Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

কৃষি ব্যাংক মনোহরদী শাখা ব্যবস্থাপকের বিরোদ্ধে ঘুষ দাবীর অভিযোগ অর্থ-বাণিজ্যনরসিংদী

কৃষি ব্যাংক মনোহরদী শাখা ব্যবস্থাপকের বিরোদ্ধে ঘুষ দাবীর অভিযোগ

নরসিংদী জেলার মনোহরদী শাখার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সাবেক ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সেন ও বর্তমান ব্যবস্থাপক নিজামুল হকের বিরোদ্ধে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ঋণের জন্য ১০ ভাগ ঘুষ দাবীর ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক মনোহরদী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সেন ও বর্তমান ব্যবস্থাপক নিজামুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সুপারিশকে অমান্য করে দুই ব্যবস্থাপককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিয়েছে। 

জানা গেছে, মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালিয়া গ্রামের মনোহরদী এগ্রো ফার্মস’র ব্যবস্থাপনা অংশিদার শাহাদাৎ হোসেন সরকার, কৃষি ব্যাংক মনোহরদী শাখায় তার এগ্রো ফার্মের জন্য ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ঋণ প্রস্তাব পাঠান। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সেন কয়েক দফায় মনোহরদী এগ্রো ফার্ম পরিদর্শন করেছেন। পরির্দশনকালে ও পরে ব্যবস্থাপনা অংশীদার ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদানসহ সকল শর্ত পুরণ করার পরও ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সেন বিভিন্ন অজুহাতে ঋণ না দিয়ে তাকে হয়রানী করতে থাকে। এক পর্যায়ে ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সেন ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার ঋণ প্রস্তাবের বিপরীতে শতকরা ১০ ভাগ হারে মোট ১৪ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। তিনি জানান, এ ১৪ লাখ টাকা ঘুষ উর্দ্বতন কর্মকর্তাদেরকে দিতে হবে। না দিলে তিনি ঋণ দিতে পারবেন না। এ অবস্থায় এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক অংশীদার শাহাদাৎ সরকার তাকে ২ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করেন। বাকী টাকা ঋণ প্রদান করার পর দেয়ার আশ্বাস দেন। এ অবস্থায় হঠাৎ কার্তিক চন্দ্র সেন অনত্র বদলী হয়ে যান। তার স্থালাভিষিক্ত হন নিজামুল ইসলাম নামে আরেকজন ব্যবস্থাপক। শাহাদাৎ হোসেন নতুন ব্যবস্থাপক নিজামুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পূর্বের দেয়া কাগজপত্র দিয়ে তিনি ঋণ দিতে পারবেন না। তাকে নগদ ১৪ লক্ষ টাকা ঘুষ দিলে তিনি ঋণ দিবেন। শাহাদাৎ হোসেন সরকার উল্লেখিত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ১ বছর ১০ মাস হয়রানী করার পর ঘুষ ছাড়া ঋণ দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেন। 

এ অবস্থায় শাহাদাৎ হোসেন সরকার কৃষি ব্যাংকের উর্দ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ঘুষ দাবীর বিচার ও ঋণ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মো. শাহজাহান ও উপ-পরিচালক মো. ওমর ফারুক সমন্বয়ে একটি পরিদর্শন দল উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কৃষি ব্যাংক মনোহরদী শাখায় গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করেন। এতে এলাকার লোকজন প্রত্যক্ষ ভাবে ঘুষ দাবীর কথা জানিয়ে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। এলাকার লোকজন জানান, সাবেক ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সেন নজরুল ইসলাম নামক একজন কৃষকের নিকট থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ঋণ দিবে বলে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে নগদ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। একই শাখার সামসুউদ্দিন নামে অপর একজন গ্রাহককে এক লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনে দেবার কথা বলে কার্তিক চন্দ্র সেন তার নিকট থেকে নগদ ৮ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। একইভাবে একই সময় বর্তমান ব্যবস্থাপক নিজামুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৪ লাখ টাকা ঘুষ দাবীর বিরুদ্ধে শাহাদাৎ হোসেন ও তার স্বাক্ষীগন স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। মনোহরদী এগ্রো ফার্ম’র ব্যবস্থাপনা অংশীদার শাহাদাৎ হোসেন ও অন্যান্য স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য প্রমাণে ঘুষ দাবী ও ঘুষ আদায়ের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর দাখিলকৃত এক তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সেন ও বর্তমান ব্যবস্থাপক নিজামুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করেন। কিন্তু কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ সময় এই তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ ধামাচাপা দিয়ে অবশেষে শাস্তির পরিবর্তে পুরস্কৃত করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

এই বিভাগের অন্যান্য খবর