Opu Hasnat

আজ ৫ জুন সোমবার ২০২৩,

দুর্গাপুরে হঠাৎ বন্যা, পৌরশহরে চলছে নৌকা নেত্রকোনা

দুর্গাপুরে হঠাৎ বন্যা, পৌরশহরে চলছে নৌকা

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে টানা কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় উপজেলার গাওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, বিরিশিরি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়েছে হাজারো মানুষ। শুক্রবার দুপুরে ওই এলাকা পরিদর্শন করে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বর্ষন ও উজান থেকে আসা পানি ভোর থেকেই পৌর শহরের চরমোক্তারপাড়া, মুজিবনগর আবাসন, দক্ষিরপাড়া আবাসন, চকলেঙ্গুরা ও শিবগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করে। কিছু কিছু এলাকায় বিপদ সীমার উপরদিয়ে প্রবাহিত শুরু করায় শহরের দোকানপাট প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বিরিশিরি ও দক্ষিণ ভবানীপুর এলাকার নিম্নাঞ্চল গুলো। মাদরাসা, মসজিদসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি থাকায় পবিত্র জুমআর নামাজ আদায়ে সমস্যায় পড়তে হয় মুসল্লীদের। 

দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর ফারংপাড়া এলাকার অসংখ্য মানুষ চরম ঝুঁকি ও বিলীনের শঙ্কায় রয়েছে। চলমান নদী ভাঙন প্রতিরোধ না করা গেলে কাকৈগড়া ইউনিয়নের ঝাঞ্জাইল এলাকার হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, বাজার, মসজিদসহ সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এমনই শঙ্কায় ভুগছেন স্থানীয়রা। চন্ডিগড় ইউনিয়নে ধানের বীজতলা ডুবে গিয়ে প্রায় শতাধিক পুকুর থেকে মাছ ভেসে গেছে।   

গাওকাঁইয়া ইউনিয়নের বন্দ উষান গ্রামের জয়নাল আবেদীনের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নৌকা ও কলার ভেলা তৈরি করে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলো।

কুল্লাগড়া ইউনিয়নের কুড়ালীয়া গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, নদী ভাঙনের ফলে ঘর-বাড়ি বেঁধে রাতে ঘুমানোর জায়গাটুকু পর্যন্ত বিলীন হয়ে গেছে। আমার মৃত্যুর পর নিজের লাশটি অন্যের জমিতে কবর দিতে হবে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সম্প্রতি অন্যের জায়গায় ঘর করে জীবিকা চালাচ্ছেন তিনি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ সোমেশ্বরী নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু হলেও কাজের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ কল্পে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, এলাকায় বন্যার খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় কে নিয়ে উপজেলা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। নিম্ন এলাকার পানিবন্ধি পরিবারের মাঝে জরুরী ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তাও করা হয়েছে। নদী ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন এলাকা নিয়োগ করেছি। আশা করছি পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবো। 

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পৌর মেয়র আলা উদ্দিন আলাল বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। নিম্ন এলাকার পানিবন্ধিদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পৌর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ্ সহায় থাকলে পরিস্থিতি সামলে নিবো ইনশাহআল্লাহ্।  
 
এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গনের খবর পেয়ে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বন্যার পানি এখন কমতে শুরু করলে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাতে নেয়া হবে।