Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

মাদ্রাসা থেকে আল্লামা শফীর পদত্যাগ চট্টগ্রাম

মাদ্রাসা থেকে আল্লামা শফীর পদত্যাগ

বিক্ষোভের মুখে এবার হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। বুধবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া ছাত্রদের বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসে মাদ্রাসার মজলিশে শূরা কমিটি। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলা ওই বৈঠকে পদত্যাগ করেন শাহ আহমদ শফী।

মজলিশে শূরা সদস্য আল্লামা সালাউদ্দিন নানুপুরী বলেন, অসুস্থতার কারণে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তিনি তার দায়িত্ব (মহাপরিচালক) শূরার ওপর অর্পণ করেছেন। শূরা সদস্যরা পরবর্তীকালে মহাপরিচালকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বৈঠকে আরও দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। হুজুর জীবিত থাকা অবস্থায় সবসময় দারুল উলুমের উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন।  মাদ্রাসার শিক্ষক আল্লামা নুরুল ইসলাম জাদিদকে আজীবনে জন্য মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীকে হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।  বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, আর কোনো ছাত্রকে হয়রানি করা হবে না।

সভায় শূরা সদস্যদের মধ্যে মেখল মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নোমান ফয়েজী, নানুপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী ও মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা আহমেদ দিদার, মাওলানা ফোরকান আহমেদ, মাওলানা বশির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে মাদ্রাসার শিক্ষক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীকে বহিষ্কারসহ বেশ কয়েক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্ররা। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ছাত্রদের বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। আল্লামা শাহ আহমদ শফী পদত্যাগের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। ছাত্ররা এখন তাদের অবরোধ তুলে নিয়েছে।

বৈঠক শেষে মাদ্রাসার মজলিশে শূরার সদস্য মাওলানা নোমান ফরায়েজি মাইকে শূরার সিদ্ধান্ত পাঠ করে শোনান। এ সময় তিনি বলেন, মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বুধবার রাতে তার কক্ষে মজলিশে শূরার এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে তিনি মাইকে ঘোষণা দেন। তিনটি সিদ্ধান্ত হলো, মাদ্রাসার যাবতীয় কার্যক্রম থেকে আনাস মাদানিকে অব্যাহতি।  অধ্যয়নরত ছাত্রদের কাউকে কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর মজলিশে শূরার বৈঠক ডেকে বাকি সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন।

ছাত্রদের দাবিগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো- মাওলানা আনাস মাদানীকে অনতিবিলম্বে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করতে হবে; ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সুবিধা প্রদান ও সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে; আল্লামা আহমদ শফী অক্ষম হওয়ায় মহাপরিচালকের পদ থেকে সম্মানজনকভাবে অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানাতে হবে; উস্তাদদের পূর্ণ অধিকার ও নিয়োগ-বিয়োগকে শূরার কাছে পূর্ণ ন্যস্ত করতে হবে; বিগত শূরার হক্কানি আলেমদেরকে পুনর্বহাল ও বিতর্কিত সদস্যদের পদচ্যুত করতে হবে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ‘বড় মাদ্রাসা’ নামে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম বড় এবং পুরনো কওমি মাদ্রাসা। সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়ন করে।

আহমদ শফী কয়েক দশক ধরে মাদ্রাসাটির মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদে ছিলেন। মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালকের পদে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ শফীর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে কয়েক মাস আগে বাবুনগরীর সঙ্গে শফী সমর্থকদের দ্বন্দ্ব বাধে। তাতে বাবুনগরীকে সরিয়ে দিয়ে শফী সমর্থকরা টিকে গেলেও তার রেশ থেকে গিয়েছিল।