Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপস্থাপনার দৃষ্টি বদলে দিয়েছে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন

বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের স্বীকৃতি পেলেন ১৫ গণমাধ্যমকর্মী মিডিয়া

বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের স্বীকৃতি পেলেন ১৫ গণমাধ্যমকর্মী

গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপস্থাপনে ব্যক্তির সাফল্য বা ব্যক্তির লড়াইকে সামনে আনা হলেও নাগরিক হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের অধিকার কিংবা মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার অধিকারের বিষয়গুলো অনেকখানি অবহেলিত হয়েছে। করুণা বা মানবিকতার দৃষ্টিকোণের পরিবর্তে সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের ইনক্লুশন ওয়ার্কস প্রকল্প ও প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট ২০২০) বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন আয়োজিত গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে এই প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে অনলাইন অ্যাপ জুমের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ১৫ জন গণমাধ্যম কর্মীকে ইনক্লুশন চ্যাম্পিয়ন স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন সাইট সেভার্সের সহযোগিতায় এডিডি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ডিজ্যাবিলিটি অ্যালায়েন্স, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, আইডিএস ও ইনক্লুশন ইন্টারন্যাশনালকে সাথে নিয়ে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ৫ জেলায় টেলিভিশন, রেডিও, প্রিন্ট এবং অনলাইন গণমাধ্যমের ১৪৮ জনকর্মীকে ২ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৬ টি মিডিয়া হাউজের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে সংবাদ এবং অনুষ্ঠানের জন্য কারিগরি সহযোগিতা করা হয়। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনলাইনে রিফ্রেশার্স ট্রেনিং এবং মেন্টরিংয়ের আয়োজন করা হয়।

প্রশিক্ষণ ও মেন্টরিংগুলোতে গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি, সম্মানজনক ভাষার ব্যবহার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে সম্পাদকীয় নীতিমালা এবং সংবাদ ও অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ফলে গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে সংবাদ ও অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি পায়। গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে শতাধিক সংবাদ ও অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর রিচার্ড লেস বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীরা অবদান রাখছেন। তিনি আশা করেন, প্রকল্পের এ পর্যায়ের সমাপ্তির পরেও তারা তাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। 

সাইটসেভার্স-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও বলেন, সমাজ রুপান্তরে গণমাধ্যম সবসময়ই ভূমিকা রাখছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৬০ ভাগ মানুষই দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করে। তাদেরকে কর্মংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে দারিদ্র দূর হতে পারে। 

এডিডি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতিসংঘ সনদে সাক্ষরকারী দেশ, এটাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আইন প্রণয়ন করেছে, নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। কিন্তু এই কার্যক্রম কতোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সে বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। 

গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাফল্য নিয়ে অনেক সময় খবর আসলেও সামগ্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের খবর বা অনুসন্ধানের সংখ্যা অনেক কম।

গাজী টেলিভিশন ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক ও সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, আমরা সাধারণত গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে নিয়ে সংবাদ করি করুণা কিংবা মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু তাদেরকে সাধারণ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করার বিষয়টি কিংবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যে নিজেরা নিজেদের কথা বলতে পারেন, এই বিষয়টি এই প্রশিক্ষণে উঠে এসেছে।

দৈনিক দেশ রুপান্তরের যুগ্ম সম্পাদক গাজী নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যেভাবে উপস্থাপন করি, সেখানে ব্যক্তির সাফল্য বা ব্যক্তির লড়াইকে সামনে আনা হলেও নাগরিক হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানসহ মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার অধিকারের বিষয়গুলো অনেকখানি অবহেলিত হয়েছে। এই প্রকল্প ও প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিয়ে সংবাদ ও অনুষ্ঠান করার বিষয়ে ধারণা পেয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

জাতীয় এবং জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করছেন এমন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধিতা ইস্যু নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই প্রকল্প ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে তাদের অভিমত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দৈনিক প্রথম আলোর চট্টগ্রাম ব্যুরোর সিনিয়র রিপোর্টার প্রণব বল, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের মনিটরিং কোঅর্ডিনেটর লিটন বারুরী, একাত্তর টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন, এটিএন বাংলার কারেন্ট অ‌্যাফেয়ার্স এডিটর কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, দুরন্ত টিভির সিনিয়র প্রডিউসার মনিরুল হোসেন শিপন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার সেঁজুতি মাসুদ।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের সিনিয়র প্রোডিউসার/ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ দাস সম্মাননা প্রাপ্ত ১৫ জন গণমাধ্যমকর্মীর নাম ঘোষণা করেন। সম্মান জানানো ১৫ জন গণমাধ্যমকর্মী- শেখ আল এহসান (প্রথম আলো), মোস্তফা জামাল পপলু (মাছরাঙ্গা টিভি), মিজানুর রহমান (দীপ্ত টিভি), জীবন আহমেদ (এনটিভি), সাব্বির আহমেদ (যমুনা টিভি), ইকবাল আহমেদ সরকার (দৈনিক মানবজমিন এবং একাত্তর টিভি), অনুপম শীল (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি), দীপঙ্কর কর্মকার (একাত্তর টিভি), বেলায়েত হোসেন (আরটিভি), সুলায়মান নিলয় (বিডিনিউজ২৪ ডটকম), মাকসুদা আজীজ (প্রথম আলো), প্রণব কুমার বল (প্রথম আলো), শাকিল আহমেদ (রেডিও স্বাধীন), নাদিয়া শারমিন (একাত্তর টিভি), প্রণব কুমার দেবনাথ (প্রথম আলো)।

বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার আল মামুনএই আয়োজনে অংশগ্রহণ এবং প্রকল্পকে সফল করার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদেরকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য সাইটসেভার্স, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ডিজ্যাবিলিটি অ্যালায়েন্স, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজও ইনক্লুশন ইন্টারন্যাশনালকে ধন্যবাদ জানান।

প্রকল্পের একটি পর্যায়ের সমাপনী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর এ আয়োজনে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের পক্ষ থেকে আশা করা হয়, প্রকল্প শেষ হয়ে গেলেও গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির এ চর্চা অব্যাহত থাকবে।