Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা! মানিকগঞ্জ

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ভেঙ্গে পড়েছে  স্বাস্থ্য সেবা!

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, জনবল সংকট ও নানা স্বেচ্ছাচারিতায় ভেঙ্গে  পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা। ফলে এ অঞ্চলের ৩ লক্ষাধিক লোক বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি এ চিকিৎসা সেবা  থেকে। ফলে, হাসপাতালটি এখন যেন নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত এ হাসপাতালটিতে ২২ জন মেডিক্যাল অফিসারের স্থলে আছেন মাত্র ১২ জন। এরমধ্যে ৬ জন বিভিন্ন জায়গায় প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি মাত্র ৬ জন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে চলছে দায়সারা গোছের সেবাদান। ১০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্থলে আছেন ৫জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, ইএনটি, কার্ডিওলজি, মেডিসিন ও শিশুবিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় সেবা নিতে অসাধারণ রোগীরা পড়ছে বিপাকে।

রাজধানী ঢাকার অতিসন্নিকটে ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সিংগাইর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বাস। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আউটডোর ও জরুরী বিভাগে প্রতিদিন তিনশতাধিক রোগী এলেও চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা পাননা। খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নিজ জেলার এ হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা লোকজন প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছেন কাঙ্খিত সেবা থেকে। মূলত ডাক্তার সংকটের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও ভূক্তভোগীরা। কর্মস্থলে যে কজন ডাক্তার দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এদিকে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ডাক্তার ছাড়াও অফিস সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক ২ জন, সহকারী সেবক ১ জন, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট ল্যাবঃ ১ জন, ষ্টোরকিপার  ১ জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৪ জন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১ জন, স্বাস্থ্য সহকারী ১২ জন, সিনিয়র ষ্টাফ নার্স ২ জন, জুনিয়র মেকানিক্স ১ জন, এমএলএসএস ৫ জন, কুকমশালচী ১ জন, আয়া ২ জন, নৈশপ্রহরী ১ জন ও ঝাঁড়ুদার ২ জনসহ ৩৭ পদ শূন্য রয়েছে। ২ টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ১ টি দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে রয়েছে বছর খানেক যাবত। আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন অকেজো দীর্ঘদিন ধরে। ডিজিটাল যুগে এনালগ মেশিনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এক্সরের কাজ। রয়েছে সুপেয় বিশুদ্ধ পানির অভাব। জেনারেটর না থাকায় বিদ্যুৎ হীন সময়ে অসহনীয় ও ভূতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। টয়লেট দুর্গন্ধযুক্ত ও ব্যবহারের অনুপযোগী।

ডেন্টাল ইউনিট থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ডেন্টাল সার্জন ও সহকারীকে অফিসে বসে অলস সময় পার করতে হয়।  দাঁতের যন্ত্রনায় কাতর রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ছাড়া কোনো চিকিৎসকই ষ্টেশনে থাকেন না । সাভার কিংবা ঢাকা থেকে এসে অফিস করেন। সিটিজেন চার্টারে  ৩৩ আইটেমের ওষুধ সরবরাহে থাকলেও রোগীরা তা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। শিশু বিভাগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার  না থাকায় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারগণই চিকিৎসা দিয়ে চলছেন।

এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারহানা কবিরের বিরুদ্ধে রয়েছে সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে অসদাচরণ, তার অধীনস্থ ডাক্তার ও ষ্টাফদের সাথে  খারাপ আচরণ করায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে অনেকের মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক ষ্টাফ ও স্থানীয়রা জানান, সরকারি গাড়ীসহ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি করোনাকালীন সময়ে ইউএইচএফপিও ডা. ফারহানা কবির যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতেন। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে তাকে ঢাকাস্থ বাংলা মোটরের বাসা থেকে আনতে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সটি সাভারের আমিন বাজার এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। সে থেকে গাড়ীটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও সম্প্রতি সরকারি বরাদ্দে অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারি এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারহানা কবির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ডাক্তারের তেমন কোনো সংকট নাই।  প্রতিবন্ধীরা সেবা নিতে আসে, যাকে মিথ্যা মনে করে ফিরিয়ে দেই সে সংক্ষুব্ধ হয়ে অসদাচরণের কথা বলতে পারেন । তিনি আরো বলেন, করোনাকালীন সময়ে অ্যাম্বুলেন্স তার কাজেই গিয়েছিল। আমাকে আনতে যায়নি। আমি ছিলামও না। আমি ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়েই সব সময় যাতায়াত করি।
 
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যে জনবল ও কিছুটা ডাক্তার সংকট রয়েছে বহু বছর ধরে। নিয়োগ হয়না, প্রক্রিয়াধীন আছে। সেটা শিগগিরই হয়ে যাবে।