Opu Hasnat

আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৪,

ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশ জারি আইন ও আদালত

ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশ জারি

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে মঙ্গলবার থেকেই এটি আইনে পরিণত হলো।

মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশে সই করেন বলে তার প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় এটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনে পরিণত হলো। এখন নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ অধিবেশন শুরু হলে এটি আইন আকারে পাস হবে।

গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনি যাচাই (ভেটিং) সাপেক্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ওই খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমান আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। এখন সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড'।

আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখার পাশাপাশি আরও দুটি সংশোধনী আনা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো যৌতুকের ঘটনায় মারধরের ক্ষেত্রে (ধারা ১১-এর গ) সাধারণ জখম হলে তা আপসযোগ্য হবে। এছাড়া, এই আইনের চিলড্রেন অ্যাক্ট-১৯৭৪-এর (ধারা ২০-এর ৭) পরিবর্তে শিশু আইন ২০১৩ প্রতিস্থাপিত হবে।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি এতদিন ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে অর্থ দণ্ডের বিধান।

এ আইনে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইন সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করা হচ্ছিল বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে।

মন্ত্রিসভায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপ-ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। সেখানে এতদিন বলা ছিল- যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে, তাহলে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্ধদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইন সংশোধনে ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ এর ১ (গ) ধারায় যৌতুকের জন্য সাধারণ জখম করার ঘটনা আপসযোগ্য ছিল না। সংশোধনে সেটা আপসযোগ্য করা হয়েছে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন।

এ আইনের মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য একশ আশি দিন (ছয় মাস) সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও বাস্তবে ওই সময়ের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব হয় না।

তাছাড়া ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের এক একটি ঘটনা কিছু দিন পর পর সারা দেশকে নাড়া দিয়ে গেলেও এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে মাত্র ৬০টি ঘটনায়।
 
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণ ছাড়া সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে অপরাধ আপসযোগ্য হবে। এছাড়া আগের আইনে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের রেফারেন্স ছিল। এখন সেখানে হবে ‘শিশু আইন, ২০১৩’।

আগের আইনের ৩২(১) বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিক্যাল পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে কিংবা সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোনো বেসরকারি হাসপাতালে সম্পন্ন করা যাইবে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘কোনো হাসপাতালে এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তির চিকিত্সার জন্য উপস্থিত করা হইলে, উক্ত হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিত্সক তাহার মেডিকেল পরীক্ষা অতিদ্রুত সম্পন্ন করিবে এবং উক্ত মেডিকেল পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করিবে এবং এইরূপ অপরাধ সংঘটনের বিষয়টি স্থানীয় থানাকে অবহিত করিবে।’

৩২ ধরায় সংশোধন এনে বলা হয়েছে, ‘অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা’র পরিবর্তে ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা’ করা হয়েছে। ‘অপরাধের শিকার ব্যক্তির’ পরিবর্তে করা হয়েছে ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া’।

সংশোধিত আইনে ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষা’ শিরোনামে ৩২(ক) নামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন সংঘঠিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধের শিকার ব্যক্তি মেডিকেল পরীক্ষা (ধারা-৩২ এর অধীন) ছাড়াও ওই ব্যক্তির সম্মতি থাকুক বা না থাকুক ‘ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৪’ এর বিধান অনুযায়ী ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।