Opu Hasnat

আজ ৪ ডিসেম্বর সোমবার ২০২৩,

এপার-ওপার জুড়েছে ‘ভালোবাসার মরশুম’, বাংলা নিয়েই বাঁচেন বারিষ শিল্প ও সাহিত্য

এপার-ওপার জুড়েছে ‘ভালোবাসার মরশুম’, বাংলা নিয়েই বাঁচেন বারিষ

‘মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ/ তুমি সাজো ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ’ অথবা ‘মাঝপথে হাত ছাড়ল কজন, হয়নি আমার লোক গোনা/ থাকার যে সে এমনিই থাকে, হারায় যারা যোগ্য না’ এমন সব জনপ্রিয় পঙক্তির কবি কিংবা ‘ভালোবাসার মরশুম’, ‘জিয়া তুই ছাড়া’ প্রভৃতি সাড়া জাগানো গানের ভারতীয় গীতিকার বারিষ সম্প্রতি কথা বলেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও তথ্যসমৃদ্ধ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘টাইমটাচ নিউজ’ এর সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ফয়সাল হাবিব সানি। 

টাইমটাচ নিউজ : বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও দর্শকপ্রিয় তথ্যসমৃদ্ধ অনলাইন নিউজ পোর্টাল টাইমটাচ নিউজ এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত ও আপনার প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। কেমন আছেন? 

বারিষ : টাইমটাচ নিউজকেও ধন্যবাদ ওপার বাংলা (বাংলাদেশ) থেকে এপার বাংলার (ভারত) একজন সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার জন্য। সব মিলিয়ে ভালো আছি, কাজ নিয়ে একটু ব্যস্ত আছি হয়তো। শিল্পী মানুষের কাজেই তো আনন্দ; তাই কাজ আছে আর কাজ নিয়ে ভালোই আছি। 

টাইমটাচ নিউজ : আপনার একটা সাক্ষাৎকারে দেখেছিলাম নিজেকে কবি পরিচয় দিতে আপনি পুরোপরিভাবে অভ্যস্ত নন। কিন্তু ‘মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ/ তুমি সাজো ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ’ অথবা যদি বলি ‘মাঝপথে হাত ছাড়ল কজন, হয়নি আমার লোক গোনা/ থাকার যে সে এমনিই থাকে, হারায় যারা যোগ্য না’ এমন সব পঙক্তি যিনি লিখতে পারেন তার কাব্যপ্রতিভা নিয়ে পাঠকদের মাঝে সংশয় বা দ্বিমত থাকার কোনো অবকাশ নেই। আপনি তো অসাধারণ প্রতিভাবান একজন কবি হিসেবে অগণিত বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের সামনে প্রমাণিত। তারপরও কেন আপনার এমন নিজেকে কবি পরিচয় থেকে লুকিয়ে রাখার প্রয়াস? এই প্রয়াসকে কী তবে শুধুই আপনার বিনয় বলতে পারি? 

বারিষ : প্রকৃতপক্ষে, লুকিয়ে থাকার কিংবা নিজেকে লুকিয়ে রাখার কোনো বিষয় নেই কিন্তু। আমি সত্যিই নিজেকে কবি মনে করি না। কবিতা বলতে যা কিছুকে বোঝায়, তা আমি লিখি না আর এই বিষয়টা আমি উপলব্ধি করি। আমার কাছে কবিতার সংজ্ঞা যা, তা আমি যা লিখি তা নয়। ফলশ্রুতিতে, আমি মনে করি আমি কবিতা লিখি না। এইটা আমার বিনয় নয়। কবিতা বলতে আমি যা বুঝি, তা যদি আমি সত্যিই লিখতাম তবে আমি নিজেই গর্ব করে বলতাম ‘আমি কবি’। 

টাইমটাচ নিউজ : আপনার লেখালেখি শুরুর গল্পটা জানতে চাই? 

