Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

সুনামগঞ্জে ৫৪ পরিবারের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে দিলেন আদালত সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জে ৫৪ পরিবারের মাঝে শান্তি ফিরিয়ে দিলেন আদালত

সুনামগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় স্বামীকে কারাগারে না পাঠিয়ে পৃথক ৫৪ টি মামলা আপোষে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালতে বিচারক। তবে ১১টি মামলায় স্বামীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।  

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সোমবার দুপুরে ৬৫ টি পৃথক মামলার একসঙ্গে দেওয়া রায়ে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিঞ্জ বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন। আদেশ ঘোষনার পর স্বামী স্ত্রীকে আদাালত থেকে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায়। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে ৫৪ দম্পতিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছে। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, যৌতুক, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৬৫ জন নারী স্বামীর সংসার থেকে তাড়িয়ে দেয়ার কারণে নির্যাতিতরা তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথক পৃথকভাবে আদালতে মামলা করেছিলেন। দীর্ঘদিন এসব মামলার বিচার কাজ চলমান ছিল। নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা তাদের ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চিত এক জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অনিশ্চিত জীবন থেকে ৫৪ স্ত্রী তাদের স্বামীর এবং সন্তানরা তাদের যার যার বাবার পারিবারিক বলয়ে আবদ্ধ করে ব্যতিক্রমী আপোষের রায় দিলেন বিচারক। বিচারক উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁদের সন্তানদের এবং তাঁদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আগামীর দাম্পত্য জীবনে সম্প্রীতির বন্ধন নতুনভাবে সৃষ্টি করে দিতে এই  ৫৪ টি দম্পতিকে পারিবারিক পূনঃমিলনের ব্যবস্থা করে দিলেন। 

কিন্তু ১১টি পরিবারকে একত্রিত করতে সক্ষম না হওয়ায় এবং নির্যাতিত স্ত্রী ও তাঁদের সাক্ষীরা স্বামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ায় এবং স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১১ স্বামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

আপাষে নিষ্পত্তিকৃত মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষের স্বজনদের দাবি, সংসার থেকে বিতাড়িত ছোট ছোট সন্তানাদি নিয়ে ওই নারীদের জীবন ছিল চরম দুর্দশাগ্রস্ত। এসব দুঃখ বেদনা আর দীর্ঘশ্বাসে আদালত অঙ্গণ ভারি থাকত। শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে এই রায় ৫৪টি পরিবারকে বিশৃঙ্খলার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে দিল। কারণ এসব মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি না হলে ছোট ছোট শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠে ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিপতিত হত। এই রায় অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। 

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নান্টু রায় জানান, ‘আদালত পৃথক ৬৫ টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলার রায় প্রাদন করেছেন। ১১ টি মামলায় ১১ জন স্বামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে এবং বাকি ৫৪টি মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে আপোষের মাধ্যমে নিস্পত্তি করে দিয়েছেন। এর আগেও এই বিঞ্জ বিচারক তিনি যুগান্তকারী রায় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এভাবে যদি বিচারকার্য চলে এবং মামলার নিস্পত্তি হয় তাহলে বিচার ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ তাদের সুবিচার পাবেন বলে তিনি আশাবাদ জানান। 

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ নভেম্বর একই আদালতের বিচারক মো.জাকির হোসেন একদিনে পৃথক ৪৭ টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় ৪৭টি পরিবারকে আপোষের মাধ্যমে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এনিয়ে মোট ১০১ টি পরিবার ধংসের হাত থেকে রক্ষা হল।

এই বিভাগের অন্যান্য খবর