রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় নৌকার যাত্রী হয়ে যেতে চান বহুদূর
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান পিরোজপুরের তরুন প্রজন্মের প্রিয় নেতা এস এম বায়েজীদ হোসেন পিরোজপুর / 
পিরোজপুরের রাজনীতিতে আলোচিত নাম সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান- মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এস এম বায়েজীদ হোসেন। তার নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুল জলিল হাওলাদার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পিরোজপুর সদর উপজেলার শিকদার মল্লিক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময় সে স্থানীয় রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় নৌকার মাঝি হয়ে তিনি যেতে চান বহুদূর। তার আগামী দিনের রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে এ প্রতিবেদন লিখেছেন- শামীমুল আহসান
পিরোজপুরের ‘যুবরাজ খ্যাত জেলা সদরের কদমতলি উপজেলার জুজখোলা গ্রামের বাসিন্দা এস এম বায়েজীদের পিতার নাম এস এম মঈনুল হোসেন। মাতার নাম শামছুন্ নাহার। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান তরুণ এই রাজনীতিবিদ ২০০৬ সালে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পিরোজপুর উত্তর পোরগোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এস এস সি পাশ করেন। ২০০৮ সালে পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচ এস সি পাশ করেন। ২০১২ সালে পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ২য় বিভাগে স্নাতক এবং ২০১৪ সালে একই বিষয়ে ২য় বিভাগে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।
বায়েজীদ ছাত্র জীবনে পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে অধ্যায়নকালে ছাত্রলীগ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০০৬ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য হন। এর পর ২০১১-২০১২ সালে গঠিত পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের প্রস্তাবি প্রচার সাম্পাদক ছিলেন। ২০১৩-২০১৪ সালে পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০১৫-২০১৮ সালে পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পাশপাশি পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ২০১১-১২ সালেন জন্য সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর জি এস প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন ২০১৩-১৪ সালের জন্য। ভি পি নির্বাচিত হন ২০১৪-১৫ সালের জন্য। তার পরে ২০১৫-১৬ সালের জন্য ভি পি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মাসুদ আহমেদ রানা। এর পর ২০১৬-১৭ সালের জন্য পুন:রায় দ্বিতীয় বার ভি পি নির্বাচিত হন। সেই থেকে অদ্যবদি পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের ভি পি পদে বহাল আছেন।
২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে ব্যাপক ভোটে বিজয়ী হন এস এম বায়েজীদ। স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সকল শ্রেণীর জনসাধারণের সাথে মিলেমিশে থাকায় পিরোজপুর সদরে বায়েজীদের ব্যাপক সমর্থক রয়েছে। পিরোজপুর-১ আসন ছাপিয়ে জেলার সর্বত্র তার সে সুনাম ছড়িয়ে আছে।
পিরোজপুরের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-যুবক, কৃষক-জনতা সবাই যেন তার ভক্ত। রাজনীতির মঞ্চ, সাংস্কৃতিক মঞ্চ কিংবা ক্রীড়ার মাঠ, সবখানেই সহযোগিতাসহ নেতৃত্বমূলক সরব উপস্থিতি থাকে তার। আর এভাবেই তিনি সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন। সৎ ও উন্নয়ন বান্ধব তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে বায়েজীদের নাম সকলের মুখে মুখে উড়ে বেড়ায়। ব্যাক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে এলাকার জনসাধারণের জন্য রাজনীতি করছেন তিনি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শত্রæতে পরিনত হয়ে উঠছেন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। প্রতিপক্ষরা তাকে প্রতিহত করতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় হুকুমের আসামী করে হয়রানি করেছে। তার মধ্যে ২০২১ সলের পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাকে একটি মামলায় জড়ানো হয়। এ নির্বাচনে বায়জীদের চাচা সিহাব শেখ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. হানিফ খানের প্রতিদ্বন্দ্বী হন। নির্বাচনে সিহাব শেখ মো. হানিফ খানকে পরাজিত করে অধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। পিরোজপুর সদর থানায় ঠিকাদার উৎপল কুমার সাহার দায়ের করা আর এক মামলায় তাকে হুকুমকাতা হিসেবে আসামী করা হয়। মিথ্যা ও হয়রানীমূলক দুটি মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
বায়জীদ জানান, তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িছে পিরোজপুর-১ আসনের তর্বমান এমপি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরোধীপক্ষ। তাদের এজেন্ডা হচ্ছে, শ ম রেজাউল করিমের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ করার জন্য বায়েজীদকে প্রতিহত করতে হবে। কেননা, শ ম রেজাউল করিমের নমিনেশন প্রাপ্তির পর তাঁর নির্বাচনে যারা মাঠে সক্রিয় ছিলেন, সে সব কর্মীদের মধ্যে এস এম বায়েজীদ হোসেন অন্যতম। এসময় বায়েজীদ তার বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী নিয়ে শ ম রেজাউল করিমের প্রচার কাজে সহযোগিতা করেছেন। তাই মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তাঁর চলমান উন্নয়ন কাজে অন্যদের সাথে বায়েজীদকেও তাঁর সহযোগি হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এখন বায়েজীদকে প্রতিহত করতে পারলেই শ ম রেজাউল করিমের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অনেকটা বাঁধাগ্রস্থ হবে। এমন ভাবনায় পিরোজপুরের রাজনৈতিক মাফিয়াদের রহস্যময় এজেন্ডা হিসেবে বয়েজীদকে বিভিন্ন মামলায় আসামী করে হয়রানি করা হচ্ছে। একই সাথে তিনি অপসাংবাদিকতার শিকারও হচ্ছেন।