বারিষ : আমার লেখালেখির শুরুটা হচ্ছে স্কুল জীবন থেকে। স্কুলে ম্যাগজিন বের হত, খুব বেশি লিখতাম ম্যাগাজিনে এমনটাও নয়। দু’তিন বছরে হয়তো ম্যাগজিনে নিজের একটা লেখা প্রকাশিত হত। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে বন্ধুরা মিলে গান করত আর আমার দায়িত্ব ছিল গান লেখার। গান লেখার শুরুটা আসলে স্কুল জীবনের ওই পর্যায় থেকেই। তখন আমি প্যারোডি লিখতাম। খুব জনপ্রিয় বা ভাইরাল গানগুলোর প্যারোডি লিখতাম আমি। ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে লিখতাম এবং একসময় আমার মনে হলো, বাহ্! বিষয়টা তো বেশ মজার। আর এভাবেই আমি আবিষ্কার করলাম, আমার মধ্যে গান লেখার প্রতিভাটুকুই হয়তোবা আছে। তখনও আমি কিন্তু যা লিখতাম তা আমার কাছে কখনোই কবিতা মনে হত না৷ তাই আমি নিজেকে ‘কবি’ না, বরং ‘গীতিকবি’ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

টাইমটাচ নিউজ : আপনার লেখা আলোচিত গান ‘ভালোবাসার মরশুম’কে তো অনেকেই আপনার প্রথম লেখা গান মনে করে থাকেন। আর আপনার এই গানটি তো দুই বাংলাতেই (ভারত ও বাংলাদেশ) আলোড়ন সৃষ্টি করে দিয়েছিল। এই যে ‘ভালোবাসার মরশুম’ শিরোনামে গান লিখেই এভাবে বাজিমাত করলেন, কীভাবে সম্ভব? 

বারিষ: আসলে আমার প্রথম লেখা গান কিন্তু ‘ভালোবাসার মরশুম’ নয়। এর পূর্বে আমি যে গানগুলো লিখেছি, সেগুলো হয়তো আমার কোনো বন্ধু সুর করে, গিটার বাজিয়ে ইউটিউবে প্রকাশ করেছে। ‘ভালোবাসার মরশুম’ হচ্ছে কোনো সিনেমায় আমার লেখা প্রথম গান। এর পূর্বে আমি মেগা সিরিয়ালের জন্য গান লিখেছি, যেইটা হচ্ছে ছোট পর্দার জন্য আমার লেখা গান। তবে বিগ স্ক্রিনে অর্থাৎ সিনেমার জন্য আমার লেখা প্রথম গান ‘ভালোবাসার মরশুম’। 

টাইমটাচ নিউজ : ‘ভালোবাসার মরশুম’ দিয়ে বাজিমাত করার পর ‘জিয়া তুই ছাড়া’ প্রভৃতির মতো এমন হৃদয়স্পর্শী জনপ্রিয় গান লিখে আবারও দর্শকশ্রোতাকে মুগ্ধতার বেড়াজালে আবিষ্ট করলেন। আর আপনার লেখা সবক'টি গানই তো দুই বাংলায় ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। এই যে এত মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছেন, পাচ্ছেন, অদূর ভবিষ্যতেও হয়তো পাবেন। এই ভালোবাসার প্রতিদান কিভাবে দেবেন? 

বারিষ : দেখুন, গান লেখার সময় তো মাথায় ছিল না গান লিখে আমাকে বাজিমাত করতেই হবে। আর বাজিমাতের কথা যদি বলেন, সেক্ষেত্রেও আমার একার কৃতিত্ব কিন্তু একদমই নেই। ‘ভালোবাসার মরশুম’ গানটি আমি লিখলেও গানটিতে সুর দিয়েছিলেন সপ্তক সানাই দাস, গানটি গেয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিৎ সিং এবং গানটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেরই কৃতিত্বের কথা এখানে একবাক্যে স্বীকার করতেই হবে। কেননা আমি হয়তো গানটি লিখেছি ঠিকই, কিন্তু গানটিকে পরিপূর্ণতা দানের ক্ষেত্রে গানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবদানই অনস্বীকার্য। বিশেষত, আমাদের সম্পূর্ণ টিমওয়ার্কটা ভালো ছিল আর সেই কারণেই হয়তো গানটি এত মানুষের হৃদয় জয় করে নিতে সমর্থ হয়েছিল। ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত ‘X=Prem’ সিনেমার গান এটি। তাই সৃজিত মুখার্জী দা’র প্রতিও তো আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই, যিনি তার সিনেমায় আমাকে গান লেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তদ্রুপ, রাজা চন্দ পরিচালিত ‘বিয়ে বিভ্রাট' সিনেমার ‘জিয়া তুই ছাড়া’ গানটির ক্ষেত্রেও  আমার একার কোনো কৃতিত্ব নেই; উপরন্তু গানটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের প্রচেষ্টার জন্যই গানটি বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গানটি গেয়েছিলেন অরিজিৎ সিং, সুর করেছিলেন রণজয় ভট্টাচার্য এবং গানটিতে অভিনয় করেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, লহমা ভট্টাচার্য ও আবির চ্যাটার্জী। একটি গানে তো আরও অনেক কিছুই থাকে। যেমন গানের দৃশ্যধারণ, এডিট সহ আরও অনেক কিছু। সর্বোপরি, গানটির সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের সকলের প্রচেষ্টাতেই গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল; যা নির্দ্বিধায় স্বীকার্য। 

