Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

নড়াইলের মাউলি ইউনিয়নে টাকা ছাড়া বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ড হয় না ! নড়াইল

নড়াইলের মাউলি ইউনিয়নে টাকা ছাড়া বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ড হয় না !

নড়াইলে উৎকোচের বিনিময়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই বয়স্ক ভাতান কার্ড পেয়েছেন। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য নির্ধারিত বয়সের কম হলেও ঘুষের প্রভাবে তারা নির্বিঘ্নে ভাতা তুলছেন। ওই দম্পতির বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার মাউলি ইউনিয়নের মহাজন গ্রামে। তাদের মধ্যে স্বামী রঞ্জন বিশ্বাসের বয়স ৫৮ বছর। আর তাঁর স্ত্রী যমুনা বিশ্বাসের বয়স ৪৫। দুজনই পাচ্ছেন বয়স্কভাতা। অথচ বয়স্কভাতা পেতে পুরুষের বয়স কমপক্ষে হতে হবে ৬৫ এবং নারীর ৬২ বছর। তাঁদের এখন আশঙ্কা ওই উপকারভোগীর তালিকা থেকে তাঁরা বাদ পড়বেন। বিপদেও পড়তে পারেন। এমন আশঙ্কায় উৎকোচের বিনিময়ে যাঁরা ভাতা পেতে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যমুনা বিশ্বাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। দেড় বছর আগে থেকে তাঁরা ভাতাভোগী হয়েছেন। তিন কিস্তিতে এ পর্যন্ত ভাতা পেয়েছেন ৯ হাজার টাকা করে। অনিয়ম করে ওই দম্পতির এই সুবিধা পাইয়ে দিতে তাঁদের কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়া হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। 

গত ২৭ সেপ্টেম্বর করা ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, মহাজন গ্রামের জাহাঙ্গীর খান ৪২ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে ওই দম্পতিকে বয়স্কভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। যমুনা বিশ্বাস জানান, জাহাঙ্গীর খানের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভালো সম্পর্ক। তিনি ৪২ হাজার টাকা নিয়ে ওই ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর খান তখন বলেছিলেন এ কার্ড কোনদিনই বাদ হবে না।  যমুনা বিশ্বাস বলেন, তারা গরিব মানুষ। পাঠকাঠি বিক্রি ও জাল বুনে টাকা রোজগার করেছেন আর সেই সাথে ২০ হাজার টাকা সুদে এনে ৪২ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সুদে দেনা এখনও পরিশোধ করতে পারেননি। তাদের মত অনেকেই ছাগল-গরু বিক্রি করে ও সুদে টাকা এনে ভাতার কার্ড করিছেন।’

জাহাঙ্গীর খান মাউলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ সঠিক নয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, মাউলি ইউনিয়নে প্রায় ৩ শ ব্যক্তি অবৈধভাবে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও তাঁদের সঙ্গে সখ্যতা আছে এমন লোকজন টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে এসব ভাতার বই করে দিয়েছেন। বয়স হয়নি, তাঁরা বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও প্রতিবন্ধী নন, তাঁরা বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এদিকে টাকা দিতে না পারায় এসব ভাতা পাওয়ার উপযুক্তরা বঞ্চিত হচ্ছেন। 

এ ব্যাপারে মহাজন গ্রামের বাসিন্দা নড়াগাতী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি উত্তম কুমার সাহা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বৈধ বা অবৈধ যা-ই হোক, মাউলি ইউনিয়নে মোটা অংকের টাকা ছাড়া ভাতা বই হয় না।’

এসব ভাতা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে হয়। কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিমাসে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা ৫০০ টাকা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ টাকা দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি’র তালিকা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষে সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে এসব ভাতা বই করে দেওয়া হয়। অভিযোগে জানা গেছে, মহাজন গ্রামের গুরুরানী বিশ্বাস (৫৫) বিধবা না হয়েও পাচ্ছেন বিধবা ভাতা। ওই গ্রামের খোকন দাস (৩৭) ও তাঁর ভায়রা নৃপেন সাহা (৫০) পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা। গুরুরানী বিশ্বাস বলেন, ‘একজন মেম্বার ১২ হাজার টাকা নিয়ে বিধবা ভাতা করে দিয়েছে। তিনি বিধবা নন। বয়স্ক ভাতা করে দিতে চেয়ে তাকে বিধবা ভাতা করে দেয়া হয়েছে। সুদে টাকা এনে দিয়ে তিনি কার্ড পেয়েছেন। খোকন দাস বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সের আগে বয়স্ক ভাতা হয় না তা আগে জানতেন না। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের (মহাজন গ্রাম) ইউপি সদস্য সুজল ঠাকুর বলেন, ‘মাউলি ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী আছেন প্রায় ১ হাজার ৩শ । এর মধ্যে অন্তত ৩ শ অবৈধ। এসব অনিয়ম করে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে। 

মাউলি ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘যতটা অনিয়ম দুর্নীতির কথা শুনেছেন, ততটা সত্য নয়। কিছু ভুল-ক্রটি থাকতে পারে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা সমাজসেবা দপ্তর থেকে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।