Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

কোয়ালিটি এডুকেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশ মতামত

কোয়ালিটি এডুকেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশ

কোয়ালিটি এডুকেশন বলতে ওই শিক্ষা ব্যবস্থাকে বোঝায় যা মানুষকে আত্ম-চিন্তনের মাধ্যমে কর্মমুখী হিসেবে গড়ে তোলে। এই কোয়ালিটি এডুকেশনের কয়েকটি ফিচার (মাপকাঠি) রয়েছে। যেমন: জ্ঞান, স্কিল, মনোভাব, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ইত্যাদির উন্নয়ন ঘটানো। শুধু একাডেমিক শিক্ষার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না। বরং বাস্তবিক পর্যায়ের জ্ঞান আহরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৪ নম্বর গোলে কোয়ালিটি এডুকেশনের কথা বলা হয়েছে। আর এই কোয়ালিটি এডুকেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপ (দক্ষতা বৃদ্ধি) করতে হবে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি মাধ্যমে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তবিক পর্যায়ের জ্ঞান আহরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশকে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আরও বেশ জোর দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগ বেশ প্রশংসার দাবিদার।

এসডিজি-৪ (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) প্রকল্পে ২০৩০ সালের মধ্যে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে সরকার যথাসাধ্য চেষ্ঠা করে যাচ্ছে।কোয়ালিটি এডুকেশনের জন্য শিক্ষকদের সময়মত স্কুলে যাওয়া, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, ছাত্র-ছাত্রীদের মনযোগি করা, মিড-ডে মিল চালু, অবকাঠামো উন্নয়ন সবকিছুই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন বর্তমান সরকার।

বিনামূল্যে বই, উপবৃত্তি, স্কুল ফিডিংসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের সুফল মিলছে এখন। বিশেষ করে বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাওয়ায় শিক্ষার প্রতি সবার আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে বেড়েছে মেয়েদের আগ্রহ। এ কারণে কমেছে বাল্যবিয়ে। কমছে ঝরে পড়াও। শিক্ষা খাতে এত উন্নতির কারণেই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সামনের চ্যালেঞ্জ এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন। 

এইচএসসি পরীক্ষা, কলেজে ভর্তি ও ক্লাস শুরু হওয়ার আগে নির্ধারিত কোনো সময় ছিল না। পরীক্ষার ফল বের হতে তিন-চার মাস লাগত। এভাবে একটি বছর নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু এখন সব কিছুতেই ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা। কয়েক বছর ধরে একই সময়ে পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছে। প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর নিয়মিতই ৬০ দিনের মধ্যেই দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফল। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হয় ১ জানুয়ারি। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ক্লাস শুরু হয় ১ জুলাই।

একসময় স্কুল ভবন, কলেজ ভবন ছিল মলিন চেহারার। একই ধরনের নকশা, একই ধরনের নির্মাণ। কিন্তু এখনচমৎকার নকশায় নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ভবন। শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলভবন, কলেজভবন দেখেই আকৃষ্ট হয় সেভাবে ভবন নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যেও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মাদ্রাসা কাঠামোতে বিজ্ঞান ও কম্পিউটার শাখা চালু করা হয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে যাচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর ও ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। গবেষণা খাতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রহণীয় উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর সেশন জটের নজির দেখা যায় না। মসৃণ গতিতে চলছে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন আর সেশন জট নেই বললেই চলে। নিয়মিত ভর্তি পরীক্ষা, ক্লাস, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন হলো শিক্ষায় কিছু দৃশ্যমান সাফল্য। এই অর্জন এখন সারা বিশ্বে স্বীকৃত। আফ্রিকা বা অনগ্রসর দেশগুলো যখন শিক্ষায় ছেলেমেয়ের সমতা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্তরেই ছেলেমেয়ের সেই সমতা অর্জন করে ফেলেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, এখন প্রাথমিকে ছাত্রীদের হার প্রায় ৫১ শতাংশ, যা মাধ্যমিকে প্রায় ৫৪ শতাংশ। এটি বিশ্বে নজর কেড়েছে। আশার বিষয়, এই অর্জনের ধারা অব্যাহত আছে। এখন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়ছে।

ইনশাআল্লাহ, করোনা মহামারীর এ সময়টা নিশ্চয়ই কেটে যাবে একদিন। আমাদের বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী মুখর হয়ে উঠবে প্রতিটি ক্যাম্পাস। ইতিমধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে সংসদ টিভিতে, অনলাইনেপুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন সকল স্তরের শিক্ষকবৃন্দ।  

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’র সরকার কোয়ালিটি শিক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বস্তরে কাজ করে যাচ্ছেন। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে কোয়ালিটি শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা আমাদের অর্জিত হবেই-ইনশাআল্লাহ।

লেখক : এস,এম, হাবিব উল্লাহ (হিরু)
প্রভাষক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
রাউজান সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম। 

এই বিভাগের অন্যান্য খবর