Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

নড়াইলে লাঞ্ছিত অধ্যক্ষকে ফুলের মালা দিয়ে নেয়া হলো কলেজে নড়াইল

নড়াইলে লাঞ্ছিত অধ্যক্ষকে ফুলের মালা দিয়ে নেয়া হলো কলেজে

নড়াইলে লাঞ্ছিত হওয়া অধ্যক্ষ বুধবার (৩ আগষ্ট) কলেজে ফিরেছেন। তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রার মাধ্যমে কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস বুধবার (৩ আগষ্ট) দুপুর ১২টার দিকে নড়াইল-১ আসনের মাননীয় সাংসদ বিএম কবিরুল হক মুক্তি’র গাড়ীতে কলেজে পৌঁছান। এ সময় কলেজ গেট হতে কলেজের জিবি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসি, শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। 

এরপর কলেজ’র হলরুমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নড়াইল-১ আসনের সাংসদ বিএম কবিরুল হক মুক্তি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আব্দুস সালাম হাওলাদার, রেজিস্ট্রার মোল্যা মাহফুজ আল হুসাইন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মণিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন বিভাগের ডাইরেক্টর এএসএম রফিকুল আকবর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র জিবি’র সভাপতি এ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্তী, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা রেড ক্রিসেন্ট’র সম্পাদক কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন, বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট এসএ মতিন, সমাজসেবক কল্যাণ মুখার্জী প্রমুখ।

কলেজে ফিরতে পেরে বেজায় খুশি হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। তাঁকে কাছে পেয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দিত। আবেগ আপ্লুত অনেকের চোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু ঝরতে দেখা যায়।  

অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বিশ্বাস প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ গত ১৮ জুন হতে পরিবার পরিজন ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। ভাবতেও পারিনি আমার সাথে এমনটি করা হবে। কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে চেয়েছিল। আমার মত এমন করুণ অবস্থা যেন কারো জীবনে না ঘটে। আমাকে চরম অপদস্থ করার পর আমার মোটর সাইকেল সহ ৩টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আরেকটি মোটরসাইকেল কেনার মত সঙ্গতি আমার নেই। সভ্য দেশে এমন অমানবিক নির্যাতনের বিচার আমি কার কাছে দিব ? একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছেই আমার নালিশ, তিনি ওদের বিচার করবেন। 

উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর পর বন্ধ কলেজ গত ২৪ জুলাই খোলা হয়েছে। দীর্ঘ ১মাস ৫দিন পর কলেজ খোলা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ জোবায়ের হোসেন চৌধুরী উপস্থিত থেকে কলেজ খোলার ব্যবস্থা করেন। তবে অধিকাংশ শিক্ষকের চোখেমুখে আতংকের ছাপ রয়ে গেছে। মোটরসাইকেল নিয়ে আসতেও ভয় পাচ্ছেন শিক্ষকরা।

এদিকে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে বাদ দিয়ে গত ১৩ জুলাই জিবি’র সভা করা হয়েছে। কলেজ খোলার ব্যাপারেও তার সাথে কেউ কোন মতবিনিময় করেননি। ওই সভায় স্থানীয় শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই মর্মে রেজুলেশন করা হয়েছে যে, স্থানীয় শিক্ষকরা গত ১৮ জুন কলেজে সংঘঠিত ছাত্র ও সাধারণ জনগনের আন্দোলন থামাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। কেউ কেউ মনে করছেন এমন রেজুলেশন করে শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন করা হয়েছে। কারণ স্থানীয় শিক্ষক ছাড়া বহিরাগত শিক্ষকরা এ কলেজের জিবি’তে কখনও শিক্ষক প্রতিনিধি হতে পারেন না (বিগত ১২ বছরের জিবি’র রেকর্ড হতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী)। নানাভাবে বহিরাগত শিক্ষকদের হেয় করা হয়। ১৮ জুনের বিক্ষোভের সময় যে ৩জন শিক্ষকের মোটর সাইকেল ভাংচুর ও পোড়ানো হয়, তারা সকলেই বহিরাগত শিক্ষক। 

প্রসঙ্গত, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহুল দেব রায় গত ১৭ জুন  ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার একটি ছবি দিয়ে তার সমর্থনে লেখে “ প্রণাম নিও বস নুপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম”। পরদিন ১৮ জুন রাহুল দেব রায় কলেজে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে। তাৎক্ষণিক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস তাকে পুলিশে দেন। পুলিশ তাকে নিয়ে যেতে গেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাঁধা দেয়। এরই মধ্যে কে বা কারা গুজব ছড়িয়ে দেয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওই ছাত্রকে সমর্থন দিয়েছেন, তার কোন বিচার করতে চাননি। গুজবে এলাকার সাধারণ মানুষ কলেজে এসে বিক্ষোভ করে। প্রশাসনের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করে। শিক্ষকদের ৩টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ। 

এ ঘটনায় ১৭ জুলাই উচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর পৃথক দু’টি তদন্ত  সম্পন্ন করেছে। তদন্ত শেষে কলেজের জিবি এবং কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আকতার হোসেনকে কারণ দশার্নোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। একই ভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে কলেজে ১৮ জুনের ঘটনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক আকতার হোসেন’র ভূমিকা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।
এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এ পর্যন্ত  ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, এলাকায় এবং কলেজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বাড়িতেও সার্বক্ষনিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে। অপরাধীদের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। যাচাই বাছাই করেই আসামী গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোন নিরীহ কাউকে হয়রানী করা হবে না।