Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

রংপুরে আত্নহত্যা প্রতিরোধ কর্মশালা অনুষ্ঠিত নীলফামারী

রংপুরে আত্নহত্যা প্রতিরোধ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আত্নহত্যা বা আত্নহনন, ইংরেজিতে আমরা বলি সুইসাইড। এক কথায় সঙ্গায়িত করা যায়, ইচ্ছাকৃত বা স্বেচ্ছায় নিজের জীবন বির্সজন দেয়া। এখন আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করছি। আমরা জানি, ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ এ আত্নহত্যার প্রচেষ্টা বা আত্নহত্যাকে এক ধরনের অপরাধরুপে ঘোষণা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর প্রায় দশ লাখ মানুষ আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। মৃত্যুর অনান্য কারণের মধ্যে আত্নহত্যা তেরোতম কারণ। আর এ তেরোতম কারণের মধ্যে একাধিক কারণ জড়িয়ে আছে আত্নহত্যার পিছনে।

আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে শুধু কিশোর-কিশোরীই নয়, ৩৫ বছরের বয়সের মধ্যেও অসংখ্য আত্নহত্যা হচ্ছে। তবে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা চারগুণ বেশি। এটি গুরুতরও অপরাধ হিসেবে ঘোষণা থাকলেও ডাক্তারগণ আত্নহত্যা করার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করেন। কথাগুলো বলেন, প্রধান আলোচক সৈয়দা রুখসানা জামান শানু।
  
তিনি আরো বলেন, শিশু এবং এ্যাডলোশেনদের সাথে দীর্ঘ ৩৫বছর ধরে কাজ করছি পাশাপাশি গ্রামিণ জনপদে সাংবাদিকতা এবং শিক্ষকতা করার দরুণ আমিও সেই বিবেচনায় খুব কাছ থেকে দেখেছি আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়া কিশোর-কিশেরী এমনকী যুবক-যুবতিদের।

চেতনায় যখন বন্ধ্যাত্ব আসে, শিক্ষায় তখন মৃত্যু ঘটে। মানুষ অন্ধত্বের পদতলে আশ্রয় খোঁজে--।

তিনি বলেন, খুব সহজ কথা আরো সহজভাবে বলি--- সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার জনগোষ্ঠীই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। আর এ জনগোষ্ঠী কোথায় পাব। নিশ্চয় আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। কিন্তু, শিশু,কিশোর আর যুবা যদি আত্নহত্যার পথ বেছে নেয় তবে ভবিষ্যৎ কী হবে।

আমার চোখে দেখা বেশ কয়েকটি আত্নহত্যা কীভাবে হলো আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আপনারা প্লিজ আমার কথায় মাইন্ড করবেন না। প্রায় প্রত্যেকটি জীবন বির্সজনে পরিবারের অসচেনতায় জড়িয়ে রয়েছে। যা সংবাদপত্রে ওঠে আসে খুব কম। আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার সারমর্ম; দুই ভাই ছোট ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা, বড়জন খুব সামান্য বেতনে চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারি এবং তার স্ত্রী গর্ভবতী। অর্থনৈতিক দৈন্যতায় পরিবারের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হত হামেশায়। একদিন বড় ভাই ছোট ভাইকে খুন করে দিল। পরবর্তি জীবন একেবারে অন্ধকার হয়ে গেল।    

আর একটি ঘটনা দুই যুবক ছেলে সহদোর,একজন লাভ ম্যারেজ করেছে অন্যজনের এ্যাফেরস চলছিল। স্ত্রীকে ছেলের মা মেনে না নেয়ায় সন্তান গলায় দড়ি দিয়ে জীবন বির্সজন দেয়। অন্য ভাইটির প্রেমিকাকে বাবা-মা মেনে না নেয়ায় এবং বেশ কিছু গাল-মন্দ করায় অভিমানে এটিও গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সন্তানহারা বাবা একটি স্বনামধন্য হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। এমন নানা কারণে জড়িয়ে আছে আত্নহত্যা।  প্রধান আলোচক শানু এর প্রতিরোধ বা করণীয় কী এ বিষণয়ে বলেন, প্যারেন্ট ইজ দ্যা ফার্সট এন্ড বেস্ট এডুকেটর অব দেয়ার চাল্ডস। অর্থাৎ বাবা-মাই প্রথম শিক্ষক এবং প্রথম বন্ধু তাঁদের সন্তানের। তারপর শিক্ষক বা স্কুল কলেজ, সোসাইটি। কিন্তু এই বাবা-মাই যদি সন্তানের স্ট্রং ইমোশন না বোঝেন অর্থাৎ, কেনো সে রাগ করছে কেনই বা ইরিটেট হচ্ছে-- সেটা বোঝার চেস্টা না করেন এমনকি সন্তানের এমন আচরণের জন্য অভিভাবকও ইরিটেট হয়ে যান সন্তানের সাথে। সন্তান তখন ভাবা শুরু করে বাবা-মা বুঝি তাকে ভালোবাসে না-------। তিনি অভিভাবকের উদ্দেশ্যে আরো বলেন-আপনি তার ইমোশন বোঝার চেস্টা করুণ। আসল কারণ খুঁজে বের করুণ সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। ভালোবাসার বিকল্প নেই। সন্তানকে ভালোবাসুন, তার সত্যিকারে বন্ধু হোন। আপনার সন্তান বিপথে যাবেনা এটি আমার বিশ্বাস। আপনার আত্নজ কখনও আত্নহত্যার পথ বেছে নেবে না। ছাত্র-ছাত্রিদের উদ্দেশ্যে বলেন, সোনামনিরা তোমরা নিজেকে ভালোবাস, নিজের জীবন বির্সজন দিও না।  

‍‌‌আত্নহত্যা আর নয়, করব মোরা আত্নজয়" এই শীর্ষক কর্মশালা গত ৩০/০৭/২০২২খ্রি রংপুর মডেল কলেজে অনুষ্ঠিত হয়।  জাগ্রত ব্যবসায়ী ও জনতা'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির শিহাব রিফাত আলমের পৃষ্টপোশকতায়, জাগ্রত ব্লাড ডোনার্স ক্লাব,রংপুর বিভাগের আয়োজনে দিনব্যাপী ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ কর্মশালা চলে।

রংপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মো: মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্ত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক-প্রকাশক, গবেষক, সাংবাদিক ও কবি সৈয়দা রুখসানা জামান শানু। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাগ্রত ব্যবসায়ী ও জনতার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাগ্রত মহানায়ক শিহাব রিফাত আলম।  বিশেষ অতিথি হিসেবে অনান্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন উপাধ্যাক্ষ, আরসিপিআই এন্ড এমএস ম্যাটস, রংপুর ও সাবেক উপ-পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, এ.কে.এম শাহাদাৎ হোসেন। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও কবি নাসরিন ইসলাম, নাজনীন সুলতানা লুনা, কবি নাসরিন নাজ, কবি আবু নাসের তুহিন এবং কন্ঠশিল্পী অন্তর রহমান প্রমূখ। অনুষ্ঠান সন্চালনা করেন আহসান হাবীব মানিক এবং ইফাফাত জামান রুপা।সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জাগ্রত হিরো মাইনুদ্দীন, মনিরা সিরাজ, ধ্রুবক রাজ, রাজেন দাস, তম: বিভাবরী, রাশেদুজ্জামান, দিবস রায়, শিমু আক্তার ও জাগ্রত সাহিত্য পরিষদ, রংপুর জেলা।

এই বিভাগের অন্যান্য খবর