Opu Hasnat

আজ ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ২০২৪,

পলাশ উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা স্বাস্থ্যসেবানরসিংদী

পলাশ উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার অধিকাংশ গরিব রোগীর একমাত্র চিকিৎসাসেবার স্থান পলাশ উপজেলা সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসিক ভাবে ৩১ শয্যা হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় রুপান্তিত করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবল ও অব্যবস্থাপনার কারণে ভেঙে পড়ছে এর চিকিৎসাসেবার মান। ফলে দিনে দিনে কমতে শুরু করেছে হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা। বাধ্য হয়ে যে কয়জন রোগী আসেন তারাও চিকিৎসাসেবা নিতে তাদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনার মধ্যে। দায়িত্বরত অধিকাংশ ডাক্তার প্রাইভেট মেডিকেলের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। ফলে তাদের কাজে কাজ শুধু আসা যাওয়াতেই  মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ও কয়েকজন নার্স দিয়ে চলে চিকিৎসা কার্যক্রম। 

রোববার বেলা ১২ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাজেদুল ইসলাম  রোগীদের সেবা দিচ্ছেন আর সকল রুমের দরজা খোলা থাকলেও টেবিল চেয়ারগুলো খালি পরে রয়েছে। এমনই দৃশ্য দেখে এক কর্মচারীকে ডাক্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায়, সবাই চলে গেছেন, আছেন শুধু আরএমও স্যার। এবিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন এর রুমে গিয়ে দরজা খোলা থাকলেও তাকে তার চেয়ারে পাওয়া যায়নি। পাশের রুমের এক কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার উপজেলা হাসপাতালের মিটিংয়ে আছেন। এছাড়া পুরুষ ও মহিলা হওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় বিছানা গুলো খালি পরে আছে।  নার্সদের কাছে রোগীর বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আজ (রোববার) হাসপাতালে মহিলা রোগী ৭ জন এবং পুরুষ রোগী ৯জন রয়েছে। এভাবেই চলছে উপজেলার সবচেয়ে বড় এই সরকারি হাসপাতালটি। ভুক্তভোগী কয়েকজন রোগী অভিযোগ করে বলেন, প্রয়োজনের সময় কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না, বড় বড় ডাক্তাররা প্রাইভেট মেডিক্যালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ব্যস্ত। ছোটখাটো সমস্যা হলেও জেলা হাসপাতাল বা প্রাইভেট হাসপাতালে প্রেরণ করার কথা বলেন। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ছাড়া এখান থেকে কিছুই পাচ্ছেনা রোগীরা। সব ওষুধ বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ ডাক্তার প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা নিজ বাসভবনে চেম্বার খুলে বসেছেন। 

অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের গাইনি ডাক্তার পবিণা আফরোজের বিরুদ্ধে। তিনি প্রতিনিয়ত হাসপাতালে গাইনি ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সপ্তাহে দু’একদিন করে দু’এক ঘণ্টা থাকা ছাড়া বাকি সময়ই প্রাইভেট মেডিক্যালে সময় কাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি কাজে গাফিলতি ও কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারনে তাকে মন্ত্রনালয়ের একটি পরিদর্শনে বরখাস্তকরা হয়েছিল। এছাড়াও আরো ৪ জন ডাক্তারকে কর্তব্যে অবহেলার কারনে বরখান্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের একটি দল।

এ ব্যাপারে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. পবিণা আফরোজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। জরুরি বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার আফসানা বেগমকে একাধিকবার হাসপাতালে গিয়েও পাওয়া যায়নি। মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট জানান, তিনি বাসায় আছেন। ডা. আফসানার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অনেক সময় রাতে রোগীর সংখ্যা খুব কম থাকে ফলে বাসায় থাকতে হয়। জরুরি বিভাগে কোনো রোগী আসলে ফোন করলে সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত হই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র এক ডাক্তার জানান, দিনে দিনে এই হাসপাতালের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। দীর্ঘ এক যুগেও হাসপাতালের জেনারেটরটি চালু হয়নি। ২২ বছরের পুরাতন এক্সরে মেশিন দিয়ে চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি কয়েক বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় এমপি একটি অ্যাম্বুলেন্স দিলেও এখনও এটি চালু করা হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাস সংকট। এখানে গ্যাস সংযোগ না থাকায় রোগীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গরম পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। রোগীরা অনেক সময় আশপাশের বাড়ি বা চায়ের দোকান থেকে গরম পানি সংগ্রহ করে আনেন। লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে করতে হাসপাতালের অধিকাংশ কারো ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া হাসপাতালে নাক, কান, গলা, হার্ড, বক্ষব্যাধি, হাড় ভাঙার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের ডাক্তার নেই। হাসপাতালজুড়ে একটি সিসি ক্যামেরাও নেই। এসব বিষয়ে উপজেলা মেডিক্যাল অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, সরকার থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকায় অনেক সময় ওষুধ সংকট দেখা দেয়। অভিযুক্ত গাইনি ডাক্তার পবিণা আফরোজের সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জানানো হয়েছে। হাসপাতালে শূন্য পদের ডাক্তার নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ খুব শিগগিরই শূন্যপদের ডাক্তার যোগ দেবে। এছাড়া হাসপাতালের জেনারেটর, গ্যাস ও অ্যাম্বুলেন্স সচল করার কাজ চলছে।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলায় কোন মিটিংই হয়নি। এব্যাপারে পলাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন‘র সাথে আলাপকালে তিনি জানান, এই হাসপাতালের বিষয়ে আমার কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে আমি খুব শীঘ্রই পরির্দশণ করে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করবো। এছাড়া আজ উপজেলা পরিষদে কোন সভাই হয়নি তাই ডা: সাজ্জাদ হোসেন আসার কোন প্রশ্নই আসে না। 

ডা: সাজ্জাদ হোসেন’র সাথে তার ব্যাক্তিগত মোবাইলে বার বার ফোন দিলেও তিনি মোবাইল রিসিপ করেননি।

এই বিভাগের অন্যান্য খবর