গণধর্ষণ মামলার আসামিদের পক্ষে আইনি সহায়তা না দিতে নারী সমাজের অনুরোধ খাগড়াছড়ি / 
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে বলপাইয়া আদামে প্রতিবন্ধী নারীর আলোচিত দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও গণধর্ষণের মামলার প্রধান (মূলহোতা) আসামি মো: আমিন ওরফে নুরুল আমিনের (৪০) মামলায় দুই দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বিজ্ঞ আদালত। পুলিশ পৃথক দুই মামলায় ৭দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট সেঁজুতি জান্নাত’র আদালতে দীর্ঘ শুনানীর পর দুই মামলায় এক দিন করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। এ সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জেলাতে প্রতিবন্ধী নারীকে অমানবিক গণধর্ষণ ও দুধর্ষ ডাকাতির মামলার আসামিদের আইনি সহায়তা না দিতে খাগড়াছড়ি বার এসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছে নারী সমাজ। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্কের নেতৃবৃন্দ খাগড়াছড়ি জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট আশুতোষ চাকমা ও সাধারণ সম্পাদকের আক্তার উদ্দিন মামুনের কাছে লিখিতভাবে এ অনুরোধ জানান। জেলাতে ডাকাতির পর নারীকে গণধর্ষণ মামলার আসামিদের পক্ষে আইনি সহায়তা না করতে বার এসোসিয়েশনের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছে উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্ক।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়াক ও নাগরিক সমাজ এ সময় নারী নেত্রী লালসা চাকমা, শাপলা ত্রিপুরা, মণিষা চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। লিখিত আবেদনে আসামিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করে বলা হয়, ধর্ষণ মামলার আসামীরা আইনের ফাঁক-ফোঁকর গলে যাতে বের হতে না পারে সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়া সিলেটের ঘটনায় আইনজীবিরা যেভাবে বিবাদী পক্ষের লোকদের আইনি সহয়তা না দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সেভাবে খাগড়াছড়ির ধর্ষণ মামলার আসামিরা যাতে উকিলদের সহায়তা না দিতে আহবান জানান।
খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: গোলাম আপছার রিমান্ড মঞ্জুরের কথা নিশ্চিত করে বলেন, নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ ৭টি মামলা রয়েছে। সংঘটিত নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, গণধর্ষণের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়াক ও নাগরিক সমাজ।
গত বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াই টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলার বলপাইয়া আদাম এলাকায় বিন্দু লাল চাকমার বাড়িতে দুর্র্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ৯জন সদস্যের ডাকাত দলের দুর্বৃত্ত সদস্যরা ঘরের নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, মোবাইল লুট করার পাশাপাশি একটি কক্ষে নিয়ে তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী (২৬)কে বেঁধে রেখে উপর্যপরি মর্মান্তিক ভাবে ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় ধর্ষিতা মা ২৪শে সেপ্টেম্বর বিকেলে ৯জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ডাকাতির ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেন। পুলিশ মাত্র ৪৮ঘন্টার মধ্যে আসামিদের চিহিৃত করে চট্টগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭জন আসামিকে গ্রেফতার ও ডাকাতির মালামালসহ ডাকাতির সময় ব্যবহৃত সিএনজি অটো রিক্সাটি উদ্বার করেছে পুলিশ।
গত ২৭শে সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: মোরশেদুল আলম, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সামিউল আলম ও সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী রিয়াদের আদালত ৬জন আসামি ১৬৪ধারায় জবানবন্দী দিলেও মামলার প্রধান(মূলহোতা) আসামি মো: আমিন ওরফে নুরুল আমিন জবানবন্দী দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এর আগে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর ডাকাতি এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের পৃথক দু’টি মামলায় আল আমিনকে ৭দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। বুধবার রিমান্ড শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছিল বিজ্ঞ আদালত।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোলাম আবছার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আল-আমিন খাগড়াছড়ির রামগড়ের তৈচালা এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আল আমিনসহ জড়িত ৭জনকে আটক করেছে পুলিশ। এরমধ্যে ৬জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনার মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত আল-আমিনকে সর্বশেষ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।