Opu Hasnat

আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৪,

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানে এসিড নিক্ষেপ কুমিল্লা

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানে এসিড নিক্ষেপ

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (কুমেক) বার্ন ইউনিটে এসিডে পোড়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ১৩ বছর বয়সী এক তরুণী। বার্নিশ মিস্ত্রি অসুস্থ বাবা মোসলেম মিয়ার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না মেয়েকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা থেকে ঢাকা নেওয়া। গত বৃহস্পতিবার  রাতে জানালা দিয়ে ছোঁড়া বোতলভর্তি এসিডে মেয়েটির শরীরের ৪০ ভাগ পুড়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া গ্রামে। খাদিজার পরিবারের সন্দেহ, স্থানীয় জাহিদ ও আপন নামে দুই তরুণ তার মেয়ের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, আপন ও জাহিদ পৃথকভাবে খাদিজাকে একাধিকবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। এমনকি বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাবও দেয় তারা। ওই দুই তরুণ সম্পর্কে চাচা ও জেঠাতো ভাই। তাদের বাড়ি ভোলা জেলায়। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া গ্রামে থেকে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করে। তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় রাতে জানালা দিয়ে এসিড নিক্ষেপ করতে পারে বলেন খাদিজার পরিবারের ধারণা।

মেয়ের শরীরে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় বাবা মোসলেম মিয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে হারুন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার খাদিজার পরিবারের সন্দেহের তালিকায় আপন ও জাহিদ নামে দুই তরুণ রয়েছে। তবে আমরা মামলার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে হারুন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছি। সন্দেহের তালিকায় থাকা ওই দুই তরুণকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

খাদিজার বাবা মোসলেম মিয়া জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার নয়নপুর গ্রামে। বাড়িতে সম্পত্তি না থাকায় তারা কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া গ্রামের হোসেন মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। শরীরে বিভিন্ন রোগ তার। বার্নিশের কাজ করে কোনোভাবে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে খাদিজা জানালার পাশে বসে মোবাইলে গান শুনছিল। ঠিক ওই মুহূর্তে দুই থেকে তিন জন ব্যক্তি জানালা দিয়ে বোতলভর্তি এসিড তার মেয়ে খাদিজার শরীরে নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। তখন তাকে উদ্ধার করে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তিনি। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসকরা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন তাকে।

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে এখানকার চিকিৎসকরা বলছেন মেয়েকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমার আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।’

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. রাসেল খান বলেন, ‘এসিডে ঝলসে গেছে মেয়েটির শরীরের প্রায় ৪৫/৫০ ভাগ। ৪০ ভাগ অতিক্রম করলেই আমরা কোনও পুড়ে যাওয়া রোগীকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখি না। কারণ, আমাদের আইসিইউ নেই। শরীরের অতিরিক্ত স্থান এবং শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়া রোগীদের জন্য আইসিইউ খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। তখন ওই সেবা দিতে না পারলে পোড়া রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।’