সিংগাইরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ কৃষি সংবাদ /  মানিকগঞ্জ / 
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ। চলতি মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতাধীন এ উপজেলায় প্রনোদনা, পুনর্বাসন ও অন্যান্য মিলিয়ে সূর্যমুখী ফুল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হেক্টর জমিতে। গত বছর যা ছিল ২ হেক্টর। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানেই অনেক বেড়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। বিভিন্ন হাইব্রীড জাতের সূর্যমুখী প্রতি হেক্টর জমিতে বীজ উৎপাদন হবে আড়াই থেকে ৩ টন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালের দিকে দেশে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ শুরু হলেও গত বছর থেকে এ উপজেলায় শীতকালীন ও খরিপ-১ মৌসুমে সূর্যমুখীর আবাদ কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সূর্যের মতো দেখতে এ ফুল গাছ যা লম্বায় ৬-৭ ফুট হয়। গাছে ফুল হয় প্রায় ১০-১২ ইঞ্চির মতো। চার মাসে এ সূর্যমুখী ফোঁটা থেকে বীজ পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ওই ফুল সূর্যের দিকেই মুখ করে থাকে বলে মুলত এই ফুলের নামকরণ করা হয়েছে সূর্যমুখী। এই ফুলের বীজ হাঁস, মুরগী ও নানা জাতের পাখীর আদর্শ খাবার। অপরদিকে, এ বীজ থেকে উৎপাদন হয় পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল। গত বছর কৃষকেরা স্বল্প পরিসরে এর আবাদ করে লাভবান হওয়ায় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছর ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। সূর্যমুখী তেলে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কম থাকায় এ ভোজ্যতেলের চাহিদা বেশী এবং হার্টের রোগীদের জন্য উপকারী। এ ছাড়া এ তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি। এসব বিবেচনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখীর আবাদ ও বাড়ছে তেলের কদর।
উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের কমলনগর চকে গিয়ে দেখা গেছে, বলরাম দেড় বিঘা, নান্টু ২ বিঘা, কমল আড়াই বিঘা, নকুল বিশ্বাস দেড় বিঘা ও গনেশের দেড় বিঘাসহ অনেকেই জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছেন। এ সময় কথা হয় ওই গ্রামের কৃষক নৃপেন চন্দ্র রায় (৬৫) সঙ্গে । তিনি বলেন, গত বছর জমির আইলে স্বল্প পরিসরে সূর্যমুখীর আবাদ করেছিলাম। লাভজনক হওয়ায় এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছেন। তিনি জানান, কার্ত্তিক মাসে বীজ বপন করতে পারলে গাছ ভালো হতো এবং ফলনও বেশী হতো। আমরা অগ্রহায়ন মাসে শুরু করেছি তার পরও বিঘা প্রতি ৮-১০ মণ বীজ আশা করছি। প্রতি মণ বীজ ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবো। সূর্যমুখী চাষে রোগ বালাই কম হয় এবং সরিষার চাইতে এটা ফলন ভালো দেয়।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান সপন বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব ফলোআপ প্রদর্শনীর আওতায় ৩৩ শতাংশ করে ৪০ টি প্রদর্শনী প্লটে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। প্রায় ৪০ বছর আগে দেশে সূর্যমুখীর আবাদ শুরু হলেও গত বছর থেকে এ এলাকায় কৃষক পর্যায়ে বানিজ্যিকভাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ। তিনি আরো বলেন, এটা একটা তেল জাতীয় ফসল। এর গুণগতমান উৎকৃষ্ট হওয়ায় সম্প্রসারণে জোর চেষ্টা চলছে। এতে কৃষকেরা ও বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে।