Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

বাংলাদেশের স্থপতিকে হারানোর দিন, জাতীয় শোক দিবস আজ জাতীয়

বাংলাদেশের স্থপতিকে হারানোর দিন, জাতীয় শোক দিবস আজ

আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে নিষ্ঠুর, ঘৃণিত, বর্বর ও নৃর্শসতম হত্যাকান্ডের একটি দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী। যিনি না থেকেও বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু হয়ে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায়নি। বাংলার জনসাধারণ তাঁকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে।

তবে আমাদের এটাও মানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসাই শেষ কথা নয়। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে অনুষ্ঠানসর্বস্ব শোক পালন নয়, তার স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলাই হবে তাকে সত্যিকারের সম্মান জানানো। তারচেয়ে বড় কথা, আমাদের সেই আত্মোপলব্ধি কী হয়েছে? সরকার, রাজনৈতিক দল কী তার আত্মদানকে হৃদয়ে, চেতনায় ধারণ করে!

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও শোক জানিয়ে বাণী দিয়েছেন জাতীয় পার্টি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি প্রমুখ।

শোক দিবস সামনে রেখে এ মাসের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে। সরকারিভাবেও পালিত হচ্ছে দিবসটির বিভিন্ন কর্মসূচি। আজ সরকারি ছুটি। 

সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবনসহ বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬ টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। 

সকাল ৮ টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। দুপুর ১২ টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। উক্ত কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল, গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। 

এছাড়াও, ১৬ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৪ টায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সন্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক। 

প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে হত্যা করে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা চালিয়ে হত্যা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খানকে। 

এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সকল শহীদকে। এদিকে, গবেষক খালেক বিন জয়েনউদদীনের গবেষণায় উঠে এসেছে, সেদিন কামানের গোলায় বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। 

বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়িতে খুনি মহিউদ্দিন আহমেদের ছোড়া কামানের গোলায় মোহাম্মদপুর, শেরশাহ সুরী রোডের ৮, ৯, ১৯৬, ১৯৭ নম্বর বস্তিঘরে নিহত হন রিজিয়া বেগম, শিশু নাসিমা, রাশেদা বেগম, সাবেরা বেগম, আনোয়ারা বেগম-১, আনোয়ারা বেগম-২, সুফিয়া খাতুন, সয়ফুল বিবি, হাবীবুর রহমান, আবদুল্লাহ, রফিজল, শাহাবুদ্দীন আহমদ, আমিন উদ্দীন আহম্মদ প্রমুখ।