টাইমটাচ নিউজ: যতটুকু জানি, আপনি তো প্রেমের গান বেশি লিখে থাকেন। সেই বিবেচনায় আপনি আপাদমস্তক একজন প্রেমিক পুরুষও বটে! প্রথম প্রেমে কবে পড়েছিলেন? 

বারিষ: প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম যখন আমি একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। যদি কোনো নারীর প্রেমে পড়া হয়, তাহলে একাদশ শ্রেণিতেই আমি প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম (মৃদু হাসতে হাসতে)। আর ছোটবেলা থেকেই আমি বিভিন্ন বিষয়ের প্রেমে পড়েছি। যেমন শৈশব থেকেই গল্পের বইয়ের প্রতি প্রেম, সিনেমার প্রতি প্রেম, ভালো গানের প্রতি প্রেম। ফলে যদি কোনো বস্তুর বা বিষয়ের প্রতি প্রেম বলেন, তাহলে জগতের অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার ঘণিষ্ঠ প্রেম রয়েছে। তবে নারীর ক্ষেত্রে প্রেমে পড়েছিলাম একাদশ শ্রেণিতেই, কিন্তু তা ছিল একতরফা প্রেম। এখন একতরফা প্রেমকে প্রেম বলা যায় কি-না তা আমি জানি না। কিন্তু আমার হৃদয়ের কাছে সেইটা তো প্রেমই বটে! 

টাইমটাচ নিউজ: এবার একটা মজার প্রশ্ন করতে চাই (হাসিমুখে)। এখন কি আপনি সিঙ্গেল নাকি আদৌ কারোর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন? 

বারিষ: এই প্রশ্ন তো অনেকেই করে থাকেন আর আমি বুকে পাথর রেখেই বলে দিই, ‘আমি সিঙ্গেল’। সত্যি বলতে, প্রেম হচ্ছে না আর কী (আবারও হাসতে হাসতে)! বুঝতে পারছি, প্রেমের গানই আমার কপালে রয়েছে। হয়তো আমার প্রেমের গান শুনে অনেকে প্রেমে পড়েছেন বা পড়ছেন আর একজন শিল্পীর কাছে এইটাই বড়ো স্বার্থকতা। একদম সত্যি বলছি, বিগত অনেক বছর ধরেই আমি সিঙ্গেল; কোনো নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে নেই।

টাইমটাচ নিউজ: ভারতের জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জীর সঙ্গে আপনার সুসম্পর্কের বিষয়টা অনেকেরই জানা। সেই সম্পর্কের কথা সংক্ষেপে জানতে চাই? 

