Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

মোরেলগঞ্জে ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমন, আতংকে ৪৫ হাজার কৃষক কৃষি সংবাদবাগেরহাট

মোরেলগঞ্জে ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমন, আতংকে ৪৫ হাজার কৃষক

চলতি আমন মৌসুমে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকার (বাদামি ঘাস ফড়িং) আক্রমন দেখা দিয়েছে। এ পোকা দমনে ব্যর্থ হলে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে দেখাদিবে শতভাগ ফসলহানি। ধান কাটার পূর্ব মুহুর্তে স্বপ্ন ছাই হবে ৪৫ হাজার কৃষকের। কৃষকদের অভিযোগ, কৃষিযন্ত্রপাতি ও কর্মকর্তা সংকটের কারনে কৃষক ও কৃষি খাত এখন হুমকির মুখে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত মাত্র ৮টি ইউনিয়নে পোকা লেগেছে। দমনের চেষ্টা চলছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, মোরেলগঞ্জের ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় মোট আমন ফসলি জমি রয়েছে ২৬ হাজার ৩১০ হেক্টর। উচ্চ ফলনশীল(উফশী) জাতের ধান ক্ষেত রয়েছে ৪ হাজার ৭৬০ হেক্টর। ৪৫ হাজার কৃষকের শ্রমের বিনিময়ে এখানে বাৎসরিক ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা রয়েছে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে নিশানবাড়িয়া, জিউধরা, বহরবুনিয়া, বারইখালী, পঞ্চকরণ, বণগ্রাম, হোগলাপাশা ও তেলিগাতী ইউনিয়নের প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকা আক্রমন করেছে। নদীর তীরবর্তী ও নীচু এলাকা হওয়ায় এখানকার অধিকাংশ জমিতে বছরে একবারই স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে।

কৃষিবিদদের মতে, ধান ক্ষেতে বাদামি ঘাষ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমন হলে সেখানে রাতারাতি গোটা ক্ষেত ধ্বংস হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ পোকা দল বেধে ধান গাছের রস খেয়ে ফেলে। গাছ শুকিয়ে ভেঙ্গে পড়ে। এ পোকার আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ ধান ক্ষেতের খড়, কুটা গরু মহিশেও খাবেনা। জীবানু মুক্ত করতে মাঠেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রন্ত ক্ষেত এ পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে পাওয়ার স্প্রেয়ার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো জরুরি। কিন্তু সরকারিভাবে মোরেলগঞ্জে এ ধরণের মেশিনের কোন সরবরাহ নেই। ব্যাক্তিগতভাবে কয়েকজন কৃষকের রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।  

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা পারভিন বলেন, কৃষকদেরকে সচেতন করে মাঠে কিটনাশক স্প্রে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। সকল ইউনিয়নে মাইকে সতর্ক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। তবে ৩৫জন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার পদ শূণ্য ও পর্যাপ্ত কৃষি যন্ত্রপাতি না থাকায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে বলেও এ কর্মকর্তা জানান।

গেল বছর ধান পাকার পূর্ব মুহুর্তে নিশানবাড়িয়া ও জিউধরা ইউনিয়নে এ পোকার আক্রমনে শতশত বিঘা জমি থেকে এক ছটাক ধানও বাড়ি নিতে পারেনি বহু কৃষক।

কারেন্ট পোকার (বাদামি ঘাস ফড়িং) কবল থেকে আমন ধান রক্ষার্থে করনীয় নির্ধারণের জন্য জরুরি সভা করেছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার বেলা ১১টা অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। প্রথান অতিথি ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. শাহ্-ই-আলম বাচ্চু। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক। কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা পারভিন, বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যকর্মীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। এ পোকা দমনে ব্যর্থ হলে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে শতভাগ ফসলহানির আশংকা রয়েছে। ধান কাটার পূর্ব মুহুর্তে স্বপ্ন ছাই হবে ৪৫ হাজার কৃষকের।