Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

গোয়ালন্দে যুবককে আটকে রেখে নির্যাতন! রাজবাড়ী

গোয়ালন্দে যুবককে আটকে রেখে নির্যাতন!

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে রাসেল শেখ (২০) নামের এক যুবককে বর্বর অমানুষিক নির্যাতন করে টানা ৬ দিন ঘরের মধ্যে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য উসমান কাজীর বিরুদ্ধে। শুক্রবার দিবাগত রাত সারে ১১ টার দিকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে রাসেলকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ।

রাসেল গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতদিয়া সৈদাল পাড়ার নজরুল শেখের ছেলে। এ ঘটনায় রাসেলের খালা শুকুরজান বেগম (৫০) বাদি হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে উদ্ধারের পর ইউপি সদস্যের লোকজনের হাতে মারপিটের শিকার হয়েছে রাসেলের পরিবার।

নির্যাতনের শিকার যুবক রাসেল জানায়, সে ঢাকায় রিক্সা চালানো কাজ করে। তার বাবা মানুসিক রোগী। মা কয়েক দিন আগে জীবিকার তাগিতে সৌদি আরবে গেছেন। সৌদি আরবে যাওয়ার আগে চলতি মাসের প্রথম দিকে তার মায়ের সাথে দেখা করে ঢাকায় ফেরার সময় দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ইউপি সদস্য উসমান কাজীর নেতৃত্বে কয়েক যুবক তাকে তুলে নিয়ে এসে দৌলতদিয়া কফিল উদ্দিন তেলের পাম্পের দোতালায় নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে বলে তুই অটোরিক্সা চুরি করেছিস। এসময় সে কোন চুরির সাথে জড়িত নয় দাবি করলে তারা আরো নির্যাতন চালায়। কোন ভাবেই সে স্বীকার না করায় তাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নৌকায় করে পদ্মা নদীতে নিয়ে যায় এবং বলে যাদের নাম বলতে বলব তাদের নাম তুই বলবি, আর তা না হলে তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলে দিব। এক পর্যায়ে সে প্রাণভয়ে তাদের বলে দেয়া নাম বলে এবং তারা সেটি ভিডিও করে রেখে ছেড়ে দেয়।

এ পরিস্থিতিতে গত ২০ নভেম্বর দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অটো চুরির বিচার বসে। সেখানে হাজির হয় রাসেল। রাসেলের স্বীকারোক্তি ওই ভিডিও প্রমান হিসেবে উপস্থাপন করা হলে চুরিতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে এক ব্যাক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয় এবং কোন রায় ছাড়া বিচার শেষ হয়। এরপর উসমান কাজী রাসেলকে নিয়ে এসে তার বাড়িতে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। রাসেল বলেন, ‘আমাকে আটকে রাখা কালে খেতেও দেয়নি। খাবার চাইলেই শুরু হতো অমানুষিক নির্যাতন।’

রাসেলের খালা শুকুরজান বেগম জানান, তার ভাগিনাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের কাছে আসতে চাইলে তাকে এক ব্যাক্তি পরামর্শ দেন যে ৯৯৯ এ ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ এসে উদ্ধার করবে। সে পরামর্শে তিনি শুক্রবার রাতে ৯৯৯ এ ফোন করে জানান। পরে ওই রাতেই গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ রাসেলকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এসময় মকবুল কাজী নামের এক ব্যাক্তিকে আটক করে পুলিশ।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য উসমান কাজী বলেন, রাসেল যে অটো চুরি করেছে তার স্বীকারও করেছে। তারপরও একজনকে এ ভাবে আটক রাখতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিচার সভায় উপস্থিত গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম মন্ডল, দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মোল্লাসহ সকলেই অভিযুক্ত রাসেলকে আমার জিম্মায় দেয়। এবং আমি তাদের অনুরোধেই রাসেলকে আমার বাড়িতে রেখে দেই।

এ প্রসঙ্গে দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল জানান, পরিষদে বিচারের আবেদন পড়েছিল, তাই বিচার সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বিচার সভায় কাউকে আটকে রাখার কথা বলা হয়নি। কি কারণে ইউপি সদস্য উসমান কাজী তাকে আটকে রেখেছিলেন তা আমার জানা নেই। পুলিশ উদ্ধারের পর আমি বিষয়টি জেনেছি।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাসেলকে উদ্ধার ও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় উদ্ধার হওয়া রাসেলের খালা একটি মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে উদ্ধারের পর রাসেলের পরিবারের উপর হামলার ঘটনায় রাসেলের নানী জহুরা খাতুন (৭০) বাদি হয়ে আরো একটি মামলা দায়ের করেছেন। উভয় মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।