Opu Hasnat

আজ ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ২০২৪,

ছেলে-নাতিদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন

সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে তিন বছর এলাকা ছাড়া অসহায় একটি পরিবার ফরিদপুর

সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে তিন বছর এলাকা ছাড়া অসহায় একটি পরিবার

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চর কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মোল্যা (৬৫) দীর্ঘ তিন বছর ধরে এলাকা ছাড়া। সন্ত্রাসী হামলা ও প্রাননাশের ভয়ে বাড়ী-ঘর ফেলে আশ্রয় নিয়েছে ফরিদপুর শহরে। এখানে এসেও রক্ষা হচ্ছেনা বাদশা মোল্যা ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। সন্ত্রাসীরা ফের প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে। ফলে চরম আতংক নিয়ে বসবাস করছেন তারা। দীর্ঘদিন এলাকা ছেড়ে চলে আসায় তেমন কোন কাজ করতে না পারায় মানবেতর ভাবে দিন কাটছে বাদশা মোল্যার পরিবারের। সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে ছেলে, ছেলের বৌ ও নাতিদের নিজের কাছে এনে রেখেছেন। দুই নাতির পড়ালেখাও বন্ধের পথে। এ বিষয় ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অসহায় এই পরিবারের সদস্যরা। হাতকাটা গিয়াস তালুকদারের নানা কর্মকান্ড নিয়ে গত বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী বাদশা মোল্যা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি গিয়াস তালুকদারের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। 

স্থানীয় এলাকাবাসী, প্রাপ্ত অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, চর কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মোল্যা তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে স্ত্রী, ছেলে, নাতিদের নিয়ে বসবাস করছিলেন। সেখানে তিনি বাড়ীর সামনে স’মিল দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। সদরপুরের যাত্রাবাড়ী এলাকার জনৈক মৃত নয়ন তালুকদারের ছেলে সন্ত্রাসী হাতকাটা গিয়াস তালুকদার বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে চাঁদাদাবী করে আসছিল। চাহিদা মাফিক চাঁদা না দেওয়ায় গিয়াস তালুকদার নানা ফন্দি আটেন বাদশা মোল্যাকে জব্দ করতে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে গিয়াস তালুকদার একটি দলিল বানিয়ে বাদশা মোল্যার জায়গার কিছু অংশ দখলে নিতে যায়। স্থানীয়দের বাঁধার কারনে সে জায়গাটি দখলে নিতে পারেনি। এরপর বেপরোয়া হয়ে উঠে গিয়াস তালুকদার। বিভিন্ন সময় নানা ভাবে হেনস্তা করার পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করানো হয়। বাদশা মোল্যার জায়গা দখলে নিতে না পারায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পথ বেছে নেয় সে। জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা হয়। সেই মামলায় রায় যায় বাদশা মোল্যার পক্ষে। কিন্তু জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে গিয়াস তালুকদার। ধারাবাহিক প্রাননাশের হুমকি এবং ছেলে ও দুই নাতির ক্ষতির আশংকায় ২০১৭ সালে গ্রাম ছেড়ে চলে আসে বাদশা মোল্যা। ফরিদপুর শহরে এসে আশ্রয় নেয় মুন্সীবাজার এলাকায়। সেই সুযোগে গিয়াস তালুকদার জমিটি তার দখলে নিয়ে নেয়। 

সংবাদ সম্মেলনে বাদশা মোল্যা বলেন, তাকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গিয়াস তালুকদারের কারনে সে আজ গ্রামছাড়া। বর্তমানে ছেলে, ছেলের বৌ ও নাতিদের নিয়ে মানবেতর ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। 

বাদশা মোল্যার ছেলে মিরাজ মোল্যা বলেন, আমাদের সবকিছু ছিল। গিয়াসের কারনে আমরা এখন ঘরবাড়ী ছাড়া। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানী করছে। গ্রামে গেলে আমাদের মেরে ফেলা হবে। তার ভয়ে আমরা গ্রামে ফিরতে পারিনা। গিয়াস খুব ভংয়কর। তার বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৬টি মামলা রয়েছে। 

মিরাজ মোল্যা স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার দুইটি অবুঝ শিশু মোহনা ও নিরবকে নিয়ে আমি গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হই। গিয়াস তালুকদার আমাদের পরিবারের ক্ষতি করার পরিকল্পনা করে। সে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। প্রানভয়ে আমরা গ্রাম ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হই। আমার ছেলে ও মেয়েটি স্থানীয় স্কুলে পড়ালেখা করতো। হামলার ভয়ে তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তিন বছরের বেশী সময় ধরে আমরা গ্রামছাড়া। শহরে এসে কোন রকমে বেঁচে আছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাই। তিনি যেন প্রশাসন দিয়ে তদন্ত করে গিয়াস তালুকদারের বিচার করে। আমি শশুড়, স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে গ্রামে ফিরে যেতে চাই। আমার সন্তানদের পড়ালেখা করাতে চাই।

এদিকে, বাদশা মোল্যা অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে গিয়াস তালুকদার ও প্রানকৃষ্ণ ওরফে পিরা ঠাকুরের নেতৃত্বে বেশকিছু ব্যক্তি আমার জায়গায় থাকা দোকান ঘর ভেংগে ফেলে। সেখানে ইট বালু এনে জড়ো করে রাখা হয়েছে। যে কোন মুহুর্তে তারা সেখানে ঘর তুলবে বলে হুমকি দিয়েছে। দোকান ঘর ভাংচুর ও জায়গা দখলের খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ছবি তোলার পর সেখানে উপস্থিত হন গিয়াস তালুকদার ও পিরা ঠাকুর। এসময় পিরা ঠাকুর সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে পিরা ঠাকুর হুমকি দিয়ে বলে, নিউজ করলে দেখে নেওয়া হবে। ঘটনাস্থল থেকে চলে না গেলে মারধোরেরও হুমকি দেন তিনি। 

এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামানকে বিষয়টি অবহিত করলে সদরপুর থানার ওসিকে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেন।