Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই রাজনীতি

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা গেছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্সের একটি বিমানে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এর আগে গতবছর ২৯ ডিসেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার (সাবেক এ্যাপোলো) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২০ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। ২১ জানুয়ারি পুনরায় এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর নেয়া হয়।

তার দুই ছেলে আগেই মারা গেছেন। একমাত্র মেয়ে নরওয়েতে বসবাস করেন। তিনি পিতার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সিঙ্গাপুর আসবেন। তারপর মরহুমের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে সাননিউজকে জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ চতুর্থ।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাশ করে বৃটেনের লন্ডনস্থ লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-এ্যাট-ল' ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশুনা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ব্লান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন।

১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫র নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬ সালে তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।

১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৯ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া বগুড়া-৭ আসনের উপনির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ আসন থেকে মোট ৫বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল (পিএমজি) ছিলেন।