বারিষ: মজাটা হচ্ছে, সৃজিত দা’র সঙ্গে আমার প্রথম সামনাসামনি দেখা হয় মিউজিক লঞ্চের দিন, যেদিন আমাদের ‘ভালোবাসার মরশুম’ গানের ভিডিও প্রথম সামনে আসে। তার পূর্বে কিন্তু সৃজিত দা'র সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এমনটা নয়। হয়তো ফেসবুকে দু’ একবার কথা হয়েছে। এমনকি ‘ভালোবাসার মরশুম' এর ব্রিফটাও আমি পেয়েছিলাম মিউজিক কম্পোজারের কাছ থেকে। সৃজিত দা তখন তার সিনেমার প্রি-প্রোডাকশন নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলেন, এদিকে মিউজিক কম্পোজার সানাই দা’কেও খুব তাড়াতাড়ি গানটি বানাতে হত। সানাই দা’ই আমাকে তড়িঘড়ি করে রাতারাতি সুরটা পাঠিয়ে এবং ব্রিফটা দিয়ে লিখতে বলেছিলেন। আমার সাথে সৃজিত দা’র প্রথম দেখা ওই মিউজিক লঞ্চের দিন, সেদিন থেকই কথার শুরু এবং পরবর্তীতে তো টুকটাক কথা চলতেই থাকে। সৃজিত দা’র একটা বিষয় আমার খুবই ভালো লেগেছে যে, সৃজিত দা নতুনদের এগিয়ে দিতে পারেন। আমার একটা বিশেষ ঘটনার কথা এখনও মনে পড়ে, সংক্ষেপে সেই বিষয়টা শেয়ার করি তাহলে। আমি তো সৃজিত মুখার্জীর ফ্যান ছোট থেকেই। ছোটবেলায় একবার ‘হেমলক সোসাইটি (সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র)’ দেখতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল এই সিনেমার পরিচালকের সিনেমার কোনো অংশে আমার নিজের নাম আমি একবার হলেও দেখতে চাই। সেই যে ছোটবেলায় আমার মধ্যে এমন ইচ্ছে জাগ্রত হয়েছিল, সেই ইচ্ছেটায় একদিন সত্যে পরিণত হয়ে যায়। সৃজিত দা’র আরও একটা ঘটনা আমার খুবই মনে পড়ে এবং আমি খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম সেদিন, যেদিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বক্তৃতা দেবার সময় সৃজিত দা আমার কাঁধটা ধরে আমাকে পেছন থেকে ঠেলতে ঠেলতে মঞ্চের সামনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এই যে সৃজিত দা’র এগিয়ে দেবার বিষয়টা আর এই বিষয়টাকে আমি ভীষণভাবে মনেপ্রাণে ধারণ করছিলাম এবং সেদিন থেকে সৃজিত দা’র প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল। মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক তো মূলত ছোট ছোট বিষয় দিয়ে শুরু হয়। হয়তো সৃজিত দা সেদিন ভেবেছিলেন, এই ছেলেটাকে এগিয়ে দেওয়া দরকার, তাই তিনি আমাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। আর আমার পথচলাও তো বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এগিয়ে দিয়েছেন তিনি। 

টাইমটাচ নিউজ: কিছুদিন পূর্বে তো ইউটিউবে প্রকাশ পেয়েছে আপনার লেখা নতুন গান ‘মুষলধারায়’। ভারতের জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার রণজয় ভট্টাচার্যের সুরে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন শাওনি মজুমদার এবং গানটিতে অভিনয় করেছেন শাওনি মজুমদার ও শ্রীতমা বৈদ্য। আপনার লেখা এই গানটিও তো ইতিধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘মুষলধারায়’ গানটির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন? 

বারিষ: ‘মুষলধারায়' গানটি আমার খুবই কাছের একটি গান। রণজয় দা’র সুরে আমার লেখা একটি গান। রণজয় দা’র সঙ্গে আমি অনেক কাজ করেছি। আমাদের বোঝাপড়াটা অনেক ভালো। রণজয় দা কী চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারি, আবার আমি কী চাচ্ছি রণজয় দা নিজেও তা বুঝতে পারেন। রণজয় দা একদিন আমাকে বললেন, শাওনি’র জন্য একটা গান লিখতে হবে, তবে গানটির সুর কঠিন। আমি ইতিধ্যেই সুর করে ফেলেছি। তারপর তিনি সুরটি পাঠিয়ে আমায় বললেন, এটি হবে বৃষ্টির গান। একদিকে কঠিন সুর, তারপর আবার বৃষ্টির গান লিখতে হবে শুনেই আমি চাঙ্গা হয়ে উঠি। কেননা বৃষ্টিতে তো প্রেম থাকে, রোমান্টিকতা থাকে আর আমি তো প্রেমের গান লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অন্যদিকে, আমার কাছে যা কিছু কঠিন সেই কাজগুলোই সহজ মনে হয় এবং যা কিছু সহজ সেই কাজগুলো করতে গিয়ে কঠিন মনে হয়। ভাগ্যক্রমে গান লেখার সময় মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছিল এবং আমি জানালার ধারে বসে গানটি লিখে ফেলি। আবেগের বশে একটু বেশিই লিখে ফেলেছিলাম। এভাবেই ‘মুষলধারায়’ গানের জন্ম হয়।

