Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

শাল্লায় শিলাবৃষ্টিতে ১৫‘শ হেক্টর বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, কৃষকরা শঙ্কিত কৃষি সংবাদসুনামগঞ্জ

শাল্লায় শিলাবৃষ্টিতে ১৫‘শ হেক্টর বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, কৃষকরা শঙ্কিত

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় ঘূর্নিঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে কৃষকদের বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাওরের এই জেলার মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে বোরো জমির ফসল। এই উৎপাদিত ফসল থেকে পুরো বছরের খাদ্যসংকট মিঠানোর পাশাপাশি হাটবাজার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মিঠানো হয়ে থাকে। কৃষকরা বছরের ছয়মাস অলস জীবনযাপন করলেও বছরের  ছয়মাস ধারদেনা করে টাকা এনে তাদের বোরো জমি আবাদ করে থাকেন। এই বোরো জমির ফলন ফলাতে আবারো পাকৃতিক দূযোর্গ কড়া বন্যার আশঙ্কা থেকেই যায়। এরই অংশ হিসেবে গত ৮ মার্চ রাতে সুনামগঞ্জে শাল্লা উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে কষ্টার্জিত সোনালী ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। বিােশস করে ধান ২৮ এর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই ফসলটা চৈত্রমাসের মাঝামাঝি সময়ে কৃষকরা পাকনা ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে ২৮ দানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। 

এই উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষি জমির ফসল। জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে শাল্লা উপজেলাটি হচ্ছে ভিন্ন। এই উপজেলাজুড়ে শুধু হাওর আর হাওর। অগ্রহায়ন মাসের শেষের দিকে আর পৌষ মাসের শুরু দিকেই কৃষকরা চারা রোপন করে হতাশায় থাকেন । আবার চৈত্র মাস থেকে পুরো বৈশাখ মাস পর্যন্ত সোনালী ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষকদের মধ্যে ঘূর্নিঝড়,কালবৈশাখীর ঝড় আর বন্যার আতংঙ্ক নিয়ে কৃষক কৃষানীরা দিন কাটাতেন। কারন যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকদের স্বপ্নই কেবল নষ্ট করে না, অর্থনীতির সচল চাকা মেরুদন্ড একেবারেই ভেঙে দেয়। আর গত সোমবার ৮ মার্চ ভোরে এমনই ঘটনা ঘটেছে শাল্লা উপজেলায়।

ধমকা ঝড়ো হাওয়া আর প্রচন্ড শিলাবৃষ্টিতে হাওরের বোরো ফসলেরব্যাপক  ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির ফলে ধানের শীস বের হওয়ার আগেই যেন শিলাবৃষ্টিতে মাঠজুড়ে সোজা হয়ে সারিবদ্ধভাবে দাড়াঁনো ধান গাছের পাতা একেবারেই মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ায় কৃষদের মাথায় হাত। এই ছয়টি মাস কিছু কিছু কৃষকরা সুদখোর মহাজনদের নিকট হতে চড়া সুদে টাকা ধার এনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বীজ রোপন ও জমিতে ফসল ফলিয়েছিলেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে আর মাত্র একটি মাস পরে তারা সোনালী ফসল কেটে তাদের গোলায় পুরো বছরের বোরো ধান তুলে আনন্দে দিন কাটাবেন। কিন্তু শিলাবৃষ্টি তাদের সেই আনন্দকে নিরানন্দ করে শিলাবৃষ্ঠিতে নষ্ট হওয়ায় সামনে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায় উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর এলাকায় ফসলী জমিতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসলী জমি ছাড়াও আনন্দপুর গ্রামের কয়েকটি ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। এর মধ্যে দক্ষিন হাটির বকুল দাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শিলাবৃষ্টিতে উনার কয়েকশ পোল্ট্রি মোরগ মারা গেছে বলে তিনি জানান।

এদিকে বাহাড়া ইউনিয়নের ভেড়াডহর গ্রামে প্রায় শতাধিক ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। আর অসহায় হয়ে পড়েছে এসব পরিবার।এছাড়াও উপজেলার সবকটি ইউনিয়নেই শিলাবৃষ্টির আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। উপজেলার ছায়ার হাওর, ভান্ডাবিল, ভেড়াডহর, উদগলবিল, খলারবন হাওরে দেখা যায় গর্ভায়িত বোরো ফসলের প্রায় ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে গত রাতের শিলাবৃষ্টিতে।

এ ব্যাপারে কৃষক সবুজ বৈষ্ণব জানান, ফাল্গুন মাসে এধরনের ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি আমি দেখিনি। গতরাতে শিলাবৃষ্টির ভয়াবহ তান্ডবে ফসলের মুখ দেখার আগেই এলাকার কৃষকের চেহারা মলিন হয়ে গেছে। কাচা ফসলের যে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সাধারন কৃষক।

এ ব্যাপারে হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বলেন, গতরাতের শিলাবৃষ্ঠিতে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপুরণীয়। তবে ধানের  গর্ভে ফসলে শিলাবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে তার সঠিকভাবে নিরুপন করলেই কেবল বুঝা যাবে এই শাল্লার হাওরে কৃষকের ফসলের কি পরিমান ক্ষতি সাধিত হয়েছে।  এরমধ্যে ৪, ৬, ৯ নং ওয়ার্ডসহ আনন্দপুরের দিকে ক্ষতির পরিমানটা বেশি হয়েছে।

শাল্লা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ১৫ শ হেক্টর বোরো জমির উপর মঙ্গলবার রাতের শিলাবৃষ্টি আঘাত করেছে। এরমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষি অফিসের প্রাপ্ত তথ্য নাকচ করেছ এলাকার কৃষকরা।

এ ব্যাপারে শাল্লা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মাসুদ পারভেজ জানান, ১৫শ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ শ হেক্টর ধানের ফসলী জমি নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ১৩৯ হেক্টর সবজি নষ্ট হয়েছে।

এ ব্যাপারে শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান বাহাড়া ইউনিয়নের কিছু অংশে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শাল্লা ইউনিয়নেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ খবর নিয়েছি।