Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

বীরঙ্গনা হ্লাম্রাসং মারমার দাহ ক্রিয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা! খাগড়াছড়ি

বীরঙ্গনা হ্লাম্রাসং মারমার দাহ ক্রিয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা!

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলাতে স্থানীয় প্রশাসনে উদাসীনতার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি বীরঙ্গনা হ্লাম্রাসং মারমা। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট ২০২১) মহালছড়ির রামেসু কার্বারি মহাশ্বশানে দাহ ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। বীরাঙ্গনা হ্লাম্রাসং মারমা (৭৫) রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই বার্ধক্য জনিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর বুধবার (১১ আগষ্ট ২০২১) রাত সাড়ে ৯টায় বাবু পাড়া নিজ বাড়িতে মারা যান। তবে মৃত্যুর খবর শুনে ফুল আনা হলেও শেষ মেষ মৃতদেহে কোন ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলী না দিয়ে গাড়িতে রেখে চেহারা একটু তাকিয়ে চলে যান ইউএনও জোবাইদা আক্তার।

প্রশাসনের উদাসিনতার ফলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়ায় দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হলো। গত ১১ই আগষ্ট বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার বাবু পাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে ৭৫বছর বয়সে বার্ধক্য জনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহষ্পতিবার বিকেল ৩টায় রামেসু কার্বারি পাড়া সামাজিক মহা শ্মশানে তাঁর দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

বীরঙ্গনা হ্লাম্রাসং মারমার সাপ্তাহিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানাধি আগামী ১৯ আগষ্ট ২০২১ইং রোজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য্য করা হয়েছে। এতে শুভানুদায়ী সকল মহালছড়ি বাবু পাড়া নাতী নিবাসী বসত ঘরে আমন্ত্রন করা হয়েছে। 

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, বীরঙ্গনা হ্লাম্রাসং মারমা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদারদের দ্বারা অনেকবার ধর্ষনের শিকার হয় এবং পরে নানাভাবে শারিরিক নির্যাতিত হন। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তৎকালিন মহকুমা মহালছড়ি পরিত্যক্ত গুদামে নির্যাতন করে ছেড়ে দেওয়া হতো। বর্তমান ইউএনও অফিসের পিছনে পাহাড়ের নালাতে বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের এনে গণহত্যা করে ফেলে দেওয়া হতো মৃতদেহ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার কারণে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন এলাকাবাসী পাক হানাদারদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলো। উচিত ছিলো মৃত্যুর আগে বীরঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। কিন্তু তা তিনি পেলেন না। তবে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের শেখ হাসিনার ঘোষিত তালিকাতে বীরঙ্গনা খেতাব অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

বীরঙ্গনা হ্লাম্রাসং মারমা নাতি মংসাইংগ্য মারমা জানান, যারা আমার নানী সৎকাজে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে এসেছেন তাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ছোটকাল থেকে আমাকে রড় হওয়ার পর্যন্ত লালন-পালন করা পর এখন উপযৃক্ত হযে নানীকে ভরন-পোষন জন্য প্রতিমাসে ৩হাজার করে খরচ দিতে হত। আমার নানী হ্লাম্রাসং মারমা বীরঙ্গনা হওয়ার পরও সরকার থেকে কোনভাবে সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে কষ্টে মরতে হয়েছে এটিই খুবই দু:খজনক। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন যেন দ্রুত বীরঙ্গনা খেতাবটি পায়। 

মহালছড়ি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এ,কে,এম হুমায়ূন কবীর বলেন, আশা করি হ্লাম্রাসং মারমা কম সময়ের মধ্যেই বীরঙ্গনা হিসেবে অবশ্যই স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মৃত্যুর আগে তিনি কিছুই পেলেন না প্রশাসনের উদাসীনতায়। 

মহালছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ হ্লাম্রাসং মারমা’র মৃত্যু ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। তবে এর আগে ইউএনও প্রিয়াকা দত্ত দায়িত্বের সময় দুই বীরঙ্গনার মধ্যে থলি পাড়ার বীরঙ্গনা সেইন্দা মারমা মৃত্যুতে গার্ড অব অনার ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলী দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাহ ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। মাহলছড়ি থলি পাড়া বীরঙ্গনা সেইন্দা মারমা ও বাবু পাড়া বীরঙ্গনা হ্লাম্রাসং মারমা দুই বীরঙ্গনাকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বরের মহান স্বাধীনতা দিবসে সম্মামনা প্রদান করা হয়ে থাকে।

মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবাইদা আক্তার বলেন, বীরঙ্গনা হিসেবে গেজেট প্রকাশিত না হলে কাউকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাহকার্য কিংবা দাফন করার কোন সুযোগ নেই। তারপরও হ্লাম্রাসং মারমার দাহক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ১০হাজার এবং মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ এর পক্ষ থেকে ৫হাজার টাকাসহ মোট ১৫হাজার টাকা সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।