এস এম বায়েজীদ হোসেন পিরোজপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দি কলেজে ভার্ত হয়ে পড়া-লেখার পাশপাশি ছাত্র রাজনীতিতে যোগদেন। এসময় তিনি সাবেক এমপি, পিরোজপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম উয়ালের অনুশারি হয়ে আপন উৎসাহে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরর রহমানের আদর্শে পথ চলেন। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর ততকালীন এমপি এ কে এম উয়াল পরিবারে স্বার্থের ভাগবাটোয়ারার কারণে পারিবারিক দ্ব›দ্ব পিরোজপুর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আদর্শের ছন্দপতন ঘটে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে গিয়ে বয়েজীদ হোসেন এডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের ছত্রছায়ায় আসেন।
তিনি জানান, সাবেক এমপি আউয়ালের দূর্নীতি পরায়নতার কারণে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এডভোকেট শ ম রেজাউল করিমকে দলীয় নমিনেশন দিলে তিনি পিরোজপুর-১ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। একই সাথে তাঁকে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য করে ‘গৃহায়ন ও গণপূর্ত’ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলে পিরোজপুর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে আদর্শিক রাজনীতির গতি ফিরে আসে। ফলে এস এম বয়েজীদ হোসেনেও তার রাজনৈতিক সুপ্ত বাসনা পুরণে শ ম রেজাউল করিমকে অনুসরণ করে চলার পথ খুঁজে পান। তাঁকে অনুসরণ করে পথ চলায় বায়জীদ হোসেনকে পিরোজপুর-১ আসনের সাধারণ মানুষ আগামী দিনের সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ হিসেবেও দেখতে চাইছেন। তারই প্রতিফল হিসেব ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে তাকে পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
গ্রামীন পর্যায়ের রাজনীতিতে জাতীয় রাজনীতির যে সম্ভাবনা দেখা দেয় তার দুটি দিক থাকে। জাতীয় রাজনীতির অংশীদার হতে হলে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ত্রিণমূল থেকে উঠে আসতে হয়। এ জন্য দলের অঙ্গ সংগঠনের পদ-পদবীতে নিজেকে সমর্পণ করে সিনিয়র রাজনীতিবিদদের অনুসরণ করতে হয়। পাশাশি দলের ত্রিণমূলে জেলা-উপজেলার নেতৃত্বে আস্থাভাজন হয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে উত্তীর্ণ হয়ে জাতীয় রাজনীতির অংশীদারিত্ব প্রমান করতে হয়। দ্বিতীয় দিকটা আর্থিক প্রভাবে অনৈতিক অংশীদারিত্ব। যা সুস্থ ধারার রাজনীতি বা সুস্থ সমাজ মেনে নিতে চায়না।
সাম্প্রতিক সময়ে নানান কারণে পিরোজপুর-১ আসনের নেতৃত্ব নিয়ে মিডিয়াসহ রাজনৈকি অঙ্গনে বা মহল বিশেষে এ আসনে ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বচনে ঘুরেফিরে সাবেক এমপি ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল, তার পরিবার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, বর্তমান এমপি শ ম রেজাইল কারমকে নিয়েই নির্বাচনী আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে। বর্তমান আলোচনায় তাদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া দায়। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর পিরোজপুর-১ আসনের উন্নয়নের নেতৃত্বে শ ম রেজাউল করিম এমপির বিকল্প নেই। কিন্তু তাদের পরে এ আসনে তরুণ প্রজম্মের মধ্যে কে বা কারা জাতীয় নেতৃত্বের উপযুক্ত হতে পারেন সে নিয়েও আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক মহলে পারিবারিক যে বলয় থাকে তাতে করে শ ম রেজাউল করিম এমপির পরিবারে আপাতত কেউ আলোচনায় নেই। তার ছেলে বেরিস্টার শেখ মো. তানভীর করিম রাসেলের মধ্যে রাজনীতির তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। আউয়াল পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাই মশিউর রহমান মহারাজ বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য। পারিবারিক বলয়ে ইতিপূর্বে নানান কারণে বিতর্কিত হলেও তিনি পিরোজপুরের রাজনীতিতে আউয়াল পরিবারের পরবর্তি প্রজম্মের প্রতিনিধিত্ব করবেন এমনই ভাবছেন।
এছাড়া পারিবারিক বলয়ের বাইরে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ২০২০ সালের পৌরসভা নির্বাচন এবং ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বা বিজয়ীদের মধ্যে পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী এস এম বায়েজীদ হোসেনের মধ্যে প্রজম্ম উত্তর প্রতিনিধিত্বের সম্ভাবনা বেশী রয়েছে।
সম্প্রতি তিনি তার আগামী দিনের রাজনৈতিক ভাবনার কথা জানিয়ে বলেন, ২০২৪ সালের পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ালম্যান পদে নৌকা মার্কার প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের জন্য নমিনেশন চাইবেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এস এম বায়েজীদকে নমিনেশন দিলে অতীতের মতো বিপুল ভোটে শত ভাগ বিজয়ী হবেন বলে পিরোজপুর সদরের বায়েজীদ ভক্ত-সমর্থকরা মনে করেন। এমনি করে তরুণ এ রাজনীতিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় নৌকার যাত্রী হয়ে পর্যায়ক্রমে বহুদূর যেতে চান। যাত্রা পথে তিনি তার কাজ-কর্মে সততা ও নিষ্ঠার প্রমান দিয়ে পিরোজপুরের জনগণের হৃদয়ে রাজা-মহারাজার আসনে বসতে চান। এ জন্য বায়েজীদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এমপিকে অনুস্মরণ করে চলছেন। দেখা যাক, পিরোজপুরে তরুন প্রজন্মের প্রিয় এই নেতা নৌকার যাত্রী হয়ে রাজনীতির উত্তাল সমুদ্রে কতদূর যেতে পারেন।