Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

দুর্গাপুরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে অনাথ শিশুদের, কেউ এগিয়ে আসবেন কি ? নেত্রকোনা

দুর্গাপুরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে অনাথ শিশুদের, কেউ এগিয়ে আসবেন কি ?

‘‘মানুষ মানুষের জন্য-জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারে না’’ অথৈ, মৌমিতা, শ্রেয়া, প্রিয়াংকা, মুক্তা এমন অনেক অনাথ শিশুর বসবাস দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় গ্রামের মানবকল্যানকামী অনাথালয়ে। নানা ধর্ম-সম্প্রদায়ের এই শিশুদের কারো মা নেই, কারো বাবা। কারও বা পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। কিন্তু আশার কথা, এই অসহায়-দুঃখী শিশুরাও লেখাপড়া শিখছে। কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করছে। এক চির অনাথের ব্যক্তিগত উদ্যোগ-শ্রমে গড়ে ওঠা ‘অনাথআশ্রম’ এর কল্যাণে আর দশটি শিশুর মতোই বেড়ে উঠছে এরা। দেখছে দেশ গড়ার স্বপ্ন। ব্যতিক্রম এ প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘মানবকল্যাণকামী অনাথালয়’। এর প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়ন গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করায় অকুল সাগরে ভাসছে অনাথালয়ের শিশুরা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত সদস্যদের চাঁদায় চলতো অনাথালয়টি। তিনি মৃত্যু বরণ করায় অনাথ শিশুদের নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন আশ্রম মাতা নিশা দেবী।

এ নিয়ে শুক্রবার দুপুরে অনাথ মাতা নিশা দেবী যুগান্তর কে বলেন, তিন একর ৩৭ শতাংশ জমির ওপর সারিবাঁধা কয়েকটি আধাপাকা ও টিনশেড ঘর, বাগান, পুকুর এবং খোলা মাঠ নিয়ে গড়ে উঠেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। অনাথ নিবাস ছাড়াও সেখানে আছে-বৃদ্ধনিবাস, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের আশ্রয়কেন্দ্র, দাতব্য চিকিৎসালয়সহ আরও অনেক কিছু। ১৯৯৬ সালের ১১ মার্চ দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের নাথপাড়া গ্রামে ‘মানব কল্যাণকামী অনাথালয়’ এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে মানবকল্যাণকামী অনাথালয়ে আশ্রিত শিশু-কিশোরের সংখ্যা ১২০। এরা সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত ও উপেক্ষিত ওরাওঁ, হাজং, সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, সুইপার, মাহাতো, ত্রিপুরা, বুনোবসাক, কুমি, গারো, রাখাইন, কোচ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের। ওদের মধ্যে ৬২জন প্রাইমারি স্কুলে, ৪০ জন হাইস্কুলে, ১৪ জন কলেজে এবং ৪ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আশ্রম থেকেই বহন করা হয় এদের পড়ালেখার যাবতীয় খরচ। এখানে সপ্তাহের প্রতি শনিবারে বসে ফ্রি হোমিও চিকিৎসা ক্যাম্প। ডাঃ যোবায়ের হোসেন দুর্গাপুর থেকে প্রতি সপ্তাহে এসে বিনা পারিশ্রমিকে রোগিদের সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ’ রোগী হয় এখানে। প্রতি শীতে আশ্রমের পক্ষ থেকে এলাকার গরিবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রমজান মাসে ভিক্ষুকদের মাঝে ইফতার ও নতুন কাপড় বিতরণ, দুর্গাপূজাতেও গরিবদের মাঝে কাপড় বিতরণ করা হয়। জানুয়ারি মাসের ১ম সপ্তাহে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পূর্বধলা উপজেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দেয়া হয় কম্বল এবং সাদাছড়ি। আশ্রমের শিশুদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি পশুপালন, মৎস্যচাষ, কম্পিউটার, সবজি চাষ, বৈদ্যুতিক কাজ, ডেকোরেশন, সাউন্ড সিস্টেম প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া হয়। 

আশ্রমের নিজস্ব কোন আয়ের উৎস নেই। প্রতিমাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সরকারী অনুদান বলতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বছরে মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। তা দিয়ে বড়জোর দু’মাস চলে, এছাড়া আ-জীবন সদস্যদের পাঠানো চাঁদা দিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে শিশুরা। যুগান্তরের মাধ্যমে দেশের সহৃদয়বানদেরও সহযোগিতা চেয়েছেন অনাথ মাতা নিশা দেবী। ইতোমধ্যে স্থানীদের সহায়তায়, পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে আশ্রমকে সহায়তা করতে নানা ভাবে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঝুমা তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম, ঢাকাস্থ দুর্গাপুর সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ যারা এগিয়ে এসেছেন, আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

অনাথালয়ে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আয়ের উৎস সৃষ্টি। কিন্তু অর্থাভাবে তা করা যাচ্ছে না। মাত্র দুটি কম্পিউটার দিয়ে চলছে প্রশিক্ষণ। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। দরকার অন্তত ২০টি কম্পিউটার। টাকা না থাকায় বৃদ্ধাশ্রমের দালানের কাজ অসমাপ্ত হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিষ্ঠানটির চারপাশে আজও নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া যায়নি। কয়েকটি পোষা কুকুর নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছে। ছেলেমেয়ের পড়ার ঘর, ডায়নিং রুম, নিজস্ব পরিবহন প্রভৃতি। ভবিষ্যতে ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার করারও পরিকল্পনাও রয়েছে। অনাথমাতা নিশা দেবী, অনাথালয়ের উন্নতি কল্পে সহায়তা করার জন্য দেশের বৃত্তবান ব্যত্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।