Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

তনুশ্রী রানী ঘোষের ছোট গল্প ‘আর্তনাদ’ শিল্প ও সাহিত্য

তনুশ্রী রানী ঘোষের ছোট গল্প ‘আর্তনাদ’

এ..এই.....কে তোমরা? আমার  পথ  আটকাচ্ছো  কেন! আমাকে যেতে দাও... সরো বলছি!

এভাবে আয়েশা তাদেরকে বলছে বারবার কিন্তু কে শুনে তার কথা। আয়েশা  আর্তনাদ করে, সজোরে চিৎকার করছে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে কিন্তু জানোয়ারগুলোর অট্টহাসি যেন সমস্তটা  গ্রাস করে নিয়েছে। চারিদিকে শুনসান রাস্তাটায় কেন জানি একটা কুকুরও নেই।আয়েশা চিৎকার করছে। হঠাৎ একখানা রুমাল পেছন থেকে এসে চেপে ধরল তার মুখটি।তাদের শক্তির কাছে সে বারবার পরাজিত হয় ।পাশের জানোয়ারদের অট্টহাসি যেন তার মনে আতঙ্কের এক বাঁধ বেঁধে দিচ্ছে...। হঠাৎ ই সমস্ত অন্ধকার আর্তনাদ স্তমিত হয়ে পড়ল সেই  বিভিষিকাময় রাত্রে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে আবু তাহেরের একমাত্র কন্যা আয়েশা।লেখা পড়ায় অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় সিদ্ধিরগঞ্জের সরকারি স্কুলে লেখাপড়া করছে। সবে মাত্র অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় সর্বোত্তম ফলাফল বের করে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। তাহের ও সায়মা খাতুন এর একমাত্র মেয়ে ছিল আয়েশা। আায়েশা ও তার বাবা-মার দু’চোখে ছিল স্বপ্নের শহর। হাজারো স্বপ্ন দেখতো এই মধ্যবিত্ত দুজন বাবা মা। মেয়েকে এক আদর্শ ডাক্তার বানাবে বলে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি ও করেছিল।স্বপ্ন ছিল আদর্শ ডাক্তার হয়ে বিনা খরচে গ্রামের গরীব অসহায়দেরকে চিকিৎসা দেবে।

ঘরের কাজেও আয়েশা তার বাবা-মাকে সাহায্য করত। হাসি-আনন্দ এর মধ্যদিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার সবসময় যেন ভরে থাকত।তাহের ছিল গ্রাম্য পোষ্ট অফিসের একজন সাধারণ কর্মচারী আর সায়মা গ্রামীণ কুটিরশিল্পে শাড়ী বুননের কাজ করা এক সাধারণ নারী।
একমাত্র মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার তাগিদেই দু’জন মিলে সংসারের হাল ধরেছেন। নিত্যকার মতো সেদিনও আয়েশা সকালের খাবার খেয়ে ও শ্রেণী বিরতির নাস্তা ব্যাগে নিয়ে ‘মা আসছি’ বলে বাসা থেকে বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়।

বিদ্যালয়ের ছুটির শেষে গ্রামের এক গণিত মাস্টার  আনাছ সাহেবের কাছে গণিত শিক্ষার জন্য যায়। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা প্রায় ধর-ধর হয়।নিত্যদিনের মতো সেদিনও
সে মাস্টার মশায়ের কাছ থেকে প্রাইভেট শেষে বাড়ী ফিরবে। একটু রাত হওয়ায় রাস্তায় একটা রিক্সাও দেখা মিলল না। তার মনে পড়লো যে আজকে চেয়ারম্যান সাবের বাড়িতে  এক বড়ধরনের মাহফিলের আয়োজন করেছে তাই লোককজন হয়তো ঐখানেই গিয়েছে।
তাই সে পায়ে হাঁটা শুরু করে। হঠাৎ এক ফাঁকা জায়গায় কয়েকটি যুবক  মুখে গামছা বেঁধে পথ আটকায় আয়েশার। সে চিৎকার করতে থাকে কিন্তু তা ঐ শয়তানদের অট্টহাশির মধ্যে মিলিয়ে যায় সেই অসহায় মেয়েটির আর্তনাদ। হঠাৎ পেছন থেকে একটা সাদা হাত এসে চেপে ধরে তার মুখ। ধীরে ধীরে আয়েশা এক জীবন্ত লাশের ন্যায় পড়ে থাকে। সময়ের ব্যবধানে আয়েশার জীবনের এক উজ্জ্বল প্রদীপ নিভে যায়। চোখ খুলতেই সে অনুভব করে তার অন্তর আত্মা যেন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে সমস্ত শরীর যেন কোন শকুনের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে, সে পড়ে আছে কোন এক ধান ক্ষেতের মাঝে। যতবার সে উঠবার চেষ্টা করেছে, ততবারই তার শরীর যেন অসাড় জড়বস্তুর ন্যায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। দুচোখ বেয়ে তার স্বপ্নগুলো যেন কান্না রূপে অশ্রু হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে আয়েশা আবারও এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো। তার সমস্ত স্বপ্নগুলো যেন ভূলণ্ঠিত হলো সেই গ্রামেরই মাটিতে।

তার সেই প্রতিবাদী আর্তনাদকে সেই রাত্রেই পাথর চাপা দিয়ে দিয়েছিল একদল মানুষরুপি জানোয়ারের দল।

বি. দ্র: এই ছোটগল্পটি সম্পুর্ন এক কল্পনালোকে লিখিত।
লেখক : তনুশ্রী রানী ঘোষ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা
ইংরেজি বিভাগ, ১২তম ব্যাচ।