Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

সৈয়দপুরে ইটভাটার ফাঁদে কৃষক, বোরো আবাদে অনিশ্চয়তা নীলফামারী

সৈয়দপুরে ইটভাটার ফাঁদে কৃষক, বোরো আবাদে অনিশ্চয়তা

নীলফামারীর সৈয়দপুরের বিভিন্ন এলাকায় নীতিমালার তোয়াক্কা না করে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমির ৭ থেকে ৮ ফুট গভীর করে মাটি কাটছে ভাটার মালিকরা। এতে পাশের জমি ধসে যাচ্ছে। ওইসব জমিতে বোরো ধান আবাদ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে এ অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে দাবি স্থানীয়দের। আর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, জমির উপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলায় ৩২টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৩টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। বাকিগুলো চলছে অবৈধভাবে। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। এছাড়া হাতের নাগালে হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে এ মাটি কিনে নেয় একটি পক্ষ। এরপর তারা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করে থাকেন।

সরেজমিনে উপজেলার কামারপুকুর কিসামত কামারপুকুর কাঙ্গালুপাড়ায় দেখা গেছে, খননযন্ত্র দিয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট গভীরতায় ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। এতে পাশের যেসব উঁচু জমি রয়েছে সেগুলো ধসে পড়েছে। ওই এলাকার আব্দুল গণি ইসরাইল বলেন, আমি একজন বর্গাচাষি। অন্যের জমি চাষাবাদ করি। বাড়ির পাশেই বোরো ধান আবাদের জন্য ৩৫ শতক জমি বর্গা নিয়েছি। জমিতে পানি দিতেই প্রায় ৩ শতক জমি ধসে গিয়ে সব পানি বের হয়ে গেছে। পাশের জমির মালিক একই এলাকায় অবস্থিত ‘এম জেড এইচ’ নামের একটি ইটভাটায় মাটি বিক্রি করেছেন। ভাটার মালিক হারুন অর রশিদ প্রায় ৭ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে মাটি কাটার সময় আমরা বাধা দিয়েছি। কিন্তু তারা শোনেননি। সম্পূর্ণ গায়ের জোরে অতিরিক্ত গভীর করে মাটি কাটায় আশপাশের সব জমিই ঝুঁকিতে পড়েছে। পাশের আরেক জমির মালিক হাসান মাহমুদ বলেন, ভাটার মালিক প্রভাবশালী ও শিল্পপতি হওয়ায় কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। ভাটার ম্যানেজার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এতটা গভীর করে কেটে নিয়েছে। এখন খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের।

অভিযুক্ত ইটভাটার মালিক হারুন অর রশিদ বলেন, সারা দুনিয়ায় মাটি। এই মাটি নিয়েই ভাটা চলে। এটা সবাই জানে। মাটির প্রয়োজন ছিল তাই মাটি কিনে কেটেছি। এতে কার কী ক্ষতি হয়েছে তা আমার দেখার বিষয় নয়।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষন বলেন, ফসলি জমির উপরিস্তরের ছয় ইঞ্চি গভীরতায় মাটি কেটে নিলে উর্বরতা নষ্ট হয়। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবাণু থাকে এবং অণুজীবের কার্যাবলি আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এরপর যে মাটি থাকে, তাতে ফলন ভালো হয় না। এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে ধীরে ধীরে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নীলফামারী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কমল চন্দ্র বর্মন জানান, মালিক মাটি বিক্রি করলে আইনিভাবে তাদের করার কিছু নেই। 

সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বলেন, মাটি কাটা এবং কৃষি জমি ধসে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।