Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

করোনা সংকট উপেক্ষা করে জবি’র বিভিন্ন বিভাগে পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি নোটিশ ক্যাম্পাস

করোনা সংকট উপেক্ষা করে জবি’র বিভিন্ন বিভাগে পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি নোটিশ

এহসানুল হক এহসান, জবি : বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা, ডিপার্টমেন্টের সীমাবদ্ধতা  ছাত্ররা মেনে নেয় কিন্তু ছাত্রদের সীমাবদ্ধতার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন চিন্তা না করেই পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি নোটিশ দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেক ছাত্রছাত্রীদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই, অনেকে টিউশন করে নিজের ব্যয় বহন করতো, তাদের টিউশন নেই। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহায্যের অনেক আশারবাণী শোনা গেলেও বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তির জন্য সময় নির্দিষ্ট করে নোটিশ দিয়েছে। 

১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যেও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নতুন সেমিস্টারে ভর্তির নোটিশ দেয়। কতটা বিবেকহীন হলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা করতে পারে।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ভর্তির বিষয়টা পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম আলী বলেন, করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামে অবস্থান করতেছে। আর্থিক সংকট ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য উর্ধ্বগতির কারণে, পাশাপাশি সম্প্রতি বন্যায় বিপর্যস্ত জনপদগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা নানা রকম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা। কেননা আমাদের নেই কোনো আবাসিক হল, তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মেসে থাকতে হয়। সে জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতিমাসে ক্যাম্পাস  বন্ধ থাকার পরেও মেস ভাড়া দিতে হচ্ছে। আর এই মেস ভাড়া পরিশোধ করতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা টিউশনি করে তাদের মাসিক খরচ বহন করে কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সেটাও বন্ধ। শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া সংকট নিরসনে বার বার আশ্বাস দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। উপরন্তু  নতুন সেমিষ্টারে ভর্তি ফি প্রদান করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট সহ বেশকিছু  ডিপার্টমেন্ট নোটিশ দিয়েছে।এমতাবস্থায় নতুন সেমিস্টারে ভর্তি ফি প্রদান  অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি মনে করি, করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন সেমিস্টারের ভর্তি ফি প্রদান করার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

উল্লেখ, ইতিমধ্যে করোনা সংকটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলতি সেমিস্টারের ভর্তি ফি মওকুফের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংকট মোকাবিলায় লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অসংখ্য মানুষের রুজিরোজগারে টান পড়ছে। উৎপাদনশীলতাও মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবার এই সংকটের বাইরে নয়। দীর্ঘ আট মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন চাকরি কিংবা টিউশন করে নিজেদের শিক্ষা খরচ বহন করতেন, এই সংকটের কারণে অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে এবং তাঁদের পরিবারগুলোর অবস্থা নাজুক। খুবই দুঃখজনকভাবে এরই মাঝে বিভিন্ন বিভাগ থেকে নতুন সেমিস্টারে ভর্তির নোটিশ দেওয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই সংকটময় মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই বাড়তি ব্যয় বহন করা প্রায় অসম্ভব।

এ ছাড়াও অত্যাধুনিক মেডিকেল সেন্টার নির্মাণ, সহজ শিক্ষা ঋণসহ শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূরণের আশ্বাস দিয়েছে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে তারা।

এদিকে ৭ অক্টোবর অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে করােনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার বিলম্ব ফি মওকুফ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সেমিস্টার ভর্তি নোটিশ এ-র বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, আমি যতদূর জানি অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে যাতে মাস্টার্সে শিক্ষা-কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে এইজন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নোটিশ দিয়েছে কিনা জানি না এবিষয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তর ভালো বলতে পারবে।
 
এ ব্যাপারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ড. ওহিদুজ্জামান কে একাধিক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।