কালকিনিতে মাছচাষে লোকসানে পড়ে দিশেহাড়া ইউপি সদস্য বাবুল মাদারীপুর / 
অনেক স্বপ্ন ছিলো পরিবারের মুখে হাঁসি ফুটাবো, কিন্তু তা আর হলো না। অনেক আশা ছিলো নিজে-নিজে সাবলম্বী হবো। সব আজ বিফলে গেছে। আমার সব আসা নিয়তি কেড়ে নিয়ে গেল। আমি বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও থেকে লোন এনে বাড়ির পাশে একটি মাছের ঘের করেছিলাম। সেই ঘেরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছিলাম। প্রথম দিক দিয়ে মাছ বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়েছি। পরিবার নিয়ে ভালোই সুখে কেটেছে দিন। লাভকৃত টাকা দিয়ে আমি আগৈলঝাড়া উপজেলায় একটি মৎস্য আরতও করেছিলাম। সেখানে মাছ ধুমধাম বিক্রি হতো। আয়ের টাকা দিয়ে ঘেরের কর্মচারীদের বেতন দিতাম। এবং আমার সংসার চালাতাম। কিন্তু আমার ঘের এবারের বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে সব মাছ ভেসে গেছে। বাকি কিছু মাছ ছিলো তা আবার ভাইরাস জনিতে রোগে সব মড়ে গেছে। এখন আমি কিভাবে বাঁচবো। কিভাবে আমি দেনা শোধ করবো। আমার এখন আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ নেই। আমি এখন পথে বসে গেছি। আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি। আমার বাাঁচার আর কোন পথ নেই। কান্না জড়িত কন্ঠে এ কথাগুলো বললেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নবগ্রাম এলাকার দক্ষিন চলবল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল জয়ধর।
তিনি আরো বলেন, ছোটবেলা থেকে জীবনের এখন পর্যন্ত শুধুই কষ্ট করে গেলাম, কিন্তু ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হলো না। প্রথম দিক দিয়ে টুকটাক পাশাপািশ কৃষি কাজ করেই চলে সংসার। একদিন কাজ করতে না পারলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হত। বউ বাচ্চাদের মুখে ঠিকমত খাবার তুলে দিতে পারিনা। জমিও তেমন নেই। আমি দিনমজুর হওয়ায় কেউ সহযোগীতা করেনি। তাই ভাবছিলাম শেষেমেষে মাছ চাষে সফল হবো। কিন্তু তাও ভাগ্যে সহ্যয় হলোনা। এভাবেই সাংবাদিকের সঙ্গে মনের দুঃখ প্রকাশ করেন ৫০ বছর বয়সী সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল জয়ধর।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, উপজেলা কৃষি ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে লোন এনে বাবুল জয়ধর তার বাড়ির পাশের বিভিন্ন লোকজনের কাছে থেকে প্রায় ৫০ একর জমি লিজ নিয়ে একটি মাছের ঘের করেন। এ ঘেরে রুই, কাতল ও কইসহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ চাষ করেন। এবং এ ঘেরে বাবুল ও তার ছেলে মিলে দিনরাত পরিশ্রম করেন। ঘেরে প্রতিনিয়ত মাছের খাবার দিতেন। এবং ওষুধ দিয়ে পানি পরিস্কার রাখতেন। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজন কর্মচারী রাখেন মাছের ঘের পরিচালান করা জন্য। কিন্ত তা আর এখন কিছুই নেই। তিন দফা বন্যার পানিতে ঘেরের সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। কিছু মাছ অনেক কষ্ট করে ঘেরের মধ্যে আটকিয়ে রাখলেও পানি নষ্ট হয়ে তা আবার ভাইরাস বাহিত রোগে মাড়া গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষী বাবুল জয়ধর বলেন, বুলবুল, আমপান ও এখন আবার করোনার মত দূর্যোগ আমাকে শেষে করে দিয়ে গেছে। আমার মাছের ঘের ধ্বংশ হয়ে গেছে। এখন আমি কিভাবে ঘুরে দাড়াবো। দেনায় জর্জরিত হয়ে গেছি। দেনার টাকা কিভাবে দেব। এই অবস্থায় আমাকে কেউ কোন সহযোগীতা করছেনা। আমার এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সনদিপন মজুমদার বলেন, বাবুলকে সকল প্রকার সহযোগী করার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। সে আসলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, বাবুল জয়ধর আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে সকল প্রকার সহযোগীতা করা হবে।