Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী ফসলি জমিতে চলছে অবাধে মাটি কাটা মানিকগঞ্জ

সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী ফসলি জমিতে চলছে অবাধে মাটি কাটা

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধলেশ্বরী নদী অপরিকল্পিতভাবে খননের পর নদী ভাঙ্গন রোধ, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন খনন কাজ বন্ধ করে দিলেও আবার শ্যালো মেশিন চালিত ড্রেজার লাগিয়ে  পুরোদমে চলছে নদী খননের কাজ। সেই সাথে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি থেকে অবাধে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে অনত্র বিক্রি করা হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। অসহায় হয়ে পড়েছে ফসলি জমির মালিকরা।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে, উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের চাড়াভাঙ্গা মৌজার নদীর ঘাট এলাকায় শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, নদী তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমিতে চলছে মাটি কাটার ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। নদী খননের আড়ালে প্রভাবশালীরা ফসলি জমি থেকে মাটি লুট করে টপ সয়েল নষ্ট করছেন। স্থানীয়রা কেউ এতে প্রতিবাদ কিংবা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। পাশাপাশি কারা এ মাটি কাটার সাথে জড়িত তাদের পরিচয়ও প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন তারা। ঘাটের উত্তর পাশে দেখা যায়, নদীতে শ্যালো মেশিন চালিত ড্রেজার বসিয়ে মাটি কেটে পাইপের মাধ্যমে ঘাটের অদূরে আলমগীরের মালিকানাধীন ৭৬ শতাংশ জমি ভরাট করা হচ্ছে। বিপরীতে ফুট প্রতি নেয়া হচ্ছে ৭ টাকা। একই কায়দায় বালু উত্তোলন করে র্পাশ্ববর্তী কালা মিয়ার প্রায় ১ বিঘা জমিও ভরাট করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর সীমানা সঠিকভাবে নির্ধারন না করে নদী তীরবর্তী ৩ ফসলি জমি থেকে এভাবে মাটি কেটে নেয়ায় আশপাশের জমির মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ইতিপূর্বে এভাবে মাটি কাটার ফলে গোলড়া এলাকায় তীরবর্তী ফসলি জমি ভেঙ্গে পড়ে। ভাঙ্গনরোধে নদী খনন বন্ধ রাখা হলেও পুনরায় নদী তীরবর্তী ফসলি জমি থেকে শুরু হয়েছে মাটি কেটে বিক্রি।

চাড়াভাঙ্গা গ্রামের প্রবাসী কহিনুরের পুত্র শামীম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দেড় বিঘা ফসলি জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। আমি ও আমার চাচা বাধা দিলে তারা উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। ওই গ্রামের আব্দুল মাজেদ খাঁন(৫২) বলেন, আমরা নদী তীরবর্তী জমির মালিকরা প্রভাশালীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছি। কারো কাছে এর প্রতিকার চেয়ে ফল পাচ্ছি না। আমাদের  নদী পাড়ের ৯ বিঘা ফসলি জমি নিয়ে আতংকে আছি। যে কোনো সময় ওই জমিতে ভেকু লাগিয়ে মাটি কেটে নেয়ার আশংকা করছেন তিনি। অনুরুপ অভিযোগ করেন ওই এলাকার আত্রব আলী (৭৫), মোয়াজ্জেম হোসেন (৫০) ও মিজানুর রহমানসহ অনেকেই।

বায়রা  ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড  মেম্বার মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও ফল পাচ্ছি না। নদী তীরবর্তী ফসলি জমিগুলো ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড পর্চা ও হাল নাগাদ খাজনা খারিজ থাকা সত্ত্বেও চর আজিমপুর গ্রামের হায়দার আলীর নেতৃত্বে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। 

মাটি কাটার সাথে জড়িত মোঃ হায়দার আলী বলেন, এমপির কোঠায় আমজাদের ৭০০ মিটার ও  বাশারের নামে ১ হাজার ২০০ মিটার নদী খননের কাজটি আমি করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদীর সীমানা ২২০ ফুট ধরে কাটতে গিয়ে কিছু ফসলি জমি পড়েছে। এতে ওই জমির চাষাবাদকারীরা মেনে নিতে পারছেন না।

বায়রা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মোঃ ঝিলন খাঁন বলেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বায়রা ইউনিয়ন পরিষদ  চেয়ারম্যান দেওয়ান জিন্নাহ লাঠু বলেন, খননের নামে ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রির বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। তার পরেও কিছুই হচ্ছে না। আমরা সকলেই অসহায়। 

এ প্রসঙ্গে, পানি উন্নয়ন বোর্ড মানিকগঞ্জের প্রধান প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন বলেন, মূল চ্যানেলের বাইরে গিয়ে মাটি কাটার কথা নয়। আমি বিষয়টি দেখছি। 

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, ইউনিয়ন কমিটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্মতি ছাড়া কোনো ভাবেই নদী খনন কাজ করা যাবে না। আমাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। নদী তীরবর্তী ফসলি জমি থেকে যদি ইটভাটা কিংবা অন্য কোথাও মাটি বিক্রি করা হয়ে থাকে, সেটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ জুলাই  নিলামের মাধ্যমে আমজাদ হোসেন, আবু নাঈম মোঃ বাশার, দেওয়ান মাহবুবুল আলম ও আবুল কালাম আজাদ ২ কোটি ১১ লাখ ঘনফুট বালু ডাম্পিং স্পটের ও নদী খননকৃত মাটি সরবরাহের অনুমতি পান। এ সুযোগে নিলাম প্রাপ্ত ব্যক্তির বাইরে একাধিক প্রতিষ্ঠান অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে মাটি নেয়ার কাজে ব্যবহ্নত  ট্রলিতে রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।