কুষ্টিয়ায় পৃথক হত্যা মামলায় যাবজ্জীবনসহ তিন আসামীর দণ্ড কুষ্টিয়া / 
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার প্রবাসীর স্ত্রী’র সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ও ব্লাক মেইলের জেরে রনি (৩০) নামের যুবক হত্যা মামলায় সজিব হোসেন (৩২) ও সীমা খাতুন (২৫) নামের দেবর-ভাবী’র যাবজ্জীবন এবং কুষ্টিয়া মডেল থানার কলেজ ছাত্র আসলান জেলিন হত্যার দায়ে তুষার আহম্মেদ ওরফে কানা তুষার (১৬)র ১০বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অরূপ কুমার গোস্বামী এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের বিচারক মুন্সী মো: মশিয়ার রহমান জনাকীর্ণ আদালতে আসামীদ্বয়ের উপপস্থিতিতে এই রায় ঘোষনা করেন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলেন- দৌলতপুর উপজেলার হায়দারের চর গ্রামের আলমগীর হোসেনর ছেলে মোঃ সজিব হোসেন (৩২) এবং তার বড় ভাবী প্রবাসী আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী সীমা খাতুন (২৫)।
কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার এনএস রোডস্থ করিম মঞ্জিলের বাসিন্দা ফরিদ আহম্মেদ’র ছেলে তুষার আহম্মেদ ওরফে কানা তুষার (১৬)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী সন্ধা ৭টায় দৌলতপুর উপজেলার হায়দারের চর গ্রামের নাহারুল ইসলামের ছেলে রনি (৩০) নিজ বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী সোনাইকুন্ডি বাজারে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর ০১ ফেব্রুয়ারী বেলা সাড়ে ৩টায় উপজেলার ৬নং চিলমারি ইউনিয়নের উদয়নগরস্থ পদ্মা নদীর চর থেকে নিহত যুবক রনির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই এঘটনায় নিহতের পিতা নাহারুল ইসলাম বাদি হয়ে দৌলতপুর থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত শেষে ৩০/০৯/২০১ তারিখে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ। অভিযোগ পত্র নং ৩২০। সেখানে তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রবাসী আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী সীমা খাতুনের সাথে যুবক রনি সম্পর্ক তৈরী হয় যা দৈহিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়। রনি তাদের দুজনের মধ্যে গড়ে উঠা সম্পর্কের বিষয়গুলি মোবাইলে ধারণ করে গৃহবধু সীমা খাতুনকে ব্লাক মেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকে। এক পর্যায়ে রনির ডিমান্ড বাড়তে থাকে, এতে ক্ষুব্ধ সীমা খাতুন বিষয়টি তার দেবর সজিব হোসেন’কে খুলে বলেন এবং সাহায্য চায়। পরে ভাবী-দেবরের যোগসাজসে পরিকল্পিত ভাবে যুবক রনিকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কৌশুলী (পিপি) এ্যাড, অনুপ কুমার নন্দী সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দৌলতপুর থানার প্রতিবেশী যুবক রনি হত্যা মামলার আসামী সজিব হোসেন ও সীমা খাতুনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে চার্জ গঠন পূর্বক দীর্ঘ স্বাক্ষ্য শুনানী শেষে অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমানিত হওয়ায় পেনাল কোড দ:বি ৩০২/১০৯ধারায় দোষী প্রমানিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত আসমীদ্বয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১বছর সাজার আদেশ দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন।
অন্যদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের সরকারী কৌশুলী এ্যাড. আব্দুল হালিম জানান, ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টায় কুষ্টিয়া শহরের হেমচন্দ্র লেনের বাসিন্দা মাহবুব ইসলামের ছেলে সরকারী কলেজ একাদশ শেনীর ছাত্র আসলান জেলিন (১৮)কে কলেজ থেকে ডেকে নিয়ে আসামী তুষার আহম্মেদ ওরফে কানা তুষার শহরের বাবুর আলী গেটের সন্নিকটে তুহিন কনফেকশনারীর পিছনে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে। ঘটনাস্থল থেকে আসলান জেলিনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপতালের জরুরী বিভাগের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় নিহতের পিতার করা হত্যা মামলার দীর্ঘ স্বাক্ষ্য শুনানী শেষে আসামী তুষার আহম্মেদ ওরফে কানা তুষারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমানিত হওয়ায় পেনাল কোডের ৩০২ধারা মোতাবেক মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার কথা। কিন্তু আসামীর বয়স বিবেচনায় কিশোর বয়সী হওয়ায় তাকে ১০বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।