তাজউদ্দীন মেডিকেল : অনুমোদন না নিয়ে আউটসোর্সিংয়ে চাকুরি, ৮৪ জনকে অব্যহতি গাজীপুর / 
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে কাজে নিয়োগ দেওয়ার খেসারত দিচ্ছে ৮৪জন আউটসোর্সিং কর্মচারী। প্রায় এক বছর চাকুরির পর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮৪জন আউটসোর্সিং কর্মচারীকে চাকুরি হতে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চাকুরি করা কালে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কর্মীদের বেতন কম দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে চাকুরিতে অন্তর্ভূক্তির আশায় চাকুরিচ্যুত কর্মীরা বর্তমানে বিনা বেতনে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে হাসপাতালে কাজ করছেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান জানান, সাবেক পরিচালক মো. আমীর হোসাইন রাহাত ২০১৯ সালে দুই দফায় ১৭৪ জনকে আউটসোর্সিংয়ে চাকুরির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পত্র পাঠান। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওই তালিকা অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই তালিকার এক কপি হাসপাতালেও পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দেয়ার আগেই তৎকালীণ পরিচালক ঠিকাদারের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে ১৭৪জনকে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রণালয় তাদের মধ্যে ৯০জন অনুমোদন দেয়। ফলে ওই পদে বাকী ৮৪জনই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনহীন রয়ে যায়। ওই নিয়োগের ৯ মাস পর ঘটনাটি জানার পর ৮৪জনকে চাকুরি হতে অব্যহতি দেন ওই কর্মকর্তা। গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে এবছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত তাদের বেতন দেয়া হয়। করোনাকালে বিশেষ বিবেচনায় তাদের ওই কর্মকালীন সময়ের বেতন ছাড় করা গেলেও তাদের চাকুরি অনুমোদন করা সম্ভব হয়নি। তাই তাদের (৮৪ জনকে) চাকুরি হতে অব্যাহতি দিতে হয়েছে। পরবর্তীতে ওই ৮৪জনসহ ১০২জনকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগের জন্য আবারো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা দেয়া হয়েছে। যা অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পরই ঠিকাদারের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগ দেয়া হবে।
এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় আউটসোর্সিংয়ের ১২জনকে রাজস্ব খাতে নিয়োগের জন্য পদ অনুমোদন দিলেও নির্ধারিত পরীক্ষা ও বাছাই প্রক্রিয়া ছাড়া তাদেরও নিয়োগ দেয়া যায়নি। ফলে ওই পদে ৮৪জনই অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদনহীন রয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মী জানান, কর্মী নিয়োগের পর বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য হাসপাতাল থেকে প্রত্যেক কর্মীর নামে তাদের মোবাইল নাম্বার যুক্ত করে আই.এফ.আইসি ব্যাংকে পৃথক পৃথক হিসাব খোলা হয় এবং সবাইকে হিসাব নাম্বার অনুযায়ী একটি করে চেক বই সরবরাহ করা হয়। কিন্তু মিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আমজাদ হোসেন পলাশ আউটসোর্সিং কর্মীদের নিকট থেকে চেক বইয়ের প্রতিটি পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে চেক বই তার হেফাজতে নিয়ে নেন। মাস শেষে ঠিকাদার ওইসব চেক ব্যাংকে জমা দিয়ে কর্মীদের বেতনের সব টাকা তুলে নেন।
ওই টাকা উত্তোলনের পর ব্যাংক থেকে প্রত্যেকের মোবাইলে (কল এলার্টে) কত টাকা বেতন উত্তোলিত হয়েছে তার ম্যাসেজ আসে। কিন্তু মোবাইলে যত টাকা ম্যাসেজ আসে ঠিকাদার ওই পরিমাণ টাকা তাদের পরিশোধ করেন না। তাদেরকে টাকা কম দেয়া হয়। এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে চাকুরীচ্যুতিসহ নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়। ওই ভয়ে তারা কারো কাছে লিখিত অভিযোগ করেন না, মুখ খুলেন না।
মিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আমজাদ হোসেন পলাশ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাকুরি হারিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলবে। এটা ধর্তব্য নয়। তারা নিজেরাই তাদের বেতন উত্তোলন করেন। তাদের বেতন কত আর কে কত টাকা পান সেটা তারা প্রত্যেকেই জানেন।
তবে হাসপাতালের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান বলেন, টাকা কম দেয়ার বিষয়ে তিনি কোন অভিযোগ পাননি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।