টাইমটাচ নিউজ: বাংলাদেশেও আপনার অনেক শুভাকাঙ্খী রয়েছে এবং বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ বর্তমানে আপনার লেখার একনিষ্ঠ ভক্তও বইকি। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আপনার যদি কিছু বলার থাকে? 

বারিষ: দেখুন, বাংলার পরে হয়তো ‘দেশ’ শব্দটিকে যুক্ত করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশ আলাদা একটি দেশ তা-ও জানি। আমাদের তো পশ্চিম বাংলা আর ওপারে বাংলাদেশ। কিন্তু ‘বাংলা’ এই শব্দটি তো আমাদের অস্তিত্বকে ছুঁয়ে রাখে আর বাংলা তো আমাদের মাতৃভাষা। আর ‘বাংলার মানুষ’ শব্দ দুটি শুনলেই নিজের মধ্যে অদ্ভুত একটা তৃপ্তি বা প্রশান্তি কাজ করে। বাংলা তো আমাদের মায়ের ভাষা, তাই বাংলাদেশের মানুষকেও নিজের আত্মীয়ই মনে হয় আমার কাছে। আমি কখনোই দুই বাংলাকে আলাদা করে দেখি না। আমার অনেক পছন্দের অভিনেতা, কবি রয়েছেন বাংলাদেশে। যেমন চঞ্চল চৌধুরীকে আমি বাংলার অভিনেতা মনে করে থাকি, তদ্রুপ হেলাল হাফিজকেও আমি বাংলার কবি-ই মনে করে থাকি। আর আমার নিজেরও বাংলাদেশে যাবার ইচ্ছে রয়েছে, কখনো সুযোগ পেলে তো অবশ্যই বাংলাদেশে যাবো। আর বাংলাদেশে যাবার আমার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে যেয়ে পদ্মার ইলিশ খাব৷ ইলিশ আমার খুবই পছন্দের। সবমিলিয়ে, আমি বাংলাদেশের সঙ্গে একটা গভীর আত্মিক বন্ধন অনুভব করতে থাকি সবসময়-ই সর্বক্ষেত্রেই।

টাইমটাচ নিউজ: সবশেষে জানতে চাই, আসন্ন ভবিষ্যতে বারিষ নিজেকে কোথায় দেখতে চায় বা মানুষের জন্য কী করে যেতে চায়? 

বারিষ: আসন্ন ভবিষ্যতে বারিষ নিজেকে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় দেখতে চায়। প্রতিটা মানুষের মনে যেন বারিষ থাকতে পারে এইটাই সে চায়। আরও ভালো ভালো কাজ করতে চায়, লেখনী দিয়ে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে যেতে চায়। আমি নিজেকে আকাশে দেখতে চাই না, বরং মাটিতেই দেখতে চাই। হয়তোবা আমার মাথা আকাশ ছুঁতে চায়, কিন্তু আমার পা মাটিতেই থাকতে চায়। মাটির মানুষ হয়ে মানুষের সঙ্গেই নিজের সম্বন্ধ গড়তে চাই আমি। সবকিছু ছাপিয়ে এইটা বলব যে, আমি ভালোবাসায় মিশে থাকতে চাই। তারপরও আমি মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই। আমি বছরে চারবার অসুস্থ রোগীদের জন্য নিজের ব্লাড দিয়ে থাকি আর এই কাজটা আমি আমার ভালো লাগা থেকেই করে থাকি। সর্বোপরি, আমি মানুষকে ভালোবেসে মানুষেই বাঁচতে চাই।