Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

খাগড়াছড়িতে ইউপি মেম্বর মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগ খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে ইউপি মেম্বর মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলায় ২নং পাতাছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বর মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মাতাল অবস্থায় এক মহিলাকে জোরপূর্বক ভাবে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। জেলার রামগড়ে এক গৃহবধূকে তার স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ীর সহায়তায় স্থানীয় ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ইউপি মেম্বারসহ স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ীর নামে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার (১০ মার্চ) ডাক্তারি পরীক্ষা ও ২২ধারায় জবানবন্দির জন্য ভিকটিমকে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদরে পাঠানো হয়েছে।

আর ধর্ষিত নারী মেম্বারের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে এলাকার বাহিরে পিতা মাতাকে নিয়ে। গৃহবধু নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার মেয়ে বলে জানা গেছে।

ধর্ষিতা নারীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, পাতাছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বর মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন যাবত আমার মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছে, এতে কোন সাড়া না পেয়ে সে মেয়ের স্বামীর সাথে বন্ধুত্ব করে, এক পর্যায় মহিউদ্দিন আমার মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। 

এবিষয়ে আমি বিচারের জন্য এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের জানালে তারা থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপর আমি একটি লিখিত এজাহার  ৪জনের নামে দায়ের করি।

তিনি আরো বলেন, এজাহারে ৪নং বিবাদি আমার মেয়ের স্বামী এবং ২-৩নং বিবাদি আমার মেয়ের শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি । বিগত ৫মাস পূর্বে আমার মেয়ের সাথে ৪নং বিবাদির সাথে ইসলামিক শরীয়া মোতাবেক বিবাহ হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে ২-৩-৪নং বিবাদি গন মেম্বারের কাছ থেকে সম্পত্তি পাওয়ার আসায় আমার মেয়েকে ১নং বিবাদির হাতে তুলে দেন আমার মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করার জন্য এবং একাধিক বার আমার মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছে মেম্বার। ৪নং বিবাদির অমানুষিক নির্যাতন ও জোরপূর্বক ইজ্জত নষ্ট করার সময় চিৎকার করলে ২-৩নং বিবাদি আমার মেয়েকে মারধর করে। কি কারণে সে চিৎকার করছে তাই, বিবাদিগন পরিকল্পিত ভাবে আমার মেয়েকে কলংকিত করার জন্য ২-৩-৪নং বিবাদি ১নং বিবাদি ওয়ার্ড মেম্বারের হাতে একাধিক বার ধর্ষণ করিয়েছে। তাছাড়া ২-৩-৪নং বিবাদি আমার মেয়েকে হুমকি দিয়েছে মেযের সাথে যা করেছে তা কাউকে না বলার জন্য যদি বলে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুম দিয়েছে। ২-৩-৪নং বিবাদিগনের বাড়িতে প্রতিদিন রাতে মদ জুয়াসহ খারাপ কাজের আসর বসতো ওয়ার্ড মেম্বার মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে। বিবাদিগন আমার মেযেকে দিয়ে খারাপ কাজের ব্যবসা করাতে চায়। পরে আমার মেয়ে এসকল অত্যাচারসহ অনৈতিক কর্মকান্ড সহ্য করতে না পেরে কলাবাড়ি থেকে  ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০২১তারিখে তার নানির বাড়িতে চলে আসলে বিষয়টি জানাজানি হয়। আমি খবর পেয়ে নোয়াখালী থেকে পাতাছড়ায় আসি এবং বিস্তারিত শুনে গত শনিবার মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি।

ধর্ষিতার পিতা আরো জানান, রামগড় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার এজহারে যাদের নাম রয়েছে ১/ মো: মহিউদ্দিন মেম্বার, পিতা মনতাজ মিয়া, ২/ ওমর ফারুক মজিদ। পিতা অজ্ঞাত, ৩/ নুরজাহান বেগম, স্বামী ওমর ফারুক, ৪/মো: ফয়েজ, পিতা ওমর ফারুক, সর্বজনের ঠিকানা পাতাছড়া কলাবাড়ি রামগড় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।

ধর্ষিতা জানান আমার স্বামী একজন মাদকসেবনকারী। মহিউদ্দিন আমার স্বামী শ্বশুর শ্বাশুরীর সাথে হাত করে বহুবার আমার ইজ্জত নষ্ট করেছে। এক পর্যায় ওদের নির্যাতন সইতে না পেরে আমি পাতাছড়া আমার নানার বাড়িতে চলে আসি।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার মহিউদ্দিন একই এলাকার জনৈক গৃহবধূকে বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণে ইউপি মেম্বার মহিউদ্দিনকে ভিকটিমের স্বামী মো: ফয়েজ, শ্বশুর ওমর ফারুক ও শাশুড়ী নুরজাহান বেগম সহায়তা করেন। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার লোভে এ কাজে মেম্বারকে তারা সহায়তা করে। গত ৫মাস আগে ফয়েজের সাথে ভিকটিমের বিয়ে হয়।

ভিকটিমের স্বজনরা অভিযোগ করেন, গত ৫ মার্চ তারা রামগড় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণে গড়িমসি করে। এক পর্যায়ে এজাহার গ্রহণ না করে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার মহিউদ্দিন জানান এঘটনা একটি কুচক্রিমহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো নাটক করেছে। আমি ঘটনার সাথে কোন ক্রমে জড়িত নই। আমার নিবার্চনীয় এলাকায় একটি মহল আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য এই কাজ করছে।

এ ব্যাপারে থানার ওসি (তদন্ত) মো: মনির হোসেন বলেন, এজাহারটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল এটি সঠিকভাবে লিখে আনার জন্য। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (৯ মার্চ) মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ইউপি মেম্বার মহি উদ্দিনসহ স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ীকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)/৩০ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর-০১, তারিখ ৯-৩-২০২১।

ওসি (তদন্ত) আরও বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত চলছে। অপরাধমূলে প্রমান সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২২ধারায় জবানবন্দি ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভিকটিমকে বুধবার (১০ মার্চ) খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।