Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

'২০ এর বিষাদ এবং স্বাদ মতামত

'২০ এর বিষাদ এবং স্বাদ

শাবলু শাহাবউদ্দিন : শেষ হল ২০২০ সাল নামক সময়ের এক মহা অধ্যায়। ২০২০ এর পাওয়া না পাওয়া মিলে তৈরি হয়েছে ‘২০ এর বিষাদ এবং স্বাদ। স্বাদ এর চেয়ে বিষাদটি ছিল অনেক বড়, সমুদ্র তটে বালু রাশির মধ্যে ঝিনুকের মত।

মুজিব শতবর্ষ হিসেবে বছরটি হওয়ার কথা ছিল অনেক জমকালো কিন্তু ৮ মার্চে করোনাভাইরাস প্রথম সনাক্ত হয় বাংলাদেশের বুকে; করে দেয় সাইক্লোনের মত সব লণ্ডভণ্ড। সাজানো অর্থনীতি, গোছানো কর্মসংস্থান, পরিকল্পিত ভবিষ্যৎ ধুলোয় মিশিয়ে দেয় সর্বনাশা করোনা ভাইরাস। থোমকে দাঁড়ায় পৃথিবী, তারি মাঝে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতকে টেক্কা দেয়, বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ চতুর্থ তম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ বাংলাদেশ, বিষয়টি অনেক বড় প্রাপ্তি করোনা কালে বাংলাদেশের জন্য। তার সাথে বছর শেষেপদ্মা সেতু ছিল বড় চমক বাংলাদেশের জন্য। পদ্মা সেতু ২৯ জেলার জনগণের মুখে তুলে দিবে অন্ন, বিষয়টি চারটি খানি কথা নয় ! 

বছরের শুরুটা ছিল বাংলাদেশ জন্য চমকপ্রদ। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জয়। তরুণ প্রযুক্তিবিদ জাহিন রোহান জাতিসংঘের ১৭ জন তরুণ প্রযুক্তিবিদের একজন সমগ্র বিশ্ব দরবারে। ইলিশ উৎপানে বিশ্বের শীর্ষে বাংলাদেশছিলো শোনা ও দেখার মত সংবাদ।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে চালু, কর্ণফুলী টানেলের একটি টিউবের কাজ শেষ, ঢাকা দৃশ্যমান মেট্রো রেলের কাজ চলছে বেগমান গতিতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে সরকারি প্রণোদনা, রেমিটেনস ছিলো দেখার মত, মাথাপিছু আয় মোটামুটি বৃদ্ধি পেয়েছে, এইতো ২০২০ সালের দেখার মত প্রাপ্তি । ২০২০ সালের আরো ছিলো কিছু ছোট বড় স্বাদ, যা বলার চেয়ে না বলা ভালো ।

এইবার আসি ২০২০ সালের বিষাদ নিয়ে। বিষাদ টা শুরু হয় আয়োজন দিয়ে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ছিলো কত আয়োজন, করোনার জন্য সব আশায় ঘুরে বালি হয়ে যায় । শুরু হয় মহান ব্যক্তিদের বিদায় নেওয়ার পালা, আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেয় সি আর দত্ত, আবু ওসমান চৌধরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জামিনুল রেজা চৌধরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম, রফিকুল হক, চিত্র শিল্পী, মুর্তজা বশীর, শিক্ষাবিদ বুরহানুদ্দিন খান, নিলুফার মঞ্জুর, সাংবাদিক কামাল লোহানী, রাহাত খান, অভিনেতা আলী যাকের, আবদুল কাদের, লেখক রশীদ হায়দার ও আবুল হাসনাত, গায়ক এন্ড্রু কিশোর, রাজনীতিবিদ নাসিম, হেফাজতে আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সহ অসংখ্য গুনি ব্যক্তিত্ব ডাক্তার, পুলিশ এবং সমাজ সেবা ব্যক্তিদের হারিয়ে ফেলেছি এই করোনায়। 

১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে দিরে দিরে সমগ্র বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়া হয় লক ডাউন। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয় আমাদের। সরকারি পাটকল হয়ে যায় বন্ধ, বন্ধ হয় সরকারি, বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান, কর্মসংস্থানের অবস্থা হয়ে পরে নাজুক, হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে চলে যায় বেপথে, ধর্ষণ বৃদ্ধি পায় মাত্রাতিরিক্ত, আইন হয় মৃত্যুদণ্ডের, এই আইনে তেমন একটা ফল হয়েছে বলে আশা করা যাচ্ছে না । কিশোর অন্যায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে সামাজিক অপরাধচুরি ডাকাতি, পারিবারিক বন্ধন অনেকটাই হয়েছে নাজুক, তালাকের (বিবাহ বিচ্ছেদ) মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত হয়েও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক বন্ধন অতি নড়বড়ে করে দিয়ে গেছে করোনা, এখন চলছে, কে জানে কবে এখান থেকে আমরা উদ্ধার পাবো। অটোপাশ শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, শিক্ষার মান নিম্নমুখী। 

রাষ্ট্রীয় ভাবে কলঙ্কিত অধ্যায় বলা যেতে পারে বন্দুক যুদ্ধ নামক নাটকীয় কাহিনিকে। রাশেদ সিনহার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হয়তোবা একটু হলেও নড়েচড়ে বসেছে বিষয়টি।সিলেট পুলিশ কর্তৃক রায়হান হত্যা ছিল আমাদের জন্য জঘন্যতম সময়। তবে রাজনৈতিক ভাবে দেশটিতে ছিলো কঠিন শান্তিপূর্ণ অবস্থানে। মাঝে মাঝে ছাত্র রাজনৈতিক দল ছাড়া সব ছিলো নীরব। এখানে ছিলো একটু আশার আলো।

করোনায় সরকারি মালামাল যে যেমন করে পেরেছে আত্মসাৎ করেছে, সরকারি ত্রাণচাল চুরি ডাল চুরি তো নেহাত একটি সামাজিক কাজ হিসেবে পরিগণিত বলা যেতে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ছিল না দেখার মত অনেক বিশ্রী কাণ্ডকারখানা। অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক করেছে রমরমা করোনা ব্যবসায় বলা চলে। সাহেদ করিম এবং সাবরিনা আরিফের কথা না বললেই নয়। 

ক্যাসিনো কারবারি, ফরিদপুরে বরকতের নৈরাজ্য, ছাত্রলীগ নেতির অর্থ পাচার, নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর, হাজি সেলিমের সম্পদের পাহাড়, পি কে হালদারের অর্থ পাচার, সিকদার গ্রুপের মস্তানি, প্রবাসী মৃত্যু, বাজার নিয়ন্ত্রণ হীন, নির্মাণ কাজে আন্দাজে মাশুল ২৫৩১ কোটি টাকা, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে কিশোর পালানো, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সহ বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর, কাজ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার সংকট, রোহিঙ্গা সমস্যা, জনতা ব্যাংক বিদেশি শাখা থেকে ডলার চুরি, সম্পত্তি দখল, সংসদ আসলামের নদী দখল, কিশোর অপরাধের মামলা বৃদ্ধি দুগুণ, গোল্ডেন মনিরের টাকার পাহাড়, বিদ্যুতের দুর্ভোগে সিলেট, বাসে আগুন, লাইসেন্স বিহীন ২৯১৬ টি হাসপাতালে অবৈধ স্বাস্থ্য ব্যবসায়, জঙ্গি তত্পরতা, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অবৈধ বিদেশির অবৈধ কাজ কারবার, দেশজুড়ে প্রবল বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত, সোনার বাজার নিয়ন্ত্রণ হীন, নোয়াখালী ২১ সন্ত্রাসী বাহিনীর কাণ্ডকারখানা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে মোটামুটি ছিল দেখার মত বিশ্রী অনেক অঘটন।

আশা করি ২০২১ সালে আমাদের নতুন ভালো কিছু দিবে, স্মৃতির পাতা থেকে মুছে যাবে ২০২০ সালের সকল অঘটন। এই প্রত্যাশা আশা বেঁধে নতুন উদ্যমে দেশ গড়ার শপথ করি আমরা সকল বাংলাদেশ বাসি।

লিখেছেন : শাবলু শাহাবউদ্দিন 
শিক্ষার্থী 
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

এই বিভাগের অন্যান্য খবর