি। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এখন সময়ের দাবি মাত্র।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ কামরুল হাসান বলেন, দেখুন করোনা আমাদের প্রত্যেকের জীবন থেকে পুরো ১ টা বছর কেড়ে নিয়েছে এবং এটা এমন একটা সময় যখন সবার চোখে রঙিন স্বপ্ন ছিলো নিজেকে নতুন করে গড়ার, নিজের পায়ে দাড়াবার। অনেকেরই হয়তো পরিবারে বাবা নেই, কিংবা সে বড় সন্তান আর পরিবারের আর্থিক অবস্থা সেরকম নয় তাদের জন্য টাকার অংকে ক্ষতির হিসেব করা বোকামি।

তারপরও অনেকেই এই কঠিন সময়ে পরিবারের পাশে থেকেছে, অনেকে আত্ম কর্মসংস্থান গড়েছে, নতুন কিছু শিখেছে যেগুলো তাদের বাস্তব জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং প্রতিযোগিতার মাঠে তারা অবশ্যই অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবে।

আর যদি সরকারের কথা বলি তাহলে বলতে হবে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একদমই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সরকারি সংস্থাগুলো যদি আরও দূরদর্শিতা দেখিয়ে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারতো তাহলে আজকে শিক্ষার্থীদের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনায় যে কয়টি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তারমধ্যে শিক্ষাখাতে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০২০ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক সমাপনি, জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা জেএসসি-এসএসসি গড় ফলাফলের ভিত্তিতে বিশেষ মূল্যায়ন করে ফল দেয়া হয়েছে। বাকি সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করে পরের শ্রেণিতে অটোপাস দেয়া হয়